শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ঢাকা

বড় প্রকল্প নিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না পদ্মার ভাঙ্গন

শুভ ঘোষ, মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৪, ০৬:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

বড় প্রকল্প নিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না পদ্মার ভাঙ্গন

খরস্রোতা পদ্মার সঙ্গে যুগের পর যুগ সংগ্রাম করে চলছে টিকে থাকার লড়াই। চলতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মার ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে অর্ধশত পরিবারের, শেষ সম্বল টুকু বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন অনেকেই। ফলে শূন্য হাতে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরে চলছে শুধুই সহযোগিতার প্রার্থনা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন বলছে ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নেওয়া হবে পূর্ণবাসনের উদ্যোগ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলমান প্রকল্পের কাজের তিন বছরে অগ্রগতি মাত্র ৩৩ শতাংশ। তবে চলতি বছরের বাকি পৌনে ৬ মাসে প্রকল্পের নির্ধারিত বেঁধে দেওয়ার সময় সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের অবিশিষ্ট ৬৭ শতাংশ কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


munsi_3

তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য বলছে, এক দশক আগের প্রবাহমান পদ্মার স্রোতের যে গতিধারা ছিল বর্তমানে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিগত তিন থেকে চার বছর যাবত। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে। নিয়মিত নদীর খনন কার্যক্রম চলমান না থাকায়,পদ্মার বুকে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে একাধিক বালু চর। যার প্রভাব বাধাগ্রস্ত করছে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহতে। যার ফলে পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর তীরবর্তী গ্রামের কাছাকাছি সৃষ্টি হচ্ছে ঘূর্ণায়মান স্রোতের। এতে বড় ধরনের ভাঙ্গনের শঙ্কা রয়েছে খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ফলে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে নেওয়া হচ্ছে জোরালো প্রস্তুতি।

munsi_4

মঙ্গলবার (১১ জুন) সরোজমিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পদ্মা ভাঙ্গন কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- ভিটে মাটি হারানো মানুষের আর্তনাদ আর দুর্বিষহ মানবেতর জীবন যাপনের চিত্র, এর মধ্যে প্রমত্তা পদ্মার তীরে অর্ধশত বছর আগে বাসুদেবের সঙ্গে ঘর বেঁধে ছিলেন পার্বতী রাজবংশী দম্পতি। স্বামী ও ৪ সন্তান নিয়ে তিলে তিলে গড়ে ছিলেন সাজানো স্বপ্নের সংসার। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই পদ্মার ভাঙ্গনে চোখের সামনে নিমিষেই হারিয়েছেন সবকিছু। শেষ সম্বল টুকু বাঁচাতে ছিল প্রাণপণ আকুতি। সব হারিয়ে হতভম্ব নির্বাক চোখে তাকিয়ে এখন শুধুই খুঁজে ফিরছেন সদ্য অতীত হাওয়া ঝলমলে সেই সংসারের স্মৃতি।


বিজ্ঞাপন


munsi_5

অন্যদিকে স্বামীর রেখে যাওয়ার, স্মৃতি চিহ্ন, শেষ আশ্রয়টুকু বাঁচাতে, নিষ্ঠুর পদ্মার তাণ্ডবে, দু’হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা ষাট ঊর্ধ্ব রাজিয়া বেগমের। পারিবারিক আর্থিক টানাপোড়ন দুঃসময়ে মরার উপর খাড়ার ঘা'যেন তাদের জীবনে। নতুন করে পদ্মার ভাঙ্গনে এবার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার, লৌহজং-তেউটিয়া, কুমারভোগ, গাঁওদিয়া, কলমা সহ আরও বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। তবে গত এক সপ্তাহের ভাঙ্গনে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,নদী তীরবর্তী গ্রাম শিমুলিয়া, খড়িয়া, দক্ষিণ হলদিয়া, সিংহেরহাটি, তেউটিয়া, রাউৎগাঁও, বাগেরবাড়ি, সুন্দিসার, ডহরী আরও বেশ কয়েকটি গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ ভাঙ্গন ঠেকাতে ফেলে রাখা জিও ব্যাগ ও তীব্র ঢেউয়ে তলিয়ে গেছে এতে বড় আকারের ফাটল ধরে মাটি ভেঙে পড়ছে নদীতে এতে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পদ্মা নদীর তীরের মানুষ। ভাঙ্গনের কবলে এরই মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত অর্ধশতাধিক বসত ঘর, গাছপালা ও কৃষিজমি, এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে স্কুল,মসজিদ, মাদরাসাসহ নানা স্থাপনা। ফলে ভাঙ্গন আতঙ্কে নিজ উদ্যোগে ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ,প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলমান পদ্মা সেতুর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজের ধীর গতির কারণে ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা।

munsi_6

অন্যদিকে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই প্রকল্পের কাজে ধীরগতির কারণে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গনের ঝুঁকি বেড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে। এতে দীর্ঘদিনের সাজানো সংসার চোখের সামনে মুহূর্তেই নদীতে বিলীন হতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকে।

স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে ভাঙ্গন আতঙ্কে নিজেদের উদ্যোগে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন অন্তত ৩১টি পরিবার।

আশ্রয়হীন এসব মানুষের দাবি দ্রুত সরকারিভাবে পূর্ণবাসন করার। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের অভিযোগ পদ্মায় অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধ বাল্কহেড চলাচলের কারণে গত বেশকয়েক বছরের তুলনায় ভাঙ্গনের ঝুঁকি বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। এছাড়া নদীতে নিয়মিত সরকারি উদ্যোগে খনন কার্যক্রম অব্যাহত না থাকায় নদীর মোড় পরিবর্তন করছে পদ্মা। এতে বৃষ্টি পাচ্ছে ভাঙ্গনের ভয়াবহতা।

munsi_7

তবে ভাঙ্গন ঠেকাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড টানা দুইদিনে ভাঙ্গন ঠেকাতে ফেলা হয়েছে কয়েক হাজারেরও বেশি জিও ব্যাগ তবে নদীতে গভীরতা বেশি থাকায় ব্যাহত হচ্ছে এর কার্যক্রম। 

সরেজমিনে ঘুরে আরো দেখা যায়, মঙ্গলবার সকালে মাত্র চার ঘণ্টার ব্যবধানে প্রায় এক থেকে দেড়শ মিটার এলাকা নদীতে ভেঙে যাওয়ায় নদীতীরের বাসিন্দাদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। ফলে তড়িঘড়ি করে অনেকে ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছে নিরাপদ স্থানে।

munsi_8

ভাঙ্গন কবলিত ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়,গত ২৭ মে রবিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড়নওপাড়া এলাকায় হঠাৎ পদ্মায় ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, চার ঘণ্টার ব্যবধানে ভিটামাটি নিয়ে একটি পাকা ভবন ও তিনটি বসতঘর মুহূর্তেই তলিয়ে যায় নদীগর্ভে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি, নদীর ঢেউ ও প্রচণ্ড স্রোতে ভাঙনের ভয়াবহতা দেখে নদীপাড়ের বাসিন্দারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা এতে রাত নামলেই আতঙ্ক বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

আকস্মিক এই ভাঙনে সব থেকে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্তরা আরও জানান, একদিকে বৈরী আবহাওয়া আর অন্যদিকে তাৎক্ষণিক শ্রমিক না পাওয়ায় ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বেগ পেতে হয় তাদের।

ভাঙ্গন কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত চাঁদনী রাজবংশী বলেন, ২৫টি বছর ধরে সাজানো সংসার গুছিয়েছি মুহূর্তেই চোখের সামনে নদীতে বিলিন হয়ে গেল সব কিছু কিছুই বের করে রাখতে পারলাম না, স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে এখন কোথায় যাবো, কে আশ্রয় দিবে আমাদের,সরকার যদি আমাদের পূর্ণবাসন করে, আর্থিক সহযোগিতা দেয় এই মুহূর্তে হয়তো বাঁচতে পারব। তা না হলে না খেতে পেয়ে মরা ছাড়া আর কোন উপায় নেই আমাদের।

munsi_9

পূর্ণিমা হালদার নামে এর আরেক গৃহবধূ বলেন, বিয়ের পর থেকে পদ্মা পারে শ্বশুরবাড়িতে নতুন সংসার গুছিয়েছি,মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে মাথা গোজার থাইটুকু হারালাম, এখন বাঁচবো কিভাবে,পদ্মার ভাঙ্গন সব কেড়ে নিয়েছে আমাদের, দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, যদি বর্ষা মৌসুমের আগেই দ্রুতগতিতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগগুলো সময় মত ফেলতো তাহলে এভাবে নদী ভাঙনের শিকার হতে হতো না আমাদের বেশ কয়েকটি পরিবারের।

তপন হালদার নামের ভাঙ্গন কবলিত আরেক ক্ষতিগ্রস্ত বলেন,২৪ লাখ টাকা খরচ করে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকার জন্য নতুন বিল্ডিংটি উঠিয়েছি মাত্র। ভাগ্য আমাদের সহায় হয়নি,পদ্মার ভাঙ্গন পথে বসিয়ে দিল আমাদের,দিনের পর দিন বলেছি বারবার মানুষের দ্বারস্থ হয়েছি,স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদের বলেছি পদ্মায় বালুকাটা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেন কেউ কথা শুনেনি,অবশেষে করুন পরিণতি বয়ে এলো জীবনে।

munsi_10

ভাঙনের শিকার পিন্টু মোল্লা বলেন,নদী শাসনের সময়ে এভাবে ঘর বিলীন হবে ভাবতে পারিনি। আমার তিনটি ঘরের মধ্যে একটি বিলীন হয়েছে। একটি সরিয়ে নিয়েছি, অন্যটিও সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি জানান,বর্তমান জায়গায় প্রায় একশো বছরের বসতি তাদের। ৩৫ বছর আগে বাড়ির এক একর জমি পদ্মার পেটে গেছে। বাকি ছিল ৩৬ শতাংশ। তা-ও চলে গেল।

পদ্মায় বিলীন হওয়া তিন কক্ষের পাকা ভবন ও একটি টিন-কাঠের ঘরের মালিক বাসুদেব ও পার্বতী রাজবংশী পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, বাড়ির সাথে নদী থাকলেও জিও ব্যাগ ফেলা ছিল। শুকনো মৌসুমে ব্লক ফেলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে তাই নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু এমনভাবে মুহূর্তেই আমার কষ্টের টাকায় বানানো বাড়িটি নদীতে চলে যাবে ভাবিনি। 

munsi_11

একই এলাকায় ভাঙনের মুখে থাকা দুইতলা পাকা ভবনের মালিক জিতেন রাজবংশী আতঙ্কে এরই মধ্যে আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়ে পরিবারের সদস্য সহ অন্যত্র চলে গেছেন। ভবনটি যেকোনো মুহুর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে সরজমিনে আরও দেখা যায়, আতঙ্কগ্রস্ত বাসিন্দারা বাকি ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। ঘর সরিয়ে নিতে মিস্ত্রিদের হাতুড়ি পেটা ও কুড়াল দিয়ে গাছ কাটার শব্দের ব্যস্ততা দেখা গেছে। বাসিন্দাদের চোখেমুখে হতাশা ও আতঙ্কের ছাপ। এলাকাটিতে ভাঙন ঠেকাতে এই অংশে রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে তিন বছর ধরে। প্রকল্পভুক্ত এলাকায় এমন ভাঙ্গনে ক্ষুব্দ এলাকাবাসী। অবৈধ বালু উত্তোলন এবং জনপদ ঘেষে বড় বড় নৌযান চলাচলকেও দায়ী করছেন তারা।

munsi_1

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে পদ্মায় জেগে ওঠা চরের প্রভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুন্সিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর ভাটিতে বাম তীর রক্ষায় প্রায় ৪৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে প্রায় তিন বছর ধরে। তিনি আরও জানান, কয়েক দিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, উজানের ঢলের পানি পদ্মা হয়ে সাগরের দিকে যাওয়ায় নদীতে এখন প্রচণ্ড রকমের স্রোত বইছে। মূল পদ্মায় চরজেগেছে। সেজন্য জলযানগুলোর নদীর এ অংশের তীর ঘেঁষে যাতায়াত করছিল। স্রোতে হঠাৎ করেই নদীর তলদেশ থেকে মাটি ও জিওব্যাগ সরে গিয়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

এ অংশ পদ্মার বামতীর প্রকল্পের মধ্যে পড়েছে।ইতিমধ্যে এ অংশের ৩৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।শীঘ্রই ভাঙন কবলিত এ অংশে জিও ব্যাগের মধ্যে বালু-সিমেন্ট মিশ্রিত করে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করা হবে।

munsi_12

এদিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকায় রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। এরপরও কেন থামছে না ভাঙন- এই প্রশ্ন স্থানীয়দের। এর আগেও কয়েকবার উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙন দেখা দেয়। সর্বশেষ গত বছর ২০২৩ সালের মে মাসে ইউনিয়নটির তিন নম্বর ওয়ার্ডের বড়নওপাড়া ভাঙনের মুখে পড়ে। এতে অর্ধশত বাড়ির ভিটেমাটি ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়। সে সময় পদ্মার বামতীর প্রকল্পের মধ্যে এ অংশ সহ নতুন ৪.৬২ কিলোমিটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

munsi_10

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রের তথ্য অনুযায়ী,৪৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর বামতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায়, ২০২১ সালের মে মাসে শুরু হয় প্রায় ১৪ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ীবাঁধ নির্মাণের কাজ,যা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। এর মধ্যে ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলাকায় নির্মাণ হবে স্থায়ীবাঁধ। আর ৪ দশমিক ৬২ কিলোমিটার এলাকায় নেয়া হবে ভাঙ্গন প্রতিরোধক অস্থায়ী ব্যবস্থা।

ভাঙ্গন কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার,স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন,ভাঙতে ভাঙতে এ ইউনিয়নটি প্রতিবছর ছোট হচ্ছে। ভাঙনরোধে সরকার কোটি কোটি টাকার যে প্রকল্প নিয়েছে,এখানে বড়নওপাড়াও রয়েছে। ঠিকঠাক মতই ভাঙন প্রতিরোধের কাজ হলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। মাঝখানে এক মাসের মতো এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। যদি বন্ধ না থাকতো, তাহলে ভাঙন নাও হতে পারতো। 

munsi_7

অন্যদিকে অবৈধ বালু উত্তোলন সহ তীর ঘেঁষে অবৈধ বাল্কহেড চলাচল বন্ধে শীঘ্রই স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ভাঙনের খবর শুনে চারবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি, সেখানকার ভাঙন নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ভাঙন নিয়ন্ত্রণের জন্য চেস্টা চলছে। ভাঙন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত জিও ব্যাগ ফেলা হবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থদের শীঘ্রই সরকারি সহযোগিতায় পুর্নবাসনে উদ্যোগদ নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর