ঝিনাইদহের শৈলকূপার কুমার নদে পানি নেই। মাছের দেখা মিলছে না জেলেদের জালে। নদের পাড়ে জেলেরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। হতাশ হয়ে তাদের অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছেঁড়া-ফাটা জাল মেরামত করছেন। কেউবা জাল গুটিয়ে স্তূপ দিয়ে রাখছেন। আবার কিছু জেলে নৌকা বা ডিঙি সংস্কারে ব্যস্ত।
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নদের নাব্যতা কমেছে। পানি না থাকায় স্রোত নেই। চর জেগে ওঠায় মাছের দেখা মিলছে না। তবে জেলেরা আশা করছেন, শিগগিরই আবার নদে পানি বাড়বে, মাছের দেখাও মিলবে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় নদীর ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি
এমন অবস্থায় বাজারগুলোতে চাষের মাছ ছাড়া অন্য মাছের দেখা মেলা ভার। শেষ ভরসা পুকুর ও হাওড়-বাওড়ে চাষ করা পাঙ্গাস আর হাইব্রিড তেলাপিয়া। তবে কুমার নদে মাছের সংকট দেখা দেওয়ার পেছনে রয়েছে অসাধু জেলেদের হাত। ‘চায়না দুয়ারী’ নামের সুক্ষ্ম জালের ফাঁদে পড়ে কুমার নদ হয়েছে মাছশূন্য। শুধু মাছই না, কোনো জলজ প্রাণীও রক্ষা পায় না এ জাল থেকে।
বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের দামুকদিয়া এলাকায় দেখা যায়, নদ শুকিয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। নদের বুক হয়েছে চাষের জমি আর গরু-ছাগলের চারণভূমি।
নদের পাড়ে বসে জেলে চঞ্চল ছেঁড়া জাল মেরামত করছেন। তিনি বলেন,‘আগে কুমার নদে প্রচুর মাছ ছিল। এই মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে আমরা সংসার চালাতাম। কিন্তু এখন আমরা সংসার চালাতে পারছি না। কারণ কুমার নদে এখন আর মাছ পাই না। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাতেও কষ্ট হচ্ছে। অসুখ-বিসুখ নিয়েই আছি। কুমার নদের পানি এমনভাবে শুকিয়েছে যে কোথাও কোথাও হাঁটুপানি দেখা গেছে।’
বিজ্ঞাপন
জেলে আব্বাস বলেন, ‘নদে পানি থাকলে মাছের আকাল হয় না, সারা বছরই কম-বেশি মাছ পাওয়া যায়। তবে এ বছর পানি এমনভাবে শুকিয়েছে, তাতে পায়ে হেঁটে কুমার নদ পার হওয়া যাচ্ছে। জালে তো মাছের দেখাই নেই। তাই জাল নদ থেকে তুলে বাড়িতে রেখে দিয়েছি। যদি পানি বাড়ে আর মাছের দেখা মেলে - তবে নদে মাছ ধরতে যাবো। নদের যে অবস্থা - তাতে খনন না করলে আর মাছের দেখা মিলবে না। খুবই অভাব-অনটনে দিনাতিপাত করছি। না খেয়ে মরা লাগবে।’
জেলে পথিক শেখ বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ২/৩ কেজি দেশি মাছ পেয়েছি। তাতে সংসার খুবই ভালো চলেছে। কোনো অভাব হয়নি। কিন্তু এখন পরিবার নিয়ে অনেক সমস্যায় আছি।’
আরও পড়ুন: আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা চরাঞ্চলের মানুষের
কুমার নদে মাছ সংকটের ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘কুমার নদে পানি সংকট তো আছেই। আবার অসাধু জেলেরা ‘চায়না দুয়ারী’ জাল দিয়ে অবাধে মাছ ধরার কারণে নদে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। চলতি মাসেও কয়েকবার অভিযান চালিয়ে এসব জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং দেশীয় মাছ রক্ষার্থে যথাযথ ভূমিকা পালন করা হবে।
প্রতিনিধি/ এমইউ