শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ধানের দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষক

আমীর হামজা
প্রকাশিত: ১২ মে ২০২২, ০৯:৪৯ এএম

শেয়ার করুন:

ধানের দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষক
ছবি : ঢাকা মেইল

চলতি বোরো মৌসুমে ধানের দাম না পাওয়া হতাশ হবিগঞ্জের কৃষকরা। সাড়ে ৬০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা মণে ধান কিনছেন পাইকাররা। কৃষকদের দাবি— এই দামে ধান বিক্রি করে তাদের খরচই উঠছে না।

কৃষকরা জানান, ধান লাগানো থেকে শুরু করে সার, ওষুধ, কিটনাশক বা কাটা পর্যন্ত প্রতি কেরে (২৮ শতকে ১ কের) কৃষকের খরচ হয়েছে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। ধান উৎপাদন হয়েছে ১৫ থেকে ১৭ মণ। এখন তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা মণে। সেই হিসেবে প্রতি কেরে কৃষককে লোকসান গুণতে হচ্ছে ১ হাজর থেকে ৩ হাজার টাকা। একই সঙ্গে পরিবারের সকলের শ্রমতো আছেই। ধানের দামের এমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হবিগঞ্জের চাষিরা। 


বিজ্ঞাপন


জেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবছর হবিগঞ্জে বোরা ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬২ শতাংশ জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। বাকি ধান চলতি মে মাসের মধ্যে ঘরে তুলতে পারবেন সাধারণ কৃষক। 

এদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপতর সূত্রে জানা যায়, এবার হবিগঞ্জে সরকারিভাবে ১৬ হাজার ২০৬ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে। যার প্রতিমণ ১ হাজার ৮০ টাকা করে কিনবে সরকার। তবে সরকারিভাবে ধান ক্রয় উদ্বোধন করা হলেও এখনো পুরোদমে ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে বলে জানিয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা।

তবে বাড়তি ঝামেলার কারণে সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ নেই সাধারণ কৃষকদের। তারা বলছেন, সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পুরোপুরি শুকিয়ে গুদামে নিয়ে আসতে। পরে তার যাচাই-বাছাই শেষে ধান ভালো হলে তা ক্রয় করা হয়। যদি ধানে কিছুটাও চিটা থাকে সে ধান আর ক্রয় করেন না খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এতে উল্টো কৃষকের যাতায়াত ও শ্রমিক খরচ নিজের ঘাড়ে পড়ছে।

লাখাইয়ের বুল্লা গ্রামের কৃষক মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, আমি প্রায় ২০ কের জমিতে ধান চাষ করেছি। কিন্তু ধানের দাম ৬ শ থেকে ৭ শ টাকা। বর্তমানে একজন দিনমজুরের বেতন দিতে হয় প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ শ টাকা। ধানের দাম আর আমাদের খরচের টাকা মিলে কোনোভাবেই আমাদের পুষিয়ে উঠতে পারছি না। যদি ১ হাজার থেকে ১২ শ টাকা মণে ধান বিক্রি করতে পারি তাহলে কিছুটা লাভ হবে। 


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করলেও লাভবান হতে পারবো না। কারণ সরকার ধান কিনবে ১ হাজার ৮০ টাকায় তাও আবার ধান গুদামে নিজ খরচে দিয়ে আসতে হয়। আর সরকার এই ধান বিভিন্ন পরীক্ষা করে ভালো হলে তার পর রাখে। ধানে অল্প চিটা থাকলে তা তারা রাখেন না। তাহলে সেই ধান আবার আমরা বাড়িতে ফিরত নিয়ে আসতে হয়। ফলে গুদামে নিতে যে খরচ সেটাও নিজের ঘাড়েই পড়ে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা পাইকারের কাছে ধান বিক্রি করি তাহলে পাইকাররা জমি থেকে মাড়াই দেওয়ার পর যে ধান বের হয় সেটাই ক্রয় করে। সেখানে চিটা থাকলেও তা কোনো সমস্য হয় না। আমরা গ্রামের মধ্যে ধান শুকাই সেখানে কিছুটা চিটা থাকবেই। যে কারণে আমরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে রাজি হই না। এতে আমাদের অনেক পরিশ্রম এবং খরচ দুটিই কম হয়।

পূর্ব বুল্লা গ্রামের কৃষক জাহির উদ্দিন বলেন, প্রায় ২০ কের জমিতে ধান চাষ করেছি। এতে আমার প্রতি কেরে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। খরচের অনুপাতে আমার ভালো ফসল হয়নি। অন্য বছর থেকে এবার প্রতি কেরে ৫ থেকে ৭ মণ ধান কম হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্রি-২৮ জাতের ধানও অনেক নষ্ট হয়েছে, যা অকল্পনীয়। এছাড়া এবার ধানের দামও কম। আমার যে ফলন হয়েছে তা ৮ শ টাকা মণ এমনিতেই খরচ হয়েছে। আমি একটা হিসাব করে দেখেছি- প্রতি কেরে প্রায় ৫ হাজার টাকা করে লোকশান হবে। এবার যদি ধানের দাম ১ হাজার টাকা থাকতো তাহলে কিছুটা লাভবান হতে পারতাম। 

মিয়া ধন নামের আরও এক কৃষক বলেন, আমি ১০ কের জমিতে ধান করেছি। এবার ধানের ভালো ফলন হয়নি। অনেক ধান নষ্ঠ হয়ে গেছে। যে জমিতে ধান হওয়ার কথা কের প্রতি ১৭ মণ সেখানে হয়েছে ১০ মণ। এর মধ্যে ধানের দামও কম। আমি কিস্তি তুলে জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। এখন ঋণ কোথা থেকে পরিশোধ করবো আর নিজেই কি খাবো কিছু বুঝতে পারছি না। 

কিরান দাস বলেন, এবার ধানের ফলন ভালো হয়নি। ধানের মধ্যে ২ থেকে ৩ জাতের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। একটি বীজ থেকে আর অন্যটি পোকায় নষ্ঠ করেছে। তিনবার চারবার ওষুধ দিয়েও লাভ হয়নি। আর ধানের দাম কম হওয়াতে আমার প্রতি কেরে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লোকশান গুনতে হবে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদফতরের কর্মকর্তা চাই থোয়াই প্রু মার্মা বলেন, ইতোমধ্যে ধান সংগ্রহের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। ঈদের ছুটির কারণে ধান সংগ্রহ করতে বিছুটা বিলম্ব হয়েছে। এখন থেকে আবার পুরোদমে ধান সংগ্রহ শুরু হবে।

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর