নড়াইলের ষাঁড়টির নাম ‘ব্লাক ডায়মন্ড’ দেখতে কুচকুচে কালো। ষাঁড়টির ওজন প্রায় ২৩ মণ। শান্ত স্বভাবের ক্রস ফ্রিজিয়ান শাহিওয়াল জাতের ষাঁড়টি ছাড়া পেলেই রীতিমতো তাণ্ডব চালায়। নড়াইল সদরের তারাপুরের প্রকৃতির মাঝে গড়ে উঠা চিত্রা অ্যাগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা মেলে ক্রস জাতের ‘ব্লাক ডায়মন্ড’ ষাঁড়টির। যাকে বের করতে ও সামলাতে ১৫ থেকে ২০ জন লোকের দরকার পড়ে।
আরও পড়ুন
জানা যায়, খামারটির খোলামেলা পরিবেশ ও প্রাকৃতিক খাবারে তিন বছর বয়স্ক বিশালাকৃতির ‘ব্লাক ডায়মন্ডের’ দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ও উচ্চতায় ৬ ফুট। মালিকপক্ষ দাম হাঁকাচ্ছে ৮ লাখ টাকা। দাবি করা হচ্ছে, পুরো জেলায় ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ডের’ চেয়ে বড় গরু আর একটিও নেই। এটিকে এবার কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন চিত্রা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক মিল্টন শিকদার।
![]()
এদিকে নিয়মিত পরিচর্যায় দুই বেলায় গোসল করানো হয় ষাঁড়টিকে। নিয়ম করে তিন বেলা খাবারে দেওয়া হয় খামারির নিজস্ব জমির কাঁচা ঘাস, ভুট্টা, চিটাগুড়, খৈল, লবণ, গম ভাঙা। ‘ব্লাক ডায়মন্ডের’ সঙ্গে একই খামারে ৭৫টি গরু লালন পালন করা হচ্ছে। চলতি বছরে কোরবানি ঈদের জন্য ৫৫টি দেশি ষাঁড় প্রস্তুত করা হয়েছে খামারটিতে।
খামারের পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা আব্দুর রহমান বলেন, খামারে অনেক গরুর মধ্যে ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ডই’ সবচেয়ে বড়। এটি খুব শান্ত হলেও মাঝেমধ্যে অশান্ত হয়ে যায়। ষাঁড়টি বের করতে গেলে ১৫ থেকে ২০ জন লোক লাগে। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ টাকার খাবার খায় গরুটি। একে নিয়ম করে প্রতিদিন অন্তত দু’বার গোসল করানো হয়। আমরা পরিবারের সদস্য মনে করেই তাকে লালন পালন করছি।
![]()
চিত্রা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক মিল্টন এইচ শিকদার বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় পড়াশোনা শেষ করে ১৭ বছর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চ বেতনে চাকরি করেছি। লোভনীয় অফারকে প্রত্যাখ্যান করে নিরাপদ খাদ্য জনগণের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে স্মার্ট কৃষিতে নিজেকে নিয়োজিত করেছি।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যশোরের সাতমাইল হাট থেকে ষাঁড়টি কিনে আনি। তখন এর ওজন ছিল ৪০০ কেজির মতো। আমরা একে প্রাকৃতিকভাবে লালন-পালন করেছি, পরিমিত খাবার দিয়েছি। বেশি খাবার দিলে এর ওজন ৬ থেকে ৭ মণ বেশি হতো। ওজন অতিরিক্ত হলে ঝিমায় যেত, কিন্তু ষাঁড়টি খুবই প্রাণবন্ত। ষাঁড়টিকে আমরা হাটে তুলব না, খামার থেকেই বিক্রি করব। ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চাইছি।
![]()
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সাড়ে ছয় লাখ টাকা দাম উঠেছে। খামারে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা মোট ৫৫টি ষাঁড়ের অর্ধেকই বিক্রি হয়ে গেছে। বাকিগুলো এই সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি হবে বলে আশা করছেন খামারি।
নড়াইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, উপজেলার তারাপুরে চিত্রা অ্যাগ্রো খামারটিতে অনেক বড় একটি গরু আছে। শুরু থেকে খামারটির বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে খামারিকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হয়। মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় জেলায় বড় গরু পালনে কম আগ্রহী। জেলায় ১০টি গরুর হাটে ভেটেনারি টিমের উপস্থিতিতে সুস্থ গরু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ভোক্তার কাছে তুলে দিতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি সীমান্ত দিয়ে গরু না ঢোকায় খামারিরা ভালো দাম পাবেন।
![]()
উল্লেখ্য, জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, জেলায় খামারি রয়েছেন ৪ হাজার ৪৭৮ জন। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গবাদি পশু মোটা তাজা করেছেন মোট ৫৩ হাজার ৬৩৯টি। তার মধ্যে ষাঁড় ১৫ হাজার ৩৪৮টি, বলদ ২ হাজার ২৮৮৬, গাভী ৪ হাজার ৭১৫, ছাগল ৩১ হাজার ২৫৫ ও ভেড়া ৩৫টি। জেলায় কোরবানি যোগ্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৩৮ হাজার ৬৭৬টি। পশু চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত থাকছে ১৪ হাজার ৯৬৩টি। যা পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও রফতানি হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

