শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নিরালায় পড়ে আছে কক্স সাহেবের সেই বাংলো

তাহজীবুল আনাম
প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২২, ০৭:৪১ এএম

শেয়ার করুন:

নিরালায় পড়ে আছে কক্স সাহেবের সেই বাংলো
ছবি: ঢাকা মেইল

কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর গ্রামে নিরালায় পড়ে আছে ইতিহাস বিজড়িত একটি বাংলো। শোনা যায়, আজ থেকে ২২২ বছর আগে ইংরেজ ক্যাপ্টেন ‘হিরাম কক্স’ নির্মাণ করেছিলেন বাংলোটি। যার নামের সাথে বাজার যুক্ত হয়ে এই কক্সবাজার জেলার নামকরণ হয়। তখনকার সময়ে এই বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল ইট কংক্রিট ও টিনের ছাউনি দিয়ে।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, ১৭৮৪ সালের দিকে আরাকান দখল করে নিয়েছিলেন বার্মার রাজা বোধাপায়া। রাজার আক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রায় ১৩ হাজার আরাকানি আশ্রয় নেয় পালংকীতে (কক্সবাজারের প্রাচীন নাম)। সমুদ্র ও জঙ্গলঘেরা পালংকীতে আশ্রিত লোকজনকে পুনর্বাসনের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সকে সেখানে নিয়োগ দিয়েছিল। হিরাম কক্স পালংকী এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন একটি বাজার। প্রথম প্রথম এ বাজার ‘কক্স সাহেবের বাজার’ নামে পরিচিত ছিল। পর্যায়ক্রমে ‘কক্স-বাজার’ এবং ‘কক্সবাজার’ নামের উৎপত্তি ঘটে। আরও আগে  জায়গাটি  ‘প্যানোয়া’ নামেও পরিচিত ছিল। ‘প্যানোয়া’ শব্দের অর্থ ‘হলুদ ফুল’। তখন কক্সবাজার হলুদ ফুলের রাজ্যে ছেয়ে ছিল।


বিজ্ঞাপন


হিরাম কক্স দায়িত্ব নিয়েছিলেন শরণার্থী পুনর্বাসনের। তার জন্য রামুতে নির্মিত হয় এই বাংলো বাড়ি। ১৭৯৯ সালে এখানেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ক্যাপ্টেন কক্সের মৃত্যু হয়। তার মরদেহ নেওয়ার জন্য চকরিয়ার মেধাকচ্ছপিয়া এলাকার বড়খালে জাহাজ নিয়ে এসেছিলেন কক্স সাহেবের স্ত্রী ম্যাডাম কক্স পিয়ার। ‘ম্যাডাম কক্স পিয়ার’ লোকমুখে হয়ে যায় ‘মেধাকচ্ছপিয়া’। এখন মেধাকচ্ছপিয়া দেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান।

কক্সবাজার শহর থেকে রামুর ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের বাংলোবাড়ির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। সরেজমিনে দেখা গেল, এখানে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বদিউজ্জামান( ৫৬) নামে এক বৃদ্ধ এই বাংলো পাহারা দিচ্ছেন।
coxs banglo
কথা হয় বাংলো পাহারাদার বদিউজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই বাড়িটি ২২২ বছর আগে তৈরি করেছিলেন ইংরেজ ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স। যার নামে এখন এই কক্সবাজার জেলা। এই বাড়ির সাথে তৎকালীন ব্রিটিশ আমলের ঐতিহাসিক ঘটনার সংযোগ আছে, যদিও সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো স্মৃতিফলক নেই। বাংলোটি ‘জেলা পরিষদ বাংলো’ নামেও পরিচিত।

বদিউজ্জামান আরও জানান, দুই ঘরের এই বাংলোতে আছে ব্রিটিশ আমলের একটি খাট, চেয়ার-টেবিল। এই বাংলোয় কেউ রাত যাপন করতে চাইলে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য রাত প্রতি ২০০ টাকা আর পর্যটকদের জন্য ৪০০ টাকা দিতে হয়।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটিজ ফোরাম এর সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ২২২ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক বাংলোটি অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। বাংলোর ছাউনি পরিবর্তন ছাড়া এ পর্যন্ত ঘরের সংস্কার হয়নি। টাঙানো নেই হিরাম কক্সকে নিয়ে কোনো সাইনবোর্ড কিংবা স্মৃতিফলক। বাংলোটি ‘হিরাম কক্স এর বাংলোবাড়ি’ হিসেবে খ্যাত হলে রামুর পর্যটনে যোগ হবে নতুন মাত্রা।

এ নিয়ে কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী বলেন, যার নামে আজকের এই কক্সবাজারের নামকরণ সেই ইংরেজ ক্যাপটেন হিরাম কক্স এই বাংলোতে থাকতেন। বাংলোটি অনেক বছরের পুরনো। এটির দেখভাল জেলা পরিষদ থেকে করা হয়। সম্প্রতি বাংলোর বিভিন্ন অবকাঠামো সংস্কারসহ বাংলোর ভিতর একটি  টয়লেট, খাট ও সোফা সংযুক্ত করা হয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, এই বাংলোর ঐতিহ্য ও ইতিহাস ধরে রাখতে এবং পর্যটক আকর্ষণে আরও কিছু সাজসজ্জার প্রয়োজন আছে। ক্রমান্বয়ে এসব কাজ করা হবে৷

এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর