শেরপুরর সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি কানন মিয়াকে (২৫) গ্রেফতার করেছে র্যাব ১৪।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে গ্রেফতার আসামি কাননকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে সোমবার সকালে র্যাব সদস্যরা ঢাকার মোহাম্মদপুরের উত্তরা ব্যাংকের সামনে অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে নালিতাবাড়ী থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন।
বিজ্ঞাপন
র্যাব-১৪ (সিপিসি-১) জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর আবরার ফয়সাল সাদী এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতার কানন মিয়া উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নের মরিচপুরান মধ্যপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
র্যাব জানায়, ভুক্তভোগীর বাবা পেশায় রিকশাচালক। জীবিকার তাগিদে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে গাজিপুর চৌরাস্তায় বাস করেন। তার ছোট মেয়ে ভুক্তভোগীকে একই এলাকায় বিবাহ দেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে সন্তানও জন্মগ্রহণ করে। আর সংসারের হাল ধরতে ৯ মাস আগে ভুক্তভোগীর স্বামী মালয়েশিয়ায় যান। এদিকে স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর হতে ভুক্তভোগী তার সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। এমতাবস্থায় আসামি রাজিবের সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সম্পর্কের জেরে আসামি রাজিব অপর আসামি কানন মিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে ভুক্তভোগীর শ্বশুর বাড়িতে দেখা করতে আসেন। গত বছরের ১১ আগস্ট তারিখ রাত সাড়ে এগারোটার দিকে শ্বশুর বাড়ির টিনের দু’চালা বসতঘরের মেঝেতে আসামি রাজিব ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন।
এ সময় অপর আসামি কানন মিয়া সুকৌশলে ঘরে ঢুকে তাদের নগ্ন ভিডিও চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। ওই ভিডিও চিত্র আসামি কানন মিয়া প্রধান আসামি রাব্বির মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেন। এরপর হতে আসামি রাব্বি ও আসামি কানন মিয়া দু’জনেই ভুক্তভোগীকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদানসহ কুপ্রস্তাব দিতে থাকেন। তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি না হয়ে ভুক্তভোগী তার সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। গত বছরের ১০ নভেম্বর ছেলে সন্তানটি হঠাৎ মারা গেলে ভুক্তভোগীসহ সকলেই তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে থাকাবস্থায় আসামি রাব্বি ও আসামি কানন মিয়া ভুক্তভোগীকে আগের ধারণ ভিডিও চিত্র দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দিতে থাকেন।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার দিন গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বেলা ৩টার দিকে আসামি কানন মিয়া ফোন করে বলেন, তাদের মোবাইল থাকা পূর্বে ধারণ করা অশ্লীল ভিডিও চিত্র ভুক্তভোগীর সামনে ডিলিট করে দেওয়া হবে। তাই তাকে আসামি রাব্বির বাড়িতে আসতে হবে। সরল বিশ্বাসে কানন মিয়ার কথামতো রাব্বির বসতঘরে গেল ভুক্তভোগীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে দু’জনেই পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এই দৃশ্য আবার আসামি কানন মিয়া তার মোবাইলে ধারণ করেন।
এ বিষয়ে কাউকে কোনো কিছু না বলার জন্য বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ছেড়ে দেয় তাকে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর অশ্লীল ভিডিও চিত্র আসামিরা এলাকার বিভিন্ন লোকের মোবাইলে ছড়িয়ে দিলে বাদীর ছোট ভাই নূরুল আমিন ওই ভিডিও চিত্রটি দেখেন। পরে ঘটনা জানালে ভুক্তভোগীর বাবা এ নিয়ে নালিতাবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ঘটনার পর থেকে এই আসামি গ্রেফতার এড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন।
এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-১৪ (সিপিসি-১) জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর আবরার ফয়সাল সাদীর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল সোমবার সকালে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন উত্তরা ব্যাংকের সামনে অভিযান পরিচালনা করে মামলার অন্যতম আসামি কানন মিয়াকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। অপরাধ দমনে র্যাবের এমন অভিযান অব্যহত থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
প্রতিনিধি/এসএস

