৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তবে ক্ষমতাসীন দলের এই দুই প্রার্থীর জম জমাট প্রচারণায় পাশাপাশি করছেন অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ।নেতাকর্মীদের মধ্যেও দেখা্ দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া বিএনপির একটি অংশ প্রকাশ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থীর হয়ে ভোট চাওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা রয়েছে। দলের হাই কমাণ্ড ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও থেমে নেই প্রচারণা। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ছাড়াও বিএনপির ভূমিকা নিয়ে সরব আলোচনা চলছে।
এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন। তারা হলেন, উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ালীগের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সিকদার, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম আজাদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ কবির।
মুরাদ কবির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের স্বজন। তাই তিনি দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে গত ৩ মে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। নির্বাচন থেকে সরে গেলেও ব্যালটে তার প্রতীক থেকেই যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
মুরাদ কবির নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় চেয়ারম্যান পদে মূল লড়াই হচ্ছে কামাল উদ্দিন সিকদার ও সেলিম আজাদের মধ্যে। তবে অতীতের জাতীয় নির্বাচন, পৌরসভার নির্বাচনে উপজেলায় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিভক্তি থাকলেও এখন অনেক নেতাই কামাল সিকদারের হয়ে আনারসের পক্ষে মাঠে সরব রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
অপর প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আজাদের কিছু দলীয় কর্মী আর সাধারণ ভোটাররা তার হয়ে কাজ করছেন। ফলে, ঐক্যবদ্ধ ক্ষমতাসীন নেতাদের বিপক্ষে আমজনতা নিয়ে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস মিলছে নির্বাচন ঘিরে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কামাল উদ্দিন সিকদারের পক্ষে নির্বাচনের মাঠে কাজ করছেন উপজেলা আলীগের সভাপতি মুরাদ কবীর, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল, জেলার যুগ্ম সম্পাদক সিকদার মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর আলী, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন জয়, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জয়, যুবলীগ সভাপতি হীরু মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আশিক দেওয়ান।
এছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের সব চেয়ারম্যান তার হয়ে কাজ করছেন।
অপরদিকে, সেলিম আজাদের সঙ্গে নেতা বলতে শুধু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তুষার, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওহাব মিয়া ও তৃণমূলের কিছু নেতা।
স্থানীয়দের দাবি, কালিয়াকৈরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বিএনপি ও জামায়াতের ভোটাররা। যদিও বিএনপি থেকে ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ করেছে। তবে, নেতৃত্বস্থানীয় বিএনপির লোক ভোটে না আসলেও ভোট দিতে পারে দলটির তৃণমূল কর্মীরা। তারা ভোটকেন্দ্রে আসলে পাল্টে যেতে পারে হিসাবনিকাশ। বিএনপি-সমর্থকদের ভোট যে প্রার্থীর দিকে বেশি পড়বে, তার বিজয় সহজ হবে। এক্ষেত্রে তারা, তুলনামূলক নিরীহ-নির্বিবাদী প্রার্থী বেছে নেবে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড খিলপাড়া বাজারে জনসভায় বক্তব্য রাখেন গাজীপুর জেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম এবং গাজীপুর জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মোখলেছ মাস্টার। তারা দুইজনই যুবলীগ নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সেলিম আজাদের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন সিকদারের পক্ষে ভোট চাইতে দেখা গেছে।
সাধারণ ভোটারদের অভিমত, তাদের সুখ-দুঃখে যাকে ডাকলে পাওয়া যায় তাকেই ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে কামাল উদ্দিন সিকদার থেকে অনেকটা এগিয়ে সেলিম আজাদ। কারণ তিনি সারাবছর সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলাচল করে আসছেন।
এদিকে, চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম আজাদ তার সমর্থকদের হুমকি, মারধর ও পোস্টার লাগানোর বাধা প্রদানের অভিযোগ তুলেছেন। এসব ঘটনায় তিনি উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কালিয়াকৈর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়াও এসব বিষয় নিয়ে করেছেন সংবাদ সম্মেলন। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কামাল সিকদার।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তুষার বলেন, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এটা দলীয় নির্বাচন নয়, তবু আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও সমর্থকরা দলীয় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে আনারসের ব্যানার টাঙিয়ে মিটিং মিছিল পখসভা করেছেন তারা।
চেয়ারম্যানপ্রার্থী সেলিম আজাদ বলেন, তৃণমূলের জনতা আমাকে চায়। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল উদ্দিন সিকদার সাধারণ মানুষ থেকে বঞ্চিত। তারা ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছেন। গত বুধবার একজনকে পিটিয়ে আহত করেছেন। নানারকম বাধাবিঘ্ন ঘটিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। তারা ভোটের মাধ্যমে নয়, জোরজবরদস্তি করার চেষ্টায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল উদ্দিন সিকদার বলেন, তাদের অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই। আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ, পরিবেশ ঠিক আছে। এই নির্বাচন সম্পূর্ণ নির্দলীয়, দলীয় প্রভাব খাটানোর কোনও প্রশ্নই আসে না।
কালিয়াকৈর উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা। মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৫ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ১৫৮ এবং ১ জন হিজড়া ভোটার। নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ১২৮টি।
প্রতিনিধি/একেবি