শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

চট্টগ্রামে তেলের মতো গুদামজাত হচ্ছে পেঁয়াজও

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২২, ১২:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

চট্টগ্রামে তেলের মতো গুদামজাত হচ্ছে পেঁয়াজও

দাম বাড়ানোর পরও চট্টগ্রামের দোকানগুলোতে অপ্রতুল ভোজ্যতেল। তবে একের পর এক ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে গুদামে মিলছে হাজার হাজার লিটার সয়াবিন ও পাম তেল। যা ঈদুল ফিতরের আগে কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রির আশায় মজুদ করেছিল ব্যবসায়ীরা।

একইভাবে হাজার হাজার কেজি পেঁয়াজও ইতোমধ্যে গুদামজাত করা হয়েছে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে। গুদামজাতকরণ চলছে খুচরা দোকানেও। এক সঙ্গে অধিক পরিমাণে পেঁয়াজ কেনা শুরু করেছে ভোক্তারাও।


বিজ্ঞাপন


একে অন্যের প্রতি এমন অভিযোগ করছেন পাইকারি, খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা। ফলে প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন (ক্যাব) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন আক্তার পারু বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে যেসব পেঁয়াজ বিক্রয় হচ্ছে, তা আগের আমদানি করা। এসব পেয়াঁজের দাম বাড়ার কথা নয়। অথচ আমানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের অজুহাতে প্রতিদিন দাম বাড়াচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে নজর দিতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার (১৮ মে) সকালে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৩-৪৪ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০-৫২ টাকায়। অথচ ৮ মে পর্যন্ত এসব পেঁয়াজ প্রতিকেজি পাইকারি বিক্রি হয়েছে ২২-২৫ টাকায়। খুচরায় বিক্রয় হয়েছে ২৬-২৮ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, ৫ মে থেকে দেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। অথচ খাতুনগঞ্জের প্রতিটি পাইকারি ব্যবসায়ীর গুদামে প্রচুর পরিমানে পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে বলে দাবি খুচরা ব্যবসায়ীদের।

চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট হাটহাজারী স্টোরের মালিক আবদুল মান্নান বলেন, ‘খাতুনগঞ্জে গুদামে-গুদামে প্রচুর পেঁয়াজ মজুদ করা হয়েছে। এরপরও সংকট দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা বাজারেও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। বর্তমানে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০-৫২ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।’


বিজ্ঞাপন


তিনি জানান, বর্তমানে বার্মার পেয়াজ আমদানিও বন্ধ। তবে বাজারে প্রচুর দেশি পেঁয়াজ রয়েছে। ফলে বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি থাকার কথা নয়। তবুও ভারতীয় পেঁয়াজের সঙ্গে দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ এখন ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। অথচ ৮ মের আগে দেশি পেঁয়াজ বিক্রয় হয়েছে ৩২-৩৩ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী জানান, দেশের কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনায় সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের পর থেকেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকট। স্বাভাবিক সময়ে খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ৪০-৫০টির বেশি পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ঢুকলেও এখন আসছে মাত্র ১০-১২টি।

ফলে প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে খাতুনগঞ্জে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০-২২ টাকা। শিগগিরই আমাদানি শুরু না হলে দাম আরও বাড়ার কথা বলছেন সংশ্নিষ্টরা। এখন সবার প্রশ্ন-পেঁয়াজের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে?

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, কয়েক মাস ধরেই পেঁয়াজের বাজার স্থির ছিল। ঈদের আগেও মানুষ ২৫-২৮ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পেরেছেন। কিন্তু গত ৫ মের পর থেকে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনুমতি মিললে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, না হয় সংকট আরও ঘনীভূত হবে।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমদানিতে সংকট সৃষ্টি হলেও খাতুনগঞ্জে এখনো প্রচুর পেঁয়াজ মজুদ আছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরাও দোকানের গুদামে পেঁয়াজ মজুদ করছে। ভোজ্য তেলের মতো বাজারে পেঁয়াজ সংকট সৃষ্টি করছে। এতে পাইকারি মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে।

বাড়তি পেঁয়াজ কেনার হিড়িক

এদিকে পেঁয়াজ সংকট ও দাম বাড়ার কথা শুনে বাড়তি পেঁয়াজ কিনতে শুরু করেছেন ভোক্তারাও। বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মহানগরের চকবাজারের শাহ আমানত এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক শওকত আলী। তিনি বলেন, যে ভোক্তা আগে সপ্তাহে এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছে, তাদের অনেকে এখন ১০-১২ কেজি করে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগরের কাজির দেউড়ি বাজারে আসা চাকরিজীবী কানিজ ফাতেমা বলেন, ৭-৮ দিন আগেও একসঙ্গে তিন কেজি পেঁয়াজ কিনেছি ৯০-১০০ টাকায়। এখন এক কেজি পেঁয়াজের দাম চাচ্ছে ৫২ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন দাম নাকি আরও বাড়বে। তাই একসঙ্গে ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। এভাবে অনেকেই বাড়তি পেঁয়াজ কিনছেন বলে জানান তিনি।

নীরব প্রশাসন

পেঁয়াজের দাম বাড়লেও তা তদারকিতে অনেকটাই নীরব প্রশাসন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এসব বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকলেও এখনও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তবে তেলের মজুদ সন্ধানে অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান জানান, তেলের পাশাপাশি পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ার বেশকিছু তথ্য পেয়েছি আমরা। শিগগির পেঁয়াজের বাজারে অভিযান চালানো হবে।

আইকে/টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর