মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

৩০০ বছর দাঁড়িয়ে আছে মোঘল আমলের উলচাপাড়া শাহী মসজিদ

আশিকুর রহমান মিঠু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

৩০০ বছর দাঁড়িয়ে আছে মোঘল আমলের উলচাপাড়া শাহী মসজিদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর থেকে মাত্র ২০ মিনিট সময়ের দূরত্ব উলচাপাড়া গ্রাম। জেলার সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নে এই গ্রামটির অবস্থান। এই গ্রামে প্রায় ৩০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে পুরাতন এক মসজিদ। এই মসজিদটিকে স্থানীয়রা চেনেন উলচাপাড়া শাহী মসজিদ হিসেবে। আবার অনেকে চিনেন মোঘল আমলের মসজিদ হিসেবে।

এই মসজিদের সঠিক ইতিহাস জানেন না কেউ। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা এই মসজিদ তৈরির ইতিহাস জানেন একরকম, অনুমান নির্ভর এই ইতিহাস তা তারা শুনে ছিলেন তাদের পূর্বপুরুষ থেকে। কেউ বলছেন মসজিদটি কল্পকাহিনির মতো রাতারাতি তৈরি হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


thumbnail_1710566562781

সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদটির প্রবেশদ্বারের আগে এক কোনায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি সাইনবোর্ড লাগানো। মসজিদের পূর্ব পাশেই রয়েছে লম্বা টিনের ঘর। প্রধান গম্বুজের কেন্দ্র থেকে মসজিদের ভিতরের দেওয়ালে নিচ পর্যন্ত কারুকাজ করা আছে। ঘরটিতে বসবাস করেন মসজিদের ইমাম। মসজিদের ভেতরে ৪০ জন ও বাইরে শতাধিক মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের ভেতরে লোক সংকুলান হয় না, তাই বাইরে অস্থায়ী পর্দা দিয়ে নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সূত্র মতে, লাল রঙের প্রাচীন এই মসজিদটির আয়তন দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট ও প্রস্থ ২২ ফুট এবং এর দেওয়াল ৪ ফুট পুরু। এর মাঝে একটি বড় গম্বুজ ও দুইপাশে দুইটি মধ্যম আকারের গম্বুজ রয়েছে।

thumbnail_IMG_20240315_160956


বিজ্ঞাপন


এই মসজিদে গত প্রায় দুই যুগ ধরে ইমামতি করছেন হাফেজ মাওলানা ওবায়দুল্লাহ। তিনি ঢাকা মেইলকে জানান, মসজিদের সঠিক ইতিহাস কারো জানা নেই। তবে মসজিদের মূল দরজার ওপরে একটি শ্বেত পাথরে ফারসি অক্ষরে লেখা আছে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা শাহ সৈয়দ মাহমুদ মুরাদের নাম এবং প্রতিষ্ঠাকাল লেখা ১১৪৩ হিজরি। এর থেকে বুঝা যায়, মসজিদ প্রতিষ্ঠা হয়েছে ৩শ বছর আগে।

তিনি আরও জানান, মসজিদ নির্মাণের প্রায় দুইশত বছর পর মসজিদের বারান্দাটি তৈরি করা হয়। মসজিদের রঙ ও কাঠামো প্রতিষ্ঠাকাল থেকে যেমন ছিল তেমনই আছে ও মসজিদের পশ্চিম দক্ষিণ কোনায় মসজিদের রঙের অনেক পুরাতন একটি কবর আছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, কবরটি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা শাহ সৈয়দ মাহমুদ মুরাদের।

thumbnail_IMG_20240315_161044

এই মসজিদের মুতাওয়াল্লীর দায়িত্বে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন। তিনি জানান, এই মসজিদের লিখিত কোনো ইতিহাস নাই। আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষ থেকে যা শুনে আসছি, তা বলতে পারব শুধু। তারা জানিয়েছিলেন, একজন ইয়ামেনী ধর্মযাজক তার নাম মাহমুদ মুরাদ এখানে এসে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মসজিদের নিজস্ব কোনো সম্পদ না থাকায় এরপর থেকে ধাপে ধাপে এখন মসজিদটি এই গ্রামের মানুষ পরিচালনা করে আসছে। এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় করে আসছে।

thumbnail_1710566562809

তিনি আরও বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধিনে নিয়ে যাওয়ায় মসজিদটি পরিচালনা শুধু আমরা করছি। কিন্তু মসজিদটিতে আমরা কোনো সংস্কার করতে পারবো না। বেশ কয়েকবছর আগে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের লোকজন শুধু রঙ করেছিল। এছাড়া ৭/৮ বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের লোকজন একটি ওযুখানা ও একটি বাথরুম নির্মাণ করে দিয়ে গেছেন। এরপর থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কেউ আর আসেন না। বরং আমরা আটকে গেছি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কারণে।

প্রতিনিধি/টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর