সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

সিলেটে সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২৪, ০৬:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি

উজানের ঢল আর কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মহানগর ও সব উপজেলা বন্যার পানিতে ডুবেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরের অবস্থা খুবই খারাপ। এসব উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রধান সড়কগুলোও পানিতে তলিয়ে গেছে। শুধু উপজেলা নয়, নগরীর অবস্থাও নাজুক। অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি। জেলাজুড়ে সাড়ে আট লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন মানুষ।

sylhetবুধবার (১৯ জুন) দুপুর পর্যন্ত জেলায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিলেটে আগামী তিন দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলা সবকটি উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

সিলেটে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত, চার উপজেলায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা, কুশিয়ারা, গোয়াইন, সারি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বুধবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে সুরমার সিলেট পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৯ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার, গোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কুশিয়ারার শেওলা পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

sylhet-2নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত ২২ নম্বর ওয়ার্ডের উপশহরের সবকটি ব্লকে সড়ক ডুবে গেছে, বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।


বিজ্ঞাপন


এছাড়া নগরীর ১০, ১৪, ১৫, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৮, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরের তালতলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন

সিলেটে ময়লা পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বিশুদ্ধ পানির সংকট

বরইকান্দিতে অবস্থিত বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ঢোকার উপক্রম হলে সিটি করপোরেশনের অনুরোধে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। নদীর তীরে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ সৃষ্টি করে উপকেন্দ্রটির সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, সিলেট নগরে বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় সিটি করপোরেশনের স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে। সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

sylhet-1_সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ১০৭.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, বুধবার সকাল পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নের এক হাজার ৫৪৮ গ্রাম, একটি পৌরসভা, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি এরই মধ্যে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা

রাসেল হাসান আরও জানান, বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগ ও ইউনিয়নগুলোতে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, জেলার নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর