মাঠের পর মাঠ ধানের আবাদ, মাঝেমধ্যে কয়েকটা বাড়ি বা বাজার; আবার ধানের ক্ষেত... মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে আঁকাবাঁকা পথ। গাছ বলতে ছোট, মাঝারি বিভিন্ন আকারের আম গাছ আর লম্বা ইউক্যালিপটাস গাছই বেশি চোখে পড়ে এই এলাকায়। যেহেতু ছায়াদায়ক গাছ বেশি নেই তাই রোদের প্রকোপ বেশিই থাকে এখানে।
বলছিলাম শীতকালে বেশি শীত, আবার গরম কালে বেশি গরমের এলাকা উত্তরবঙ্গের জেলা নওগাঁর কথা। এই জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে নিশ্চিন্ত ও আরামদায়ক আবাসন হলো মাটির বাড়ি। দেখতে অতটা সুন্দর না হলেও মাটি দিয়ে তৈরি দোতলা এই বাড়িগুলো এসব এলাকার মানুষের কাছে অট্টালিকাসম।
শীতের প্রকোপ ঠেকাতে এই ঘরের জুড়ি নেই, আবার তাপপ্রবাহের মধ্যেও এই ঘর ‘গরীবের এসি’র মতোই। যদিও এখন এ ধরণের বাড়ির সংখ্যা কমতে বসেছে। তবে নওগাঁ জেলার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল— মাটির বাড়িতে থাকেন বলে যে তারা অর্থনৈতিকভাবে গরীব, সবার ক্ষেত্রে তেমন নয়। এ ধরণের বাড়ি বানাতেও খরচ নেহায়েৎ কম নয়। অনেকের পাকা বাড়ি (দালান) করার সামর্থ্য থাকলেও তা করেন না। কারণ, ‘মাটির বাড়ির মতো শান্তি অন্য কিছুতে নেই।’
বাড়িগুলো তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে যতদূর জানা গেল, তা হলো— বিশেষ ধরণের মাটি দিয়ে গাঁথা হয় এসব বাড়ির দেয়াল। অন্যান্য সাধারণ মাটির বাড়ির মতো নয়। এগুলোর দেয়াল হয় অনেক পুরু। সঙ্গে থাকে বাঁশ বা কাঠের ব্যবহার। সাধারণত দোতলার হয়ে থাকে বাড়িগুলো। বাইরের দিক দিয়ে দেখতে অতটা সুন্দর পরিপাটি নয়। তবে ঘরের ভেতরের অংশ পাকা বাড়ির চেয়ে কম নয়। কিছু কিছু বাড়ি আছে— টিভি, ফ্রিজ, সোফা, দেওয়ালের পর্দা, মেঝেতে কার্পেটসহ আসবাবপত্রে এমনভাবে সাঁজানো, যে ভেতর থেকে দেখে কোনোভাবেই বোঝা সম্ভব নয় যে তা মাটি দিয়ে তৈরি। এ থেকে প্রমাণিতও হয় যে, অনেকের সামর্থ্য থাকা সত্বেও মাটির বাড়িতেই থাকেন।
বছরের পর বছর ধরে এসব বাড়ি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যও বহন করে আসছে। যারা মাটির বাড়ি ছেড়ে পাকা বাড়িতে উঠেছেন, তাদের অনেককে আফসোস করতেও দেখা গেল। তারা জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেকে পাকা বাড়ি করেছেন ঠিকই, কিন্তু ‘মাটির বাড়ির মতো শান্তিটা এখানে মেলে না।’
কৃষিপ্রধান এসব অঞ্চলের মানুষের কাছে মাটির বাড়ি কীভাবে জনপ্রিয় হলো তা জানা যায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে— বগুড়া, জয়পুরহাট, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রামগুলোতে রয়েছে মাটির দোতলা বাড়ি। স্থানীয়রা জানান, এমন কিছু মাটির বাড়ি আছে, যেগুলো বাইরের দিক থেকেও রঙ দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন করা। সেগুলো এতটাই দৃষ্টিনন্দন, দেখে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই যে সেগুলো মাটির বাড়ি নাকি পাকা বাড়ি।
বিজ্ঞাপন
এএ