বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রিফাত কি পারবেন কুমিল্লায় ‘বিএনপির দুর্গ’ ভাঙতে?

মোহাম্মদ শরীফ
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২২, ০৭:৪৬ এএম

শেয়ার করুন:

রিফাত কি পারবেন কুমিল্লায় ‘বিএনপির দুর্গ’ ভাঙতে?

আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পুরোদমে। এই নির্বাচনে দলীয়ভাবে বিএনপি অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। তবে বর্তমান মেয়রসহ দলটির কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্রভাবে রয়েছেন ভোটের মাঠে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী বাছাই করেছে। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু না হলেও কুমিল্লায় নির্বাচনী আমেজ দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ। বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই সিটিতে গত দুই নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগ কি ফিরতে পারবে জয়ের ধারায়?

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে। প্রথম নির্বাচন হয় ২০১২ সালে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন বরেণ্য রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর আফজল খান। কিন্তু নগরে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে তাকে পরাজিত হতে হয় বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর কাছে। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বার কুমিল্লা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচনে নামেন আফজল খান কন্যা বর্তমান সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা। তিনিও ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুর কাছে বাবার মতোই পরাজয় বরণ করেন।


বিজ্ঞাপন


এখন পর্যন্ত কুমিল্লা সিটিতে ক্ষমতার চেয়ার দখল করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এছাড়া কুমিল্লা সদর আসনে ১৯৭৩ সালে প্রথম জয়ের পর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো জয় পায় দলটি। এরপর থেকে আসনটি তাদের দখলে রয়েছে। মাঝে দীর্ঘ সময় কুমিল্লা ছিল বিএনপির দখলে।

আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটির তৃতীয়বারের নির্বাচন। এবার আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। শুক্রবার (১৩ মে) বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বোর্ড সভা রিফাতের হাতে তুলে দেন নৌকা।
প্রতীক পেয়ে আরফানুল হক রিফাত তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নেত্রী আমার ওপর ভরসা রেখেছেন। আমি জীবন দিয়ে হলেও কুমিল্লা সিটির পদটি নেত্রীকে উপহার দেবো।’

এদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্বাচনে না এলেও মাঠে থাকবেন বিএনপির দুইবারের মেয়র মনিরুর হক সাক্কু। শুভাকাঙ্ক্ষীদের ইচ্ছায় তিনি নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। সাক্কুর গড়া দুর্গ ভাঙা সহজ হবে না বলে মনে করছেন অনেকে।

নগরীর রাজনীতিতে রিফাত সাংসদ আ ক ম বাহার সমর্থিত হিসেবে পরিচিত। এদিকে সাংসদ বাহারবিরোধী সংরক্ষিত আসনের সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা সীমা এবছর সিটি নির্বাচনের নৌকা চেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। 
কুমিল্লা নগরীতে বাহার গ্রুপ ও আফজল খান পরিবারের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। বিগত দুই সিটি নির্বাচনে এই দ্বন্দ্বকে নৌকা তথা আফজল খান পরিবারের প্রার্থীদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ মনে করেন অনেকে আওয়ামী লীগ নেতা। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে এবছর বাহার সমর্থিত রিফাতের ভাগ্যে কী আছে! যদিও ইতোমধ্যে আফজল খানের ইন্তেকালের পর তার গ্রুপের আধিপত্য অনেকটা কমে গেছে।


বিজ্ঞাপন


তবে নির্বাচনী মাঠে এবছর সাক্কুকে দুই দিক মোকাবেলা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। রিফাতের নৌকা প্রাপ্তিতে সাংসদ বাহারের ছায়া সরে যেতে পারে তার মাথার ওপর থেকে। এছাড়া এবার সাক্কুর পাশে নেই দল। ইতোমধ্যে তিনি দলীয় পদ হারিয়েছেন। এমনকি সাক্কুকে ঠেকাতে মাঠে থাকবেন অপর বিএনপি নেতা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। 

কায়সারের মতে ‘সাক্কু জাতীয়তাবাদী আওয়ামী লীগ।’ তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কুমিল্লা বিএনপির মাঠ। এখানে বিএনপির সমর্থন বেশি। সে (সাক্কু) বিএনপির ভোটে নির্বাচিত হয়ে বিএনপির সাথে বেইমানি করেছে। করুণ মুহূর্তে দলের জন্য কিছুই করেনি। তাই কুমিল্লার বিএনপি তাকে বয়কট করবে।’

নানা সমীকরণে এখন কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। এবার ভোট হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এখন থেকেই নগরীতে টহল শুরু করেছে জেলা পুলিশের সব কটি ইউনিট। আছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তিনটি টিম। ১৫ মে থেকে মাঠে নামবে বিজিবি। এবার ভোট কেন্দ্র ও বুথে থাকবে সিসি ক্যামেরা। ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৩টি কেন্দ্রে গ্রহণ করা হবে কুমিল্লা সিটি ভোট।
 
গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়া নির্বাচন কমিশনের এটাই প্রথম ভোট। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছে নতুন কমিশন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসি তাদের অধীনে প্রথম এই নির্বাচন অপেক্ষাকৃত বিতর্কমুক্ত করার চেষ্টা করবে। এজন্য কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলেই আশা করছেন তারা।

/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর