কিশোরগঞ্জ আদালতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ তিনজনের নামে পর্ণোগ্রাফি আইনে মামলা করেছেন এক কলেজছাত্রী। গত ১৫ জনু কিশোরগঞ্জ ১নং আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
অভিযুক্ত মামলার আসামিরা হলেন- আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন (৩০), তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। মোল্লা সুমনের ভাগনে কিশোরগঞ্জ শহরের বয়লা তারাপাশা এলাকার মো. তাজুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেন (হিরা) (২৮) ও সুমনের বড় ভাই মোশারফ হোসেন মোল্লা বাবুল (৪৩)। মোল্লা সুমন ও মোল্লা বাবুল একই এলাকার মো. আশরাফ উদ্দিনের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
(মামলার বাদি) ভুক্তভোগি ওই তরুণী কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। মিঠামইন উপজেলার বাসিন্দা।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই তরুণী কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। বাড়ি হাওরে হওয়ায় কলেজের কাছে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। কলেজে যাওয়া-আসার পথে সভাপতির ভাগনে হিরা পথরোধ করে প্রায় সময় প্রেম নিবেদন করতেন। একপর্যায়ে রাজি না হওয়ায় হিরা তার মামা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোল্লা সুমনের ভয় দেখিয়ে কলেজে যাওয়া-আসার পথ বন্ধ করে দেবে বলে হুমকি দেয়। এরপর হিরার সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। যা অভিযুক্ত হিরা তার মোবাইল ফোনের মধ্যে স্থির চিত্র ও ভিডিও ধারণ করে রাখে। এভাবে অনেকদিন অতিবাহিত হলে মামলায় অভিযুক্ত সভাপতি মোল্লা সুমন ও তার বড় ভাই মোল্লা বাবুলকে ফোনে বিষয়টি জানালে তারা তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এই সুযোগে হিরা শারীরিক মেলামেশা অব্যাহত রাখে।
এরপর বিষয়টি মানতে না পেরে ভুক্তভোগী ওই তরুণী আবারও চাপ সৃষ্টি করলে সিরাজ কাজীর মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৮ জুন রেজিস্ট্রি করে কিন্তু কাবিনের কোনো কপি তাকে দেওয়া হয়নি। এরপর তরুণী জানতে পারেন- হিরা এর আগেও বিয়ে করেছেন এবং তার দুটি সন্তান ছিল। প্রায় সময় তার বাসায় বিভিন্ন মেয়ে নিয়ে শারীরিক সর্ম্পকে জড়ায়। মামা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ায় এমন বেপরোয়া হয়ে ওঠে হিরা।
ভুক্তভোগী তরুণী বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে হিরাকে মৌখিকভাবে তালাক দিয়ে দূরে সরে যায়। এতেই ঘটে বিপত্তি। হিরা তার মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে দুইবারে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। আর এ ঘটনায় ভয়ভীতি দেখায় সভাপতি মোল্লা সুমন ও তার ভাই মোল্লা বাবুল।
বিজ্ঞাপন
শুধু তাই নয়, সেই টাকা দিয়ে হিরা তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ক্রয় করেন। পরবর্তীতে নগ্ন ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোল্লা সুমন একটি আইফোন ও স্যামসাং মোবাইল কেনে। মোল্লা বাবুলও একই কৌশলে তিন লাখ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেল ক্রয় করে। তাতেও থেমে যায়নি অভিযুক্তরা। একের পর এক ভয় দেখিয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল হিরা আবারও শারীরিক সম্পর্ক করে ভিডিও ধারণ করে। তাদের ক্ষমতায় শেষ পর্যন্ত আর টিকতে পারেনি ভুক্তভোগী ওই নারী। অভিযুক্তদের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় ধারণকৃত সব ভিডিও, স্থিরচিত্র ও অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। বর্তমানে অসহায় হয়ে সর্বশেষ আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
মামলায় ওই ছাত্রী আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে আমি সমাজে মান ইজ্জত নিয়ে বাঁচা দায় আমি নিরীহ বাবার সন্তান। আমি উক্ত বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ কিশোরগঞ্জ কে অবগত করি কিন্তু থানায় বার বার আমি মামলা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই কারণ আসামিদের প্রভাবের কারণে থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয় না।
মামলার ২নং আসামি কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে তারা স্বামী-স্ত্রী। আর যদি মামলা করে থাকে তাহলে আসামি তো হবে হীরা এবং হীরার বাবা। আমি এবং আমার ভাই হীরার মামলার আসামি হই কিভাবে। আমরা তো সম্পর্কে হীরার মামা। এখানে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে তাই আমাকে এবং আমার বড় ভাইকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। সামনে সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন তাই এই মামলায় আমার ভাইকে জড়ানো হয়েছে।
মামলার ১নং আসামি মো. নাজমুল হোসেন (হিরা) জানান, আমরা বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী। আমি আমার স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার ও আমার স্ত্রীর একটি অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভাইরাল ভিডিও নিয়ে আমি ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল (ঢাকা বিভাগ) এ মামলা করেছি সেই মামলায় আমার স্ত্রী সাক্ষী। আজকে হয়তো কারও প্ররোচনায় পরে সেই ভাইরাল ভিডিও নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। আমি ও আমার মামা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
মামলার বাদির আইনজীবী জেলা আইনজীবী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শামীম জানান, আদালত মামলাটিকে এফআইআর করা নির্দেশ হলেও এখনও মামলাটি আদশ কপি বেড় হয়নি। যেহেতু মামলাটি সদরের তাই সদর থানায় মামলাটি এফআইআরের নির্দেশ দিবেন। এটা কালকে হয়তো কম্পিলিট হবে।
সদর মডেল তলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, আদালতের এমন কোন নির্দেশনা এখনও থানায় এসে পৌঁছায়নি। তবে আসামাত্র আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/ এজে