রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

মানসিকভাবে অসুস্থ নুর আলম ৭ বছর ধরে শিকলবন্দী, হচ্ছে না চিকিৎসা

জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৪, ১০:০১ এএম

শেয়ার করুন:

মানসিকভাবে অসুস্থ নুর আলম ৭ বছর ধরে শিকলবন্দী, হচ্ছে না চিকিৎসা

প্রায় সাত বছর ধরে শিকলবন্দী জীবন কাটছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সর্দারপাড়া গ্রামের নূর আলমের (৪০)। শিকল খুলে দিলে অন্যের ক্ষতি করে তাই মানসিক ভারসাম্যহীন নুর আলমকে একটি জরাজীর্ণ ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

বর্তমানে পরিবারটির আর্থিক দৈন্যতার কারণে তার চিকিৎসাও হচ্ছে না। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা তাকে শিকলের মধ্যে আটকে থাকতে হচ্ছে। সংসার জীবনে হয়েছেন ৩ মেয়ে ও এক ছেলের বাবা তিনি। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বর্তমানে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় ৭ বছর ধরে পায়ে শিকল আর ছোট ছাউনির ভেতরে পুরো দুনিয়ার স্বাদ পেতে হয় তাকে। শিকলবন্দি জীবন অতিবাহিত করছেন। অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা! মা ও সন্তান নিয়ে দিশেহারা পরিবার।


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে দেখা গেছে, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সর্দারপাড়া গ্রামের মৃত হকিকুল ইসলামের ছেলে নূর আলম। স্বামী হারানোর পর সন্তানের এমন দুরবস্থায় নাতি-নাতনিদের নিয়ে শ্রমিকের কাজ ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে পরিবার পরিচালনা করছেন মা নূর নেহার। শিকলবন্দী দশায় মানবেতর জীবন যাপন করছে নূর আলম।

thumbnail_VideoCapture_20240329-142236

জানা গেছে, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান নূর আলম। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে একটা সময় তেঁতুলিয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মহানন্দা নদীতে নুড়ি পাথর উত্তোলনের কাজ করতেন। তবে হাসিখুশি সেই ছোট্ট সংসারে কালবৈশাখী ঝড়ের মতো নেমে আসে অন্ধকার। পাথর উত্তোলনের মাঝে সীমান্ত অতিক্রম করায় আটক হয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে। এতে ৩ বছরের বেশি সময় ভারতে কারাবন্দি জীবন কাটিয়েছেন তিনি। বন্দি দশা থেকে দেশে ফিরলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আবারও নিজ বাড়িতে ৭ বছর ধরে শিকলবন্দী জীবন কাটাচ্ছেন নূর আলম।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানায়, চোখের আড়াল হলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন নূর আলম। এর মাঝে কোনো কারণ ছাড়াই স্থানীয়দের ওপর হামলার করেন তিনি। এতে করে ছেলের এমন স্বভাবে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে শিকলবন্দী করে রাখেন বৃদ্ধ মা নূর নেহার।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_VideoCapture_20240329-142248

নুর আলমের বৃদ্ধা মা নুর নেহার বলেন, আমার ছেলে নুর আলম আগে সুস্থ ছিল। মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে বিএসএফের কাছে আটক হয়। পরে তাকে ভারতে কারাগারে নিয়ে বন্দি করে রাখে৷ পরে বাড়িতে ফেরার পর সে আবোল তাবোল কথা বলতে থাকে। পরে এক পর্যায় পাগল হয়ে যায়৷ তার পেছনে অনেক টাাকা খরচ করেছি কিন্তু সুস্থ করতে পারিনি। সে একটু উদ্ভট ও বদমেজাজি টাইপের। সে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যায়। পরে বাইরের মানুষ, এমনকি আমাদের মারধর করে৷ মানুষ অভিযোগও করে। তাই সাত বছর ধরে তাকে ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে৷

তিনি আরও বলেন, আমি বৃদ্ধা মানুষ। আমি মানুষের বাসায় কাজ করে আমার ছেলে ও তার সন্তানদের কোনোরকম খাওয়াই বেঁচে রেখেছি। আমার কাছে কোনো টাকা-পয়সা নেই যে আমার ছেলের ভালো চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করাব। তাই বাধ্য হয়ে আমার সন্তানকে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। সন্তানের এমন করুণ পরিণতি ও মানবতের জীবন যাপন দেখে আর সহ্য করতে পারছি না৷ তাই আমি আমার সন্তানের চিকিৎসার জন্য সরকার ও সমাজের সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।

thumbnail_VideoCapture_20240329-142709

এদিকে স্থানীয় স্কুলশিক্ষক ও সামাজিক সংগঠক ফেরদৌস আলম লিটন বলেন, আমার পাশের গ্রামের বাসিন্দা নুর আলম। সে দীর্ঘ সাত বছর ধরে শিকল বন্দি জীবন যাপন করছে। তার মা ও সন্তানর ও মানবতার জীবনযাপন করছে খেয়ে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না তার মা৷ তাই সরকার কিংবা সমাজের বিত্তবানরা যদি মানসিক ভারসাম্যহীন  নুর আলমের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো তাহলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।

thumbnail_VideoCapture_20240329-142250

একই কথা বলেন নুর আলমের প্রতিবেশী ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন নুর আলম আগে সুস্থ ছিল। পাথর তুলতে গিয়ে ভারতে আটকা পড়ে বাড়িতে ফেরার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা এলাকাবাসীরা অনেক সহযোগিতা করেছি কিন্তু তার চিকিৎসার জন্য অনেক মোটা অঙ্কের টাকা প্রয়োজন। তার মা গরিব মানুষ, মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। তাই সরকার যদি একটি সহযোগিতা করে তাহলে হয়তোবা নুর আলম সুস্থ হয়ে উঠবে

দারিদ্র পরিবারটির পাশে থেকে চিকিৎসার সহায়তা করার কথা জানান তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, নুর আলম মানসিক ভারসাম্যহীন, সে দীর্ঘ দিন ধরে শিকলে বাধা বন্ধু জীবন যাপন করছে সেটা আমরা জানি। মূলত তিনি মানুষের উপর চড়াও ও মারধর করে বলে তাকে বেঁধে রাখা হয় এমনটি শুনেছি। তার পারিবারিকভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হলেও সেই সে চিকিৎসার যথাযোগ্য হয়নি বলে আমি মনে করি৷ তার বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা চেষ্টা করব উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসার ব্যবস্থার বিষয়ে সহযোগিতা করার।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর