সতিনের সংসারে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। তাই কাজের সন্ধানে দালালের মাধ্যমে ১৯৮৭ সালে দুবাইয়ের উদ্দেশে ঘর ছেড়েছিলেন খুলনা নগরীর শেখপাড়া প্রধান সড়কের বাসিন্দা জাহানারা বেগম। সঙ্গে ছিল সাত বছরের মেয়ে মায়া। কিন্তু দালাল চক্র তাকে ও মায়াকে দুবাইয়ের কথা বলে প্রথমে ভারত ও পরে নিয়ে যায় পাকিস্তান। কিছুদিন পরে ওই চক্রের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে মা-মেয়ের আশ্রয় হয় পাকিস্তানের করাচি থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে এক গ্রামে। এর পর সেখানেই তাদের কেটে গেছে ৩৭ বছর। দেশে ফিরতে নানাভাবে চেষ্টা করেও পারেননি। অবশেষে তাদের চেষ্টা সফল হয়েছে। ৩৭ বছর পর গত শনিবার (১ জুন) দেশের মাটিতে পা রেখে আবেগাপ্লুত জাহানারা।
জানা গেছে, গত বছর পাকিস্তানেই জাহানারার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় ‘দেশে ফেরা’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যের সঙ্গে। তাদের প্রচেষ্টায় খুলনায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। কিন্তু জাহানারার বাড়ি ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পাসপোর্ট, ভিসা, পরিচয়পত্র। সব বাধা পেরিয়ে ছয় মাসের চেষ্টার পর শনিবার রাতে দেশে পৌঁছান জাহানারা। রোববার (২ জুন) সকালে তিনি ছুটে যান খুলনার শেখপাড়ার বাড়িতে। তিন যুগ পর হারানো স্বজনকে ফিরে পেয়ে আপ্লুত জাহানারার পরিবারের সদস্যরাও।
বিজ্ঞাপন
পরিবারের সদস্যরা জানান, করাচিতে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে জাহানারা বেড়াতে গিয়েছিলেন নিজের পাশের গ্রামে। সেখানে এক বাঙালি পরিবার দেখে জানান, তার বাড়ি বাংলাদেশের খুলনায়। ওই পরিবারটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দেশে ফেরা’ পাকিস্তানি সংগঠক অলি উল্লাহ মারুফকে জাহানারার কথা জানায়। অলি উল্লাহ মারুফ করাচির ওই গ্রামে গিয়ে জাহানারার ছবি ও কিছু ভিডিও বাংলাদেশের সংগঠকদের কাছে পাঠান। তারা নিজেদের ফেসবুক পেজে জাহানারা বেগমের ছবি ও ভিডিও আপলোড করেন। বাগেরহাটের কচুয়ার ওই গ্রামে ও পরে খুলনায় যোগাযোগ করেন তারা। এরপর জাহানারার সঙ্গে ভিডিওকলে কথাও বলেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি জীবিত রয়েছেন নিশ্চিত হওয়ার পর শুরু হয় তাকে দেশে আনার প্রক্রিয়া।
জাহানারার ছোট ভাই শেখপাড়ার ব্যবসায়ী মহসীন শেখ জানান, বোনকে বাবা আবদুল ওহাব সারাদেশে খুঁজেছেন। ভারতে যেতে পারে– এমন আশঙ্কায় কলকাতা, দিল্লি, আজমির শরিফও খুঁজতে গিয়েছেন। কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিন বছর আগে বাবা মারা গেছেন। জাহানারা বেগমের স্বামী আবদুর রশিদ ১৯৯০ সালে মারা যান।
বিজ্ঞাপন
জাহানারা বেগম জানান, তিনি দেশে ফেরার জন্য এলাকার লোকদের বলতেন। চিঠি লেখার চেষ্টা করতেন। কিন্তু ফেরার কোনো উপায় পাননি। ১৯৯৫ সালে পাকিস্তানে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। মেয়ে মায়াকেও বিয়ে দেন সেখানে। অনেক কষ্টের পরে দেশে এসে ভাইবোনদের দেখে খুব ভালো লাগছে। তবে মেয়ে মায়ার জন্য আবার পাকিস্তানে ফিরতে হবে। আগামী ১৬ আগস্ট তার ফিরতি ফ্লাইট।

