সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মরা গাছের অজুহাতে কাটা হচ্ছে শতাধিক জীবিত গাছ

ফারুক হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২৪, ১০:৪০ এএম

শেয়ার করুন:

মরা গাছের অজুহাতে কাটা হচ্ছে শতাধিক জীবিত গাছ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের ধারে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) লাগানো ২৫৮টি গাছ মরা বা মরে যাচ্ছে বলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাটা ও বিক্রির অভিযোগ উঠেছে জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে। রোপণকারী সংস্থাকে না জানিয়েই টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রির এ অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই সংস্থার মধ্যে চলছে চিঠি চালাচালি।

এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে বিপুল গাছ কেটে ফেলার ব্যাপক সমালোচনা করেছেন স্থানীয়রা। পরিবেশের সুরক্ষায় দ্রুত গাছ কাটা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।


বিজ্ঞাপন


চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আমনুরা-কেন্দুল সড়কের দুই ধারের ২৫৮টি গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ। কিন্তু গাছগুলো নিজেদের দাবি করে গাছ কাটা বন্ধ রাখতে জেলা পরিষদকে চিঠি দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএমডিএ।

capai_6

বিএমডিএর অভিযোগ, ১৯৮৯-৯০ সালে সড়কের ধারে গাছগুলো রোপণ করে বিএমডিএ। কিন্তু সংস্থাটিকে না জানিয়েই এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে দুই শতাধিক গাছ। ওই গাছ বিক্রিও করে দেয় জেলা পরিষদ। গাছ কাটা শুরু হলে, তা বন্ধে জেলা পরিষদকে চিঠি দেয় বিএমডিএ। কিন্তু চিঠি উপেক্ষা করেই চলছে গাছ কাটা।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আল মামুন রশীদ  বলেন, ওই রাস্তায় যে গাছগুলো আছে সেগুলো বিএমডিএ রোপণ করেছে। খুবই পুরোনো দুই-একটা গাছ হয়তো বিএমডিএর রোপিত না। জেলা পরিষদ যে গাছগুলো নিলাম করেছে সে ব্যাপারে আমাদের কিছু জানায়নি। তারা একেবারেই ফাইনাল স্টেজে গিয়ে আমাকে জানিয়েছে। বিএমডিএ ১৯৮৬ সাল থেকে বনায়ন করে আসছে, তবে পরবর্তীতে গাছগুলো নিয়ে যেন কোনো অসুবিধা না হয় এ জন্য আমরা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে চুক্তি করেছি। জেলা পরিষদের সঙ্গে গাছে হিস্যা নিয়ে চুক্তি রয়েছে। জেলা পরিষদের কাছে গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে তারা বলছে গাছগুলো মরে যাচ্ছিল, তাই কাটা হয়েছে। কিন্তু যে গাছগুলো কাটা হয়েছে তার মধ্যে পাঁচ শতাংশের বেশি গাছ মারা যায়নি।


বিজ্ঞাপন


Capai-3

জেলা পরিষদের দাবি, ভূমির মালিক যেহেতু জেলা পরিষদ, তাই গাছের মালিকও জেলা পরিষদ। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রায় ২৬ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে গাছগুলো। মূল্য সংযোজন করসহ অন্যান্য কর মিলিয়ে দাম পড়েছে ৩২ লাখ টাকা। তবে গাছের মালিকানার যথাযথ প্রমাণ দিতে পারলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন।

আফাজ উদ্দিন বলেন, কার্যক্রমটা শুরু হয়েছে ২০২২ সাল থেকে। প্রায় দুই বছর চলছে। এতদিন তারা বললেন না যে গাছ আমাদের, দুই বছরের মধ্যে তো বলতে পারতেন যে গাছ আমাদের। এখন কেউ যদি দাবি করে যে গাছ আমার সে প্রমাণ দেক, সে অনুযায়ী আমরা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেব।

capai

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমীন বলছেন, ঝিলিমে যে গাছগুলো কাটা হয়েছে, তা বিক্রিতে সরকারি দামের চেয়ে বেশি দাম পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, গাছে হিস্যা নিয়ে যে কথা উঠেছে তা বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বসে নিষ্পত্তি করবে। এ ছাড়া যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেগুলোর কিছু মারা গেছে, আবার কিছু মরে যাচ্ছিল। এ কারণে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।

capai-5

এদিকে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় যখন পুড়ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, তখন একসঙ্গে এতগুলো গাছ কেটে ফেলার সমালোচনা করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, গাছগুলো কেটে নেওয়ার কারণে এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যে প্রভাব পড়বে। তাই এখনই কাছ কাটা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা রহমান আলী জানান, প্রাকৃতিক কারণে যে গাছগুলো মারা গেছে, সেগুলো কাটছে ঠিক আছে। কিন্তু ভালো গাছ কাটার কোনো মানেই হয় না। আব্দুস সামাদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান যেভাবে সড়কের দু’ধারে গাছ কাটা হচ্ছে তাতে অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যে প্রভাব পড়বে। কেন্দুল গ্রামের সুলেখা বলেন, সড়কগুলো খাঁ খাঁ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা দ্রুত এসব গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

capai_6

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উভয় সংস্থার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর