সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

সেশনজটে ‘বিসিএস’ স্বপ্নভঙ্গ ববির এক হাজার ত্রিশ শিক্ষার্থীর

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ববি
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

সেশনজটে ‘বিসিএস’ স্বপ্নভঙ্গ ববির এক হাজার ত্রিশ শিক্ষার্থীর

বাবা-মা অনেক কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছে। পাঁচ বছর শেষ, ছয় বছর চলছে এখনো অর্নাস শেষ হয়নি, জানিনা কবে শেষ হবে। বিভাগের বর্তমান যে অবস্থা তাতে এ বছরও শেষ হবে বলে মনে হয় না। একসঙ্গে ভর্তি হয়ে অন্যবিভাগের বন্ধুরা বিসিএস সহ অনেক চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে। কিন্তু আমরা পারছি না। এখন বুঝি মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?

এভাবে আক্ষেপ করছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের আরমান (ছদ্মনাম)৷ তিনি বলেন, এসব সমস্যার মূলে রয়েছে, শ্রেণীকক্ষ সংকট, শিক্ষকদের উদাসীনতা, শিক্ষক রাজনীতি,নির্দিষ্ট একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকাসহ একাধিক কারণ। 


বিজ্ঞাপন


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদে ২৫টি বিভাগের মধ্যে সেশনজটের কারণে ১৫টি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক হাজারে ত্রিশ শিক্ষার্থী ৪৬তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। অন্যদিকে, সেশনজটমুক্ত হওয়ায় ৯টি বিভাগের চারশত তেতত্রিশ শিক্ষার্থী অ্যাপিয়ার্ড দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। আগামী শুক্রবার সারা বাংলাদেশে ৪৬ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে৷

জানা যায়, ওই শিক্ষাবর্ষের ২৪টি বিভাগের এক হাজারের অধিক শিক্ষার্থী সেশনজটের কবলে পড়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান। আবার অনেক বিভাগের কবে নাগাদ অনার্সের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে সেটা নিশ্চিত নয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, সেশনজটের কারণে বিসিএস সহ অনেক সরকারি চাকরি থেকে পিছিয়ে পড়েছেন তারা। মাত্র ৯টি বিভাগ স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করতে পারলেও বাকি বিভাগগুলো  শিক্ষকদের গাফিলতি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন আচরণের জন্য অন্যদের এমন সেশনজট তৈরি হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ৬টি বিভাগের মধ্যে ৪টি (সিএসই, গণিত, রসায়ন, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা ) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কারণে বিসিএসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। অন্যদিকে, পদার্থবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পেরেছেন। 


বিজ্ঞাপন


জীব বিজ্ঞান অনুষদের ৪টি বিভাগের মধ্যে একটি  (কোস্টাল স্টাডিস এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট )বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। অন্যদিকে, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ৪টি বিভাগের প্রত্যেকটিতে সেশনজট রয়েছে। চারটি (মার্কেটিং, ম্যানেজম্যান্ট স্টাডিজ, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ফিন্যাস এন্ড ব্যাংকিং) বিভাগের ২০১৮-১৯শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৬টি বিভাগের মধ্যে  গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ছাড়া ৪টি (অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোক প্রশাসন) বিভাগে সেশনজট তীব্র আকার ধারণ করেছে৷ তন্মধ্যে সমাজবিজ্ঞান বাদে বাকিসবগুলো বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে সেটা অনিশ্চিত৷ অন্যদিকে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হওয়া সমাজকর্ম বিভাগের কোন ব্যাচ বের হয়নি।

কলা ও মানবিক অনুষদের চারটি বিভাগের দুটিতে জট রয়েছে। এ কারণে ইংরেজি ও বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিসিএস আবেদন করতে পারেননি। এই অনুষদের দর্শন ও ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের শিক্ষার্থীরাই বিসিএস আবেদন করতে পেরেছেন৷ আইন অনুষদের আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা চারমাসে সেমিষ্টার শেষ করে  বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। 

এ প্রতিবেদনে নিয়েবিশ্ববিদ্যালয়টির ছয়টি অনুষদের  ১০ জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা জানান, ছয়মাসের সেমিস্টার শেষ করতে সময় লাগে নয় মাস আবার কখনো কখনো দশ মাসও। এরপর ফলাফল ঘোষণা করতে সময় লাগে আবার ছয় মাস। এক্ষেত্রে তারা শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও প্রশাসনের তদারকি অভাবকে সেশনজটের মূল কারণ হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, এক বিভাগ পারলে অন্য বিভাগ কেন পারবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের চেয়ারম্যান ও কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন মো. তানভীর কায়ছার বলেন, করোনার সময়ের জন্য অনেক বিভাগ একটু পেছানো ছিল৷ আগামী দেড়মাসের মধ্যে আমাদের বিভাগের (ইংরেজী) অনার্স ফাইনালের পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ অনুনষদভূক্ত  অন্য বিভাগ বিসিএস আবেদন করতে পারি নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,না জেনে মন্তব্য করব না৷  বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে বলতে পারবো৷

এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. মো. শফিউল আলম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট তো দীর্ঘদিন ধরে চলছে আসছে৷ বর্তমানে সেটা অনেকাংশ কমে আসছে৷ সেমিষ্টারে যে বিভাগগুলো সেগুলো একটু পিছিয়ে যাচ্ছে৷ একটু সময় লাগবে৷ অভ্যন্তরীণ দ্বিতীয় পরিক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়ণ বাস্তবায়ন হলে সেশনজট শূন্যের কোটায় নামবে বলে অবশাবাদ ব্যক্ত করেন৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি,বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হলো, ডিনদের সঙ্গে আলোচনা করে বলতে পারবো। 

আরও পড়ুন

ববি হলে থাকতে পারবে না অছাত্র-বহিরাগতরা

প্রতিনিধি/একেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর