ঈদের ছুটির প্রথম দিনে কর্মব্যস্ত নগরী ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফেরা মানুষের উপচে পড়া ঢল নেমেছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা এলাকায়। শুক্রবার (১৪ জুন) ভোর রাত থেকে সেতু পারাপারের অপেক্ষায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দেখা গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল ১০টার দিকে সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা থেকে শ্রীনগর উপজেলার বেজগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। এ সময় যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। পরে থেমে থেমে যানবাহনের এ দীর্ঘ সারি অব্যাহত থাকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৪ ঘন্টায় সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে যানবাহন পারাপার হয়েছে ২৫ হাজার ৯০০টি। এতে টোল আদায় হয়েছে তিন কোটি ৪০ লাখ টাকা।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: চারিদিকে শুধুই পানি, নেই শুধু সুপেয় পানি
ঢাকা মেইল-কে বিষয়টি নিশ্চিত করে সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল ম্যানেজার আহমদ আলী জানান, ঈদের আগে শেষ কর্ম দিবস শেষে বৃহস্পতিবার একযোগে গার্মেন্টসসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিল্প ও প্রতিষ্ঠানের ছুটি শুরু হওয়ায়, স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত চার গুণ বেশি যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ছিল মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা এলাকায়। তবে সাতটি টোল বুথে প্রতি তিন সেকেন্ডে এক একটি যানবাহনের টোল আদায় করা হয়েছে, এতে পর্যায়ক্রমে নির্বিঘ্নে টোল দিয়ে সেতু অতিক্রম করতে পেরেছে সব ধরনের যানবাহন।
পদ্মা সেতুর (টোল ব্যবস্থাপনা দায়িত্বে থাকা) সহকারী প্রকৌশলী রাজন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে শুরু থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে সেতু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। একইসাথে সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে যানবাহনের গতি। ফলে সেতুতে বড় কোনো দুর্ঘটনার শঙ্কা নেই এবারের ঈদযাত্রায়। তবে হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর রাখা হচ্ছে বিশেষ নজরদারি।
অন্যদিকে বাড়ি ফেরা মানুষের অভিযোগ, মহাসড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় ঈদযাত্রায় ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের। এছাড়াও পরিবহন সংকটের অজুহাতে গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন অনেকে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে মাওয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী থেকে নানা উপায়ে ভেঙে ভেঙে নারী ও শিশু-সহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে যারা মাওয়া পর্যন্ত এসেছেন, তীব্র গরমে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে পরিবহন সংকটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের। এছাড়া কাঙ্ক্ষিত পরিবহনের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে পদ্মা সেতুর উত্তর থানা গোল চত্বর এলাকায়। এ সময় বিভিন্ন পরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তবে অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব: লণ্ডভণ্ড শাহিনুদের বসতঘর
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ জিয়াউল ইসলাম জানান, রাতে পদ্মা সেতু সংলগ্ন ওয়েটস্কেলে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রাখায় শুক্রবার ভোরে মহাসড়কে যানবাহনে জটলা দেখা দেয়। এতে প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল যানবাহনের ধীর গতি।
তিনি আরও জানান, পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা বুথ-সহ সাতটি বুথে নিরবচ্ছিন্ন টোল আদায় করা হচ্ছে। রাতের অপেক্ষমাণ পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান পর্যায়ক্রমে পারাপার হয়েছে সেতুতে। তবে যানবাহনের বাড়তি চাপের কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
প্রতিনিধি/ এমইউ

