মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

ছেলে হত্যার মামলা করে উল্টো মিথ্যা মামলায় জর্জরিত দিনমজুর বাবা

জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৪, ১১:৩৬ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে ছেলে হত্যার মামলা করে বিপাকে এক দিনমজুর বাবা। একদিকে মামলা তুলে নিতে আসামি পক্ষের হুমকি-ধমকি। অন্যদিকে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি। হত্যা মামলা তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিবারটি।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই রাতে ৫ বছর বয়সী নাতি ইয়ামিনকে কোলের মধ্যে নিয়ে ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়েছিলেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের গোসাই গোবিন্দপুর গ্রামের মহিদ শেখ ও তার স্ত্রী নাছিমা বেগম। গভীর রাতে ঘুমন্ত ইয়ামিনকে তুলে নিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার পর লাশ বাড়ির অদূরে একটি পাটখেতে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

ইসলামী ব্যাংকের ১ কোটি ২০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও ক্যাশিয়ার

এ ঘটনায় ১৯ জুলাই ইয়ামিনের বাবা নাছির শেখ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বালিয়াকান্দি থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলা তদন্তে নেমে শিশু ইয়ামিন হত্যার সঙ্গে প্রতিবেশী রেজাউল শেখ ওরফে নিজাম শেখের (৪৫) সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। নিজামকে গ্রেফতার করে ২৮ জুলাই আদালতে পাঠায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বালিয়াকান্দি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিবুল ইসলাম।

আদালতে পাঠানোর আর্জিতে উল্লেখ করা হয়, নিজাম শেখ তার অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে শিশু ইয়ামিনকে হত্যা করেছে। তবে অদৃশ্য কারণে সেই সহযোগীদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। 


বিজ্ঞাপন


ইয়ামিনের স্বজনদের অভিযোগ, প্রভাবশালী নিজাম জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। একইসঙ্গে ভাই হাশেম শেখকে দিয়ে আদালতে চাঁদাবাজি ও মারামারির একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়ে তাদের হয়রানি করছে।

Capture_2024-05-31_11.12.41

ইয়ামিনের বাবা নাছির শেখ বলেন, নিজাম ও তার পরিবারের সঙ্গে আমার জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ নিজামকে গ্রেফতারের পর সে তার সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে। এরপর পুলিশ নিজামের পরিবারের কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে পরবর্তীতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে নিজামের পরিবারের লোকজন আমার খেতের ফুলকপি কেটে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি করে। নিজাম হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের হয়ে আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দিয়ে চলেছে। তার ভাই হাশেম শেখকে দিয়ে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারামারির দু'টি মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়ে হয়রানি করছে।

তিনি বলেন, বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ নিজামকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর পর বিষয়টি নিয়ে আর কোনো গুরুত্ব দেয়নি। নিজামের সহযোগী আসামি কারা তাদেরকেও গ্রেফতার করেনি। যে কারণে আমি মামলাটি পিবিআইকে তদন্তভার দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করি। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে মামলাটি পিবিআই ফরিদপুর কার্যালয়ের এসআই নজরুল ইসলাম তদন্ত করছেন। তবে তিনিও মামলা তদন্তে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি আমার সন্তান হত্যার সঠিক বিচার চাই।

আরও পড়ুন

মারা গেলেন গুলিবিদ্ধ সেই ইউপি চেয়ারম্যান

ইয়ামিনের মা বিথী আক্তার বলেন, আমার আরও দু’টি শিশু সন্তান আছে। আমি সবসময় আতঙ্কে থাকি। কখন ওরা আবার আমার এই দুই সন্তানকেও তুলে নিয়ে মেরে না ফেলে।

ইয়ামিনের দাদি নাছিমা বেগম বলেন, আমার কোল থেকে তুলে নিয়ে আমার কলিজার টুকরা নাতিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিজামসহ যারা আমার নাতিকে হত্যা করেছে আমি তাদের সবার ফাঁসি চাই।

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে ইয়ামিনের পরিবার যদি কোনো নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন তাহলে তারা বালিয়াকান্দি থানায় যোগাযোগ করতে পারেন। আমি তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য থানায় বলে দেব।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্তের কাজ চলমান আছে। তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর