ভারত থেকে আসা অতিরিক্ত পানিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে বন্যায় তলিয়ে গেছে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির ধান। ভারত থেকে বয়ে আসা পুনর্ভবা নদীর পানি ঢুকে গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের কয়েকটি বিলে কৃষকদের ধান প্লাবিত হয়েছে। আকস্মিক বন্যায় সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা রাধানগর ইউনিয়নের বিলকুজাইন, ভাটখোর, রোকনপুরগঞ্জ মৌজার কৃষকরা।
পুনর্ভবা নদীর উজানে ভারতীয় অংশে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে অতিরিক্ত পানি এসে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। গত চার দিন ধরে পুনর্ভবা নদী দিয়ে বাংলাদেশের অংশের রাধানগরের বিলগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করে। এতে বিলকুজাইন, ভাটখোর, রোকনপুরগঞ্জ মৌজার প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কৃষকরা।
রাধানগর ইউনিয়নের যাতাহারা গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিলে ধান চাষাবাদ করি। তবে এমন হঠাৎ পানি এসে ধান প্লাবিত হওয়ার ঘটনা কখনও দেখেনি। মাত্র চার দিনেই সব শেষ হয়ে গেল। জমিতে থাকা ধান কাটা বা কাটা ধান ঘরে তোলার কোন সুযোগ পায়নি৷ ১২ বিঘা জমিতে ধান চাষাবাদ করেছিলাম বন্যার পানিতে সব শেষ হয়ে গেছে।
ধানচাষী মনিরুল ইসলাম জানান, চার দিন আগে থেকে ভারত থেকে পুনর্ভবা নদীর পানি আমাদের বিলে ঢুকছে। গতকাল থেকে আমার ৩০ বিঘাসহ আশেপাশের সব জমির ধান তলিয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে ধান রোপণ করেছিলাম। কিন্তু এক পুনর্ভবা নদীর পানি সব শেষ করে দিলো। এখন আমরা কী খাবো কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবো, ধারদেনা করে চাষাবাদ করেছিলাম সব স্বপ্ন আমাদের শেষ হয়ে গেছে।

রোকুনপুরগঞ্জের কৃষক সুমন আলী বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন এনজিওতে ঋণ করে ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষাবাদ করেছিলাম। এখন সব পানির নিচে। কি করব, কোথায় যাব, কিছুই বুঝতে পারছি না। শতশত কৃষক আজ আমার মতো দিশেহারা। সোনার মতো ফসল আমার, কিছুই পেলাম না।
বিজ্ঞাপন
ধানকাটা শ্রমিক সেলিম আলী জানান, বিলের বেশিরভাগ ধানই মাঠে ছিল। ধান কাটতে কাটতে গত চার দিন থেকে পানি আসা শুরু করলে কাটা ধানগুলো নৌকায় করে পাড়ে নিয়ে আসার কাজ শুরু করি। কিন্তু এতো কম সময়ের মধ্যে এতোগুলো জমির ধান উপরে তোলা সম্ভব নয়। চোখের সামনে সবকিছু তছনছ হয়ে গেল। কৃষকদের সব স্বপ্ন এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
রাধানগর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফুয়াদ আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, এবার রাধানগর ইউনিয়নের তিনটি মৌজায় প্রায়ই ১৬৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছিল। বর্তমানে ভারত থেকে আসা পানিতে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মুঠোফোনে ঢাকা মেইলকে বলেন, গত ৫০ বছরে এমন বন্যা দেখিনি। পুনর্ভবা নদীর ভারতীয় অংশে অতিবৃষ্টির ফলে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে কৃষকের ধান। আমার ধারনা, চাষাবাদ হওয়া মোট জমির ৫৫-৬০ শতাংশ জমির ধান তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এবিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর শুনেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তবে এখনই ক্ষতির পরিমাণ বলা সম্ভব নয়। আরও তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, বিলের বেশিরভাগ অংশেই ধানের উপরে এখন কয়েক ফিট পানি। দীর্ঘদিন এই পানি থাকলে আর ধান পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। এই পানি না নামলে ধান কাটা সম্ভব নয়। এর আগে ২০১৭ সালে এসময়ে ভারত থেকে পানি এসে ওই এলাকার কৃষকদের ধান ডুবে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বোরো মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
প্রতিনিধি/এইচই

