মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ব্যবহারিকে নম্বর দেওয়ার নামে টাকা নেন কলেজ শিক্ষক জাকির!

জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১০:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

ব্যবহারিকে নম্বর দেওয়ার নামে টাকা নেন কলেজ শিক্ষক জাকির!

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সরকারি আকবর আলী কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর দেওয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তিনি কলেজের শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করে ক্লাস টাইমে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২৪ মার্চ) সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক, উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরকারি আকবর আলী কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর এমন একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।


বিজ্ঞাপন


অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৪তম বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডার জাকির হোসেন ২০০৫ সালের জুলাই মাসে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদান দেন। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে একই কর্মস্থলে কর্মরত থাকায় জাকির হোসেন কলেজ ঘিরে তৈরি করেছেন নিজস্ব বলয়, বাগিয়ে নিয়েছেন কলেজ শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদটিও। সেই বলয় ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেই কলেজে ক্লাস চলাকালীন সময়ে তিনি প্রাইভেট পড়ান এবং নানাভাবে শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করান। ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয়ে বাধ্যমূলক তার নিকট প্রাইভেট পড়েন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন যাবত এটি হয়ে আসছে মর্মে শিক্ষার্থীরা ইতোপূর্বে লিখিত অভিযোগ কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ বরাবর দিয়েছিলেন, কিন্তু এর কোনো সমাধান মেলেনি।

উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী কলেজের গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাসুদ রানা পাপ্পু, মারুফ সিদ্দিক, সাজ্জাদ হোসেন খান, মো. রাব্বি, অনন্ত রানাসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক জাকির হোসেন এখনো অর্নাস ১ম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজ চলাকালীন সময়ে ক্লাসে বসে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন এবং তার জন্য টাকাও নিচ্ছেন। এছাড়াও তিনি অর্নাস ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষার মার্ক দেওয়ায় কথা বলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা করে নিয়েছেন, যা নিয়মবহির্ভূত ও অবৈধ।

অভিযোগে শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করে বলেন, আমাদের জানামতে সরকারি পরিপত্রে ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য ১৫০ টাকার বেশি নেওয়ার নিয়ম নেই, অথচ তিনি প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে ব্যবহার পরীক্ষার নামে ৫০০ থেকে ৮০০ করে টাকা নিচ্ছেন। তার দাবিকৃত এ টাকা না দিলে তিনি আমাদের ফেল করানোর ভয় দেখান। বিষয়গুলো আমরা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অধ্যক্ষ বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছি। অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্ত শিক্ষক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বিকেলে উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী কলেজের অধ্যক্ষ (চলতি দায়িত্ব) প্রফেসর মঞ্জুর মোর্শেদ ভুইয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা একটি লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী বরাবর দাখিল করেছে। পরবর্তীতে তারা সোমবার আমার বরাবর একটি অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আমি অভিযোগটি গ্রহণ না করে শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামসহ সিনিয়র শিক্ষকদের দায়িত্ব দিয়েছিলাম বিষয়টি সমাধান করার জন্য। সে মোতাবেক তারা অভিযোগকারীগণসহ অভিযুক্ত শিক্ষককে নিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছেন।


বিজ্ঞাপন


এ বিষয়ে অভিযুক্ত উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক মো. জাকির হোসেন অভিযোগের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

এদিকে এ বিষয়ে জানতে উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিবার কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) বিকেলে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা সুলতানা বলেন, অভিযোগের কপিটি হাতে পেয়েছি। বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিনিধি/এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর