শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে নেই বিশ্বমানের পরিচালনা পদ্ধতি

জেলা প্রতিনিধি, তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার 
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৪, ০৮:১৭ পিএম

শেয়ার করুন:

ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে নেই বিশ্বমানের পরিচালনা পদ্ধতি

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা রিজার্ভ ফরেস্টে মনোরম প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অবস্থান। ২০০১ সালে এটিকে বাংলাদেশের প্রথম সাফারি পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হয়। তবে প্রতিষ্ঠার ২৩ বছরেও পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ চলমান আছে, সেখানে এখনও বিশ্বমানের পরিচালনা পদ্ধতি বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম গড়ে উঠেনি। 

একসময় এখানকার চিরসবুজ বনাঞ্চলে ছিল গগনচুম্বী গর্জন, বৈলাম, তেলসুর, সিভিট, চাপালিশ, চম্পা ফুল ও বিবিধ লতাগুল্ম   সমৃদ্ধ। এছাড়া বনাঞ্চলে দেখা যেত হাতি, বাঘ, হরিণ, ভালুক, বানরসহ অসংখ্য প্রজাতির পাখি ও সরীসৃপ। সেখানে তৎকালীন কক্সবাজার বন বিভাগ কর্তৃক ৪২ দশমিক ৫ হেক্টর এলাকা নিয়ে ১৯৮২ সালে একটি হরিণ প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। পরে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং অবৈধ শিকার ও পাচারের কারণে এ বনাঞ্চলের অসংখ্য উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী হারিয়ে যেতে থাকে। 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: এক পাগলা কুকুরের কামড়ে শিশুসহ ২২ জন আহত

উঁচু-নিচু টিলাসমৃদ্ধ চিরসবুজ এই বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা, গবেষণা ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে চিত্তবিনোদনসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে ওই হরিণ প্রজননকেন্দ্রটির পরিসর বৃদ্ধি করা হয়। এর মধ্য দিয়ে ৩০০ হেক্টর এলাকা নিয়ে ২০০১ সালে দেশের প্রথম সাফারি পার্ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের (কক্সবাজার) যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে সাফারি পার্কের আয়তন বৃদ্ধি করে ৯০০ হেক্টর করা হয়। 

Screenshot-2024-05-16-20171সাফারি পার্ক সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহের ছয় দিন দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস, প্রাণিকূলের কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। এখন প্রাপ্তবয়স্করা ৫০ টাকা, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের টিকিট ফ্রী এবং ৫ বছরের বড় শিশু-কিশোররা ৩০ টাকা টিকিটে পার্ক দর্শন করতে পারছেন। 

বর্তমানে পার্কে আবদ্ধ বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ৪১০ টি। এর মধ্যে স্তন্যপায়ী প্রাণী ১২৩ টি, সরীসৃপ প্রজাতীর প্রাণী ৬৩ এবং পাখি রয়েছে ২২৪ টি। এছাড়া পার্কে উম্মুক্ত প্রাণীর সংখ্যা প্রায় ২৫০০-৩০০০।  পার্কের বেষ্টনীতে কঠোর নিরাপত্তায় পালিত হচ্ছে - হাতি, বাঘ, সিংহ, জলহস্তী, গয়াল, আফ্রিকান জেব্রা, ওয়াইল্ডবিস্ট, ভালুক, বন্য শূকর, হনুমান, ময়ূর, স্বাদু ও নোনা পানির কুমির, সাপ, বনগরুসহ দেশি-বিদেশি নানান প্রজাতির প্রাণী। পার্কজুড়ে রয়েছে চিত্রা, মায়া, সম্বর ও প্যারা হরিণ।
 
রয়েছে জানা-অজানা বিচিত্র ধরনের কয়েকশ’ ধরনের পাখি। পার্কে দেখা মেলে কালের সাক্ষী বিশালাকার দুর্লভ ও মূল্যবান বৃক্ষরাজির। সে সব গাছে বানরের লাফালাফি নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। এসব দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন দর্শনার্থীরা। 


বিজ্ঞাপন


সাফারি পার্কের ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে পুরো পার্ক এরিয়া। বর্তমানে পার্কে আবদ্ধ বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ৪১০ টি। প্রাণীদের দেখভাল ও পরিচর্যায় আমাদের লোক আছেন ৫৫ জন, প্রাণী অনুপাতে পার্কে লোকবল দরকার ৭৭ জন। তবুও আমরা বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কর্তব্য পালন করে যাচ্ছি। পার্কের প্রাণিকূলের চিকিৎসার জন্য রয়েছে হাসপাতাল। সেখানে প্রাণী চিকিৎসক রয়েছেন।

সরকারের তথ্য অনুযায়ী - আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের সাফারি পার্কে রূপান্তর করার লক্ষ্যে অনুমোদিত মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে কাজ চলছে। এছাড়া কক্সবাজার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে, এটা শেষ হবে ২০২৫ সালের জুন মাসে। 

আরও পড়ুন: অভয়নগরে কালোমুখো হনুমানের কামড়ে স্কুলছাত্র আহত

আইইউসিএন-২০১৬-এর বাংলাদেশের লাল তালিকা এবং অন্যান্য তথ্য অনুযায়ী ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বিলুপ্ত ও বিপদগ্রস্ত প্রাণীর তালিকায় আছে দুই প্রজাতির গন্ডার, দুই প্রজাতির ভালুক, বনগরু, বুনো মহিষ, বান্টেং, রামকুত্তা, নেকড়ে, সবুজ ময়ূর, বাদি হাঁস, গোলবাহার সাপসহ বহু জানা-অজানা ছোট ছোট প্রজাতির স্তন্যপায়ী, পাখি, সরীসৃপ, উভচর, মাছ এবং অমেরুদণ্ডী প্রাণী ও উদ্ভিদ।

Screenshot-2024-05-16-20173চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্ক বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান জানান, বিশ্বমানের সব সাফারি পার্কেই একটি মানসম্পন্ন পরিচালন পদ্ধতি বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) থাকে। ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে এ জিনিসের অস্তিত্ব নেই । বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ বা এ সংক্রান্ত সচেতনতামূলক দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি কোথাও আছে বলে দেখিনি। বাংলাদেশের দু’টি সাফারি পার্কই নিম্নমানের চিড়িয়াখানার বৃহদাকার সংস্করণমাত্র। বিশ্বের কোনো সাফারির মানদণ্ডে এরা টেকে না। এই সাফারি পার্ককে বিশ্বমানে উন্নত করা প্রয়োজন। সেখানে এখনও বিশ্বমানের পরিচালনা পদ্ধতি বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম গড়ে উঠেনি। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে দরকার সরকারের পক্ষ থেকে একটি বন্যপ্রাণী নীতি প্রণয়ন এবং সেটির অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত বন্যপ্রাণী বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বর্তমানে পার্কটিতে আধুনিকায়নের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের জুন মাসে। করোনার কারণে প্রথম দুই বছর কোনো কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, তাই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলে পাল্টে যাবে পার্কের চিত্র। সেই সঙ্গে পরিবর্তন হবে অনেক কিছু। ইতোমধ্যে পার্কের অনেক কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। 

প্রতিনিধি/ এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর