বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নড়াইলে নানান সংকটে ঘুরছে মৃৎশিল্পের চাকা

মো.হাবিবুর রহমান, নড়াইল
প্রকাশিত: ০১ মে ২০২৪, ১১:০১ এএম

শেয়ার করুন:

নড়াইলে নানান সংকটে ঘুরছে মৃৎশিল্পের চাকা

দেশে মৃৎশিল্পের ব্যবহার সেই আদিকাল থেকে। দেশের প্রতিটি ঘরেই মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিল, কলসি, থালা, বাটি, ফুলের টব, ফুলদানি, ব্যাংক, খাবার টেবিলসহ বিভিন্ন প্রকার সৌখিন সামগ্রীর ব্যবহার হতো। কুমারপাড়ায় ছিল কর্মব্যস্ততা। চারদিকে কাঁচাপোড়া মাটির গন্ধ ভেসে আসত। চাহিদা থাকায় গ্রামীণ হাটবাজারেও সয়লাব ছিল মাটির পণ্যের। সেসময় দেশের অর্থনীতিতে শক্ত ভূমিকা রেখেছে এই শিল্প। তবে এখন তা অতীত।

thumbnail_IMG_20240428_143346


বিজ্ঞাপন


প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক, স্টিল, মেলামাইন, চিনামাটি, সিলভারসহ নানান ধাতব পদার্থের তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার বাড়ছে। মৃৎশিল্পের স্থান দখল করে নিচ্ছে। চাহিদার সাথে সাথে কমেছে আয়। কারিগররা তাই পেশা বদলে যুক্ত হচ্ছেন ভিন্ন পেশায়। মৃৎশিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মাটিও এখন সহজলভ্য নয়। আগে বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও এখন চড়া মূল্যে কিনতে হয়।

thumbnail_IMG_20240428_143319

তবে এতসব প্রতিকূলতার মাঝে এখনও মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন নড়াইলের পালেরা। জেলার চণ্ডীতলা, কুমারডাঙ্গা, রতডাঙ্গা, রায়গ্রাম, ছোট কালিয়াসহ অন্তত ১৫টি গ্রামে এখনও ঘুরছে কুমারদের চাকা। পাল পরিবারের প্রায় ১০ হাজারের অধিক নারী-পুরুষ যুক্ত আছেন এই শিল্পে। প্রায় পাঁচ শতাধিক কারখানায় তৈরি হচ্ছে মাটির নানান পণ্য। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পণ্য যাচ্ছে যশোর, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, ঝালকাঠিসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

thumbnail_IMG_20240428_143446


বিজ্ঞাপন


নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডীতলার নিরঞ্জন পাল ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের এখানে আগের চেয়ে মাটির কাজ করা পালের সংখ্যা কমে গেছে। এই কাজ করে আমাদের পেট চলে না। এ কারণে অনেকেই কাজ বাদ দিয়ে দেচ্ছে। আমরা খুব কষ্টে আছি। সরকার যদি সহজে লোন দিত তাহলে আমরা ব্যবসাটা বড় করতে পারতাম, আরও বেশি পণ্য উৎপাদন করতে পারতাম।

thumbnail_IMG_20240428_143404

উপজেলার তীর্থ পাল ও রবিন পাল ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে আমাদের এখানে ৪০-৫০ ঘর এই কাজ করত। এখন ১৫-২০ ঘর কাজ করে। প্রত্যেক এলাকাতেই কমে গেছে। দিনে ৫০ থেকে ৬০টা হাঁড়ি বানাতে পারলে মজুরি পড়ে ৪০০-৫০০ টাকা। এছাড়াও অন্যান্য কাজ করে সংসার চালাতে হয়। মেলামাইন, সিরামিক, প্লাস্টিক, স্টিলের কারণে আগের চেয়ে মাটির মালের চাহিদা কম। যা আয় হয় তা দিয়ে চলে না, এজন্য কাজ করা পালের সংখ্যাও কমে গেছে। এছাড়া আগে মাটি কেনা লাগত না। এমনই পাওয়া যেত। এখন একেক ট্রাক মাটি কিনতে হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে। 

thumbnail_IMG_20240428_14184178

রায়গ্রামের কালিপদ পাল ঢাকা মেইলকে বলেন, বাপ-ঠাকুরদা এই কাজ করত। আমরও ছোটবেলায় শিখেছি। ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে এ কাজ করছি। বয়স হয়ে গেছে, আগে বেশি কাজ করতে পারতাম, এখন অল্প করি। আর আমাদের ছেলেপেলেরা এ কাজ করতে চায় না। তারা অন্য কাজে ঝুঁকতিছে৷

thumbnail_IMG_20240428_14352684

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের (বিসিক) নড়াইল জেলায় দায়িত্বরত উপ-ব্যবস্থাপক ইন্জিনিয়ার মো. সোলাইমান হোসেন পালদের সার্বিক অবস্থা নিয়ে ঢাকা মেইলকে বলেন, নড়াইলে মৃৎশিল্পের কাজ যারা করে তাদের পণ্য জেলার বাইরেও অবস্থান করে নিয়েছে। তাদের এই পণ্যের আরও বেশি প্রসারে বিসিক কাজ করবে। পালদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তাও দেবে বিসিক।

thumbnail_IMG_20240428_143332

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর