৫০ কেজি ওজনের রোগী কামাল হোসেনের (৪৫) পেট থেকে ১২ কেজি ওজনের বিরল টিউমার অপসারণ করলো বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা।
রোববার (৩০ জুন) প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে রেট্রো পেরিটোনিয়াল নামের টিউমারটি অপসারণ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দিয়েছেন শেবাচিমের উপাধ্যক্ষ ও সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জি.এম. নাজিমুল হক। রোগী বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডা. নাজিমুল। অস্ত্রোপচারের দলে আরও ছিলেন, সহকারী অধ্যাপক ডা. প্রদিব কুমার কর্মকার ও ডা. গ্রিন চন্দ্র বিশ্বাস, সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. অনুপ কুমার সরকার ও ডা. মো. হোসাইন শাওন, মেডিকেল অফিসার ডা. বায়েজীদ হোসেনসহ ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
রোগীর ভাইয়ের স্ত্রী মৌরিন বেগম জানান, গত দুই বছর আগে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলার সোহাগদল গ্রামের রেডিও মেকার দুই সন্তানের জনক কামালের পেটে ব্যথা শুরু হয়। তখন অর্থের অভাবে গ্রামের হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। পরবর্তীতে হোমিও চিকিৎসক তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। গত ২২ জুন তিনি শেবাচিম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ১ নম্বর ইউনিটে অধ্যাপক ডা. নাজিমুল হকের তত্ত্বাবধায়নে ভর্তি হন। প্রয়োজনীয় ঔষধ ছাড়া তেমন কোনো খরচ ছাড়াই সফল অপারেশন হয়েছে। রোগী বর্তমানে অন্য অপারেটিভে আছেন বলে জানান তিনি।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫ম তলায় সার্জারি অপারেশন থিয়েটারে বিরল এ টিউমারের সফল অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জি. এম. নাজিমুল হক।
বিজ্ঞাপন
ডা. অনুপ কুমার সরকার বলেন, রোগী কামালের পেট ফুলে ছিল। এছাড়া ব্যথা, খাবারে অনীহা ও দিনে দিনে ওজন কমে যাচ্ছিল। তাই তার পেট সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হই টিউমার রয়েছে। তখন ৪৫ বছর বয়সী এই রোগীর ওজন ছিল মাত্র ৫০ কেজি। রোগীর কাছে অপারেশনটি ছিল খুবই জটিল। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে এ অপারেশনে।
অপারেশনে নেতৃত্ব দেওয়া ডা. জি. এম. নাজিমুল হক বলেন, রোগীর পেটের চারপাশে টিউমারটি ছড়িয়ে ছিল। বিশেষ করে তার পেটের ওপরের অংশ থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত টিউমার বিস্তৃত ছিল। আমরা রোগীর খাদ্য নালি সেইফ করে ১২ কেজি ওজনের বড় আকারের টিউমারটি অপসারণ করেছি। এবং টিউমারটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বায়োপসি টেস্ট করতে পাঠানো হয়েছে। রোগী বর্তমানে সুস্থ আছেন। বায়োপসি রিপোর্ট আসা পর্যন্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, এই ধরণের টিউমার রোগী বেশিদিন বহন করলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগের চিকিৎসা করানো হলে ঝুঁকি কমে যায়। তাই শরীরের কোথাও কোনো চাকা হলে বা পেট ভারি হওয়ার মতো সমস্যা দেখা গেলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক।
প্রতিনিধি/ এজে