শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে ঝুলছে দুই মামলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২২, ০৭:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে ঝুলছে দুই মামলা

ভারতে গ্রেফতার হওয়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার প্রতারণার মাধ্যমে পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু কক্সবাজারের শেয়ার কিনে টাকা আত্মসাত করেছেন। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে ঝুলছে দুই মামলা। 

এক হাজার সাত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা পৃথক দুটি মামলায় পি কে হালদার ছাড়াও তার চার সহযোগীকে আসামি করা হয়েছে। এর একটি মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে আগামী ২৯ মে। ওই দিন আসামিদের পক্ষ থেকে আদালতে জবাব দেওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (১৭ মে) দুপুরে এ তথ্য জানান মামলা দুটির বাদিপক্ষের আইনজীবি রুবেল পাল। তিনি জানান ৯৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে ২০২১ সালের ৯ মে চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ খাইরুল আমীনের আদালতে প্রথম মামলাটি করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ক্লইস্টন গ্রুপের মালিক আব্দুল আলিম চৌধুরীর পক্ষে তার কর্মচারী সোয়াইব উর রশীদ।

মামলায় পি কে হালদারসহ আসামি করা হয় পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, ঢাকার বনানী এলাকার মো. জাহাঙ্গীর আলম, উত্তরার সিদ্দিকুর রহমান, ও পিরোজপুরের বাসিন্দা রতন কুমার বিশ্বাসকে।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল আলীম ২০১৪ সালে কক্সবাজারের রেডিসন ব্লু হোটেলের ৬৪ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেন পি কে হালদারের কাছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পি কে হালদার শেয়ারের ৭৭ কোটি টাকা দেননি। তাই মামলাটি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের দিন পর্যন্ত আট বছরে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ সুদসহ দাঁড়িয়েছে ৯৩০ কোটি টাকা। মামলায় আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করেছেন। 

রুবেল পাল জানান, এর আগে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল এই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে কক্সবাজারের রেডিসন ব্লু ৭৭ কোটি টাকার শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের আদালতে আরেকটি মামলা করা হয়। একই ব্যক্তি বাদী হয়ে মহানগর দায়রা জজ সরওয়ার জাহানের আদালতে মামলাটি করেন। মামলায় দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৫০৬/১০৯ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দেন।


বিজ্ঞাপন


মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, আব্দুল আলিম চৌধুরীর মালিকানাধীন ক্লইস্টন ফুডস অ্যান্ড একোমোডেশন লিমিটেডের অধীনে ২০১০ সালে কক্সবাজারে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের আশ্বাসে নিজের মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এই প্রকল্পে তিনি বিনিয়োগ করেন।

এর আগে ২০০৭ সালের দিকে পি কে হালদারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর পি কে হালদার রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেডের এমডি হন। তখন রিলায়েন্স ফিন্যান্স থেকে আব্দুল আলিম চৌধুরীর মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠানে কিছু ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়।

পাঁচ তারকা হোটেল প্রকল্পে যখন আব্দুল আলিম চৌধুরী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ পরিশোধে চাপ দিতে থাকে, তখন পি কে হালদারও রিলায়েন্স ফিন্যান্সের দেওয়া ঋণ পরিশোধে চাপ দিতে শুরু করেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ৯৮ শতাংশের মালিক পি কে হালদার। একপর্যায়ে পি কে হালদার ওই পাঁচ তারকা হোটেলটির শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেন। ওই কোম্পানির মোট ৯ লাখ ৫০ হাজার শেয়ারের মধ্যে আব্দুল আলিম চৌধুরীর নামে ছিল ছয় লাখ আট হাজার, যা মোট শেয়ারের ৬৪ শতাংশ।

দুই মামলার বাদী সোয়াইব উর রশীদ বলেন, ২০১৪ সালের ৪ জুন পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের কাছে পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৫০০ শেয়ার হস্তান্তরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন আব্দুল আলিম চৌধুরী। যা প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ৩৫, পি কে হালদার নিজের নামে ৯, জাহাঙ্গীর আলম ও সিদ্দিকুর রহমান প্রত্যেকে পাঁচ শতাংশ করে এবং রতন কুমার সরকারের নামে এক শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করা হয়। শেয়ার বিক্রির টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা থাকলেও কোনো টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

হোটেল প্রকল্পের ৫৫ শতাংশের শেয়ার সাড়ে ৭৭ কোটি টাকা মূল্য ধরে হস্তান্তরের চুক্তি হয়েছিল। আর রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেডে আব্দুল আলিম, তার ভাই ও স্ত্রীর নামে ৭৪ কোটি টাকা আগে থেকে ঋণ ছিল। রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেডে আব্দুল আলিম চৌধুরী, তার ভাই ও স্ত্রীর নামে থাকা ঋণ সমন্বয় করে বাকি টাকা শেয়ার বাবদ পরিশোধ করবেন বলে জানিয়েছিলেন পি কে হালদার। সেটিও করেননি। 

সোয়াইব উর রশীদ আরও বলেন, মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। সিআইডি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে এখনও জমা দেয়নি। মামলায় আগামী ১৩ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। অপরটি সিভিল মামলা। সেই মামলায় বিবাদীদের নোটিশ করা হয়েছে। আগামী ২৯ মে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির এসআই মোজাহেদুল হাসান বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে কিছু তথ্যের জন্য বিভিন্ন সংস্থার কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য পাওয়া গেলে মামলাটি তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।

উল্লেখ্য, পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেন। দুদক পি কে হালদারের প্রায় এক হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর স¤পদ ক্রোক করেছে। এ ছাড়া সহযোগী ও তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা করেছে দুদক। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮০ জনকে। এর মধ্যে ১২ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। শুক্রবার (১৪ মে) বিকালে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

আইকে/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর