সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজ গামেন্টসের জিএমকে উপজেলা চেয়ারম্যান বানাতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউজ্জামান ফকির।
বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুর দেড়টার দিকে বেলকুচি প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউজ্জামান ফকির।
বিজ্ঞাপন
এমপির মালিকানাধীন শিল্পগ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কটন ক্লাব (বিডি)’র জিএম (অপারেশন) মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম সরকারকে বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী করে এমপির দুই ভাই সরাসরি তার প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বদি ফকির মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও তিনি বেলকুচি উপজেলার এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বদিউজ্জামান ফকির বলেন, আজ অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছি, অথচ এমন হবার কথা ছিল না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল উৎসবমুখর, দেশের বিভিন্ন স্থানে হচ্ছেও তাই। আমিও ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যাশা করেছিলাম, উৎসবমুখর পরিবেশে বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি আপনাদের মাধ্যমে বেলকুচিবাসীর সামনে তুলে ধরবো বেলকুচিকে নিয়ে আমার নানা স্বপ্নের কথা, ঘোষণা করব নির্বাচনী ইশতেহার। কিন্তু বাস্তবতা আজ আমাকে ভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনাদের সামনে এনে দাড় করিয়েছে।
তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেলকুচি উপজেলাজুড়ে আজ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। নির্বাচনী মাঠে সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডলের মালিকানাধীন শিল্পগ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান কটন ক্লাব (বিডি)’র জিএম (অপারেশন) বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম সরকার তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও কর্মী-সমর্থকেরা ছাড়া কেউই আজ নিরাপদ নয়। আমি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার প্রতিটি ধাপে আমাকে হামলা, মারপিট, ভাংচুর ও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, আমি গতকাল বুধবার (১ মে) রাত সাড়ে দশটার দিকে শাহাপুর ডিএসএস স্কুলের পথসভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বেলকুচি পৌর এলাকার চালা সাতরাস্তা মোড়ে ঈদগাহ মাঠের মোড় ঘুড়ে বেলকুচি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছালে আমার বহড়ে হামলা চালানো হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আমিনুল ইসলামের উপস্থিতি ও নির্দেশে তার সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালায়। এতে আমিসহ আমার আরও পাচ কর্মী-সমর্থক আহত হই। বেলকুচিতে রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আমাকে নানাভাবে শাসায় আমিনুল ইসলাম। আমাকে শারিরীকভাবে আঘাত করে আমিনুল ইসলামের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য আবু তালেব। আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আত্মরক্ষার্থে আমি ও আমার কর্মীরা বেলকুচি থানায় আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চালানো হয়। বেলকুচি থানার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই আপনারা আমার কথার সত্যতা খুজে পাবেন।
বদিউজ্জামান ফকির বলেন, এর আগেও আজুগড়া মোড়ে পোস্টার লাগাতে যাওয়া আমার কর্মীদের ধোরালো অস্ত্রের আঘাত করে আহত করা হয়েছে। আমার নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়েছে জামতৈল বাজারে। অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলামের প্রত্যক্ষ মদদ ও নির্দেশে এই ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে।
বদি ফকির বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি’র নির্দেশেনা রয়েছে চলমান উপজেলা নির্বাচনে সংসদ সদস্যবৃন্দ কোন হস্তক্ষেপ করবে না, কোন প্রার্থীর পক্ষালম্বন করবে না। কিন্তু বেলকুচিতে এই নির্দেশনা প্রতিপালন হচ্ছে না। সংসদ সদস্যের পরিবার তাদের কোম্পানির কর্মচারীকে উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সমগ্র বেলকুচিকে নিজেদের কোম্পানি মডেলে পরিনত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নিজেদের কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মকর্তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়ে বেলকুচির আওয়ামী রাজনীতির কবর রচনার পথে হাটছে। সংসদ সদস্যের ভাই আব্দুল আলিম মন্ডল ও জুবায়ের মন্ডল, ব্যাক্তিগত সহকারি সেলিম রাতদিন সভা-সমাবেশসহ প্রচারনা চালাচ্ছে আমিনুল ইসলামের পক্ষে। তাকে এমপি’র পছন্দের প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ্যে ঘোষণা করছে। নেতাকর্মী ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সংসদ সদস্যের দুই ভাই ও সহকারি নির্বাচনী মাঠে নামলে এটা প্রমানিত হয় যে, সংসদ সদস্য একজন প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছেন এবং তার নির্দেশেই এগুলো হচ্ছে। সংসদ সদস্যের দুইভাই বেলকুচিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আমিনুল ইসলাম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বেলকুচির উপজেলা নির্বাচনকে সুষ্ঠ সুন্দর ও নিরপেক্ষভাবে সমাপ্ত করতে সংসদ সদস্যের দুই ভাইয়ের বেলকুচি ত্যাগ করার বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশনের বিধি-বিধান ও রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্দেশনার ফাঁক গলিয়ে এই দুইজন মূলত সংসদ সদস্যের প্রতিনিধিত্ব করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমি এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবাধ নিরপেক্ষভাবে বেলকুচি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সমাপ্ত করতে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ঠ সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলাম সরকার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মন্ডলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
বেলকুচি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনিছুর রহমান বলেন, বুধবার রাতে প্রচারণা চালানোর একপর্যায়ে দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর বদিউজ্জামান ফকির থানায় আসেন। কিছুক্ষণ পরই আমিনুলের কর্মী-সমর্থকরাও থানায় আসেন। এরপর এখানেই বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। এ ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা প্রদান এবং গভীর রাতে থানায় অনুপ্রবেশ করে থানার পরিবেশ বিনষ্ট করার অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৮-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। থানার ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়াও দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনসহ সবার সঙ্গে কথা বলেছি। আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, এখানে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন হবে।
প্রসঙ্গত, প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিনিধি/ এজে