চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃত স্কোয়াড্রন লিডার আসীম জাওয়াদের মানিকগঞ্জের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার মা কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কোনোভাবেই তার আহাজারি থামছে না। অন্য স্বজনরাও তখন ছিলেন শোকে স্তব্ধ।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিকেলে জাওয়াদের জেলা শহরের বাসায় গিয়ে এ অবস্থা দেখা যায়।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: আগুন ধরে প্রশিক্ষণ বিমান পড়ল কর্ণফুলী নদীতে
শহরের গোল্ডেন টাওয়ারের সাত তলায় গিয়ে দেখা যায় একমাত্র সন্তান জাওয়াদের দুর্ঘটনার খবরে তার মা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। বিলাপা করছেন আর বলছেন, আমার ছেলে প্রতিদিন ফোন করে আমাকে খাবার খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু, আজ এখন পর্যন্ত কোনো ফোন করেনি। কখন আসবে জাওয়াদের ফোন।
নিহত আসীম জাওয়াদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামে। তার বাবা আমান উল্লাহ একজন চিকিৎসক। তার মা নিলুফা খানম সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তারা গত তিন বছর ধরে শহরের গোল্ডেন টাওয়ারের নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকেন। চাকরির কারণে আসীম জাওয়াদ তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চট্রগ্রামে থাকতেন। তিনি প্রায় আট বছর আগে নারায়ণগঞ্জে বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম অন্তরা আক্তার। তাদের একটি মেয়ে (৬) ও ছেলে (১) রয়েছে।
নিলুফা আক্তার খানম ও ডাক্তার আমানউল্লাহর একমাত্র ছেলে ছিলেন আসীম জাওয়াদ। এখন পরিবারের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা।
স্বজনদের কাছে জাওয়াদের মা বাবরাবার জানতে চাইছেন যে তার ছেলে আজ এখনও কেন ফোন করে খোঁজ নিলো না। বাড়িতে এতো সাংবাদিক এসেছে কেন? এরপরই তিনি বলছেন, আমার ছেলে এখন কোথায়। আমি আছি, কিন্তু আমার ছেলে তো নেই। এভাবে বিলাপ করতে করতে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন এ মা। কোনোভাবেই তার আহাজারি থামছে না। তখন পাশে থাকা অন্য স্বজনরাও ছিলেন শোকে স্তব্ধ।
আরও পড়ুন: বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের এক পাইলট নিহত
আসীম জাওয়াদের খালাতো ভাই মশিউর রহমান জানান, জাওয়াদ ২০০৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমিতে (বাফা) যোগদান করেন। তিনি ২০১১ সালে বিমানবাহিনীতে অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে (নেভি হাসপাতাল) তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তার মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা। তিনি জানান, বিমান বাহিনীর বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট ও কো-পাইলট প্যারাসুট দিয়ে নেমে এলে তাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেলা ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আসীম জাওয়াদ মারা যান।
নিহতের মামা সাংবাদিক সুরুয খান জানান, অত্যান্ত মেধাবী ছিল জাওয়াদ। স্কুল ও কলেজ জীবনে সব সময় প্রথম হয়েছে। ছোট বেলা থেকে জাওয়াদের স্বপ্ন ছিল সে পাইলট হবে। সে পাইলটও হয়েছিল। কিন্তু সেটা ছিল মাত্র অল্প সময়ের জন্য। আজ তাকে হারিয়ে পরিবারটি শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। জাওয়াদ ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে চান্স পাওয়ার পরও সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়নি। নিজের ইচ্ছায় সে পাইলট হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, আগামীকাল শুক্রবার লাশ মানিকগঞ্জে নিয়ে আসা হবে। এরপর তাকে শহরের সেওতা কবরস্থানে দাফন করা হবে।
প্রতিনিধি/ এমইউ