শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আর কত বয়স হলে ভাতা কার্ড মিলবে রাবেয়ার

সুমন আলী
প্রকাশিত: ০৯ মে ২০২২, ১২:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

আর কত বয়স হলে ভাতা কার্ড মিলবে রাবেয়ার

বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন রাবেয়া বিবি। তার বয়স ৭০ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে নানা রোগে-শোকে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন তিনি। চিকিৎসা দূরের কথা, তিন বেলা খাবার জোটানোই তার জন্য কষ্টকর।

জীবনের শেষ সময়ে একটু স্বচ্ছলতার আশায় বয়স্ক ভাতা কার্ডের জন্য দ্বারে দ্বারে ধরণা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। তাতেও কিছু হয়নি। অভাব আর অনটনের চাপে বর্তমানে অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন এই বয়স্ক নারী।


বিজ্ঞাপন


রাবেয়া বিবির বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চন্ডিপুর ঘনপাড়া গ্রামে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১৯৫২ সালের ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনিম্ন ৬২, আর পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী রাবেয়া বিবির বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও এত দিনেও কেউ তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসেননি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রাবেয়া বিবির স্বামী লোকমান হোসেন মারা গেছেন অনেক আগে। সহায়-সম্পদ বলতে স্বামীর রেখে যাওয়া সামান্য একটু জমি ছাড়া তার তেমন কিছু নেই। সংসারজীবনে তিন ছেলের মা রাবেয়া বিবি। তারাও অসহায়। দিনমজুরের কাজ করে নিজেদের সংসার সামলাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তাই বাবার রেখে যাওয়া সামান্য একটু জমিতে মাথা গোঁজার মতো একটি বাড়ি নির্মাণ করার মতো সামর্থও নেই তাদের।

অভাব আর অনটনের চাপে রাবেয়া বিবি বর্তমানে অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। ভিক্ষা করে দুবেলা দুমুঠো অন্ন জোগাড় করে কোনোমতে বেঁচে আছেন। প্রতিবেশীরা ফেতরা ও অন্যান্য মানুষের সহযোগিতা নিয়ে কয়েকটি টিন কিনে একটি কুঁড়ে ঘর তৈরি করে দিয়েছেন রাবেয়ার থাকার জন্য। কিন্তু বৃষ্টির সময় সেই ঘরের মধ্যে পানি পড়ে। তাই সেখানে বসবাস করা অনেকটাই কষ্টকর। আবার ঝড়ের পর বাতাসে উড়ে যাওয়া টিনগুলো কুড়িয়ে এনে আবার রাবেয়াকে রাতে থাকার জন্য ঘর তৈরি করে দিতে হয়। এভাবেই চলছে রাবেয়ার জীবনযাপন।

স্থানীয়রা জানান, রাবেয়া বিবি স্বামীকে হারিয়েছে অনেক আগেই। এরপর ৩ সন্তানকে বড় করতে গিয়ে আর অভাব-অনটনের করাল গ্রাসে আজ রাবেয়া অনেকটাই ভারসাম্যহীন। ঘুষ দিতে না পারার কারণে ভাগ্যে জোটেনি বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতাসহ সরকারের কোনো সুবিধা। এই মানুষটির কষ্ট আর আমাদের সহ্য হয় না। আমাদেরও সাধ্য নেই যে, তাকে একটি ঘর তৈরি করে দিবো। আমরা বহুবার মেম্বার-চেয়ারম্যানদের বলেছি কিন্তু তারা শোনে না। অথচ যাদের সবকিছুই আছে তাদেরকেই তারা সরকারের ঘর দিচ্ছেন। সরকারের যত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তারাই যারা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছের মানুষ। তাদের প্রয়োজন না থাকলেও পাচ্ছে আর বাহিরে বেশি দামে সেই সুবিধাগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন অথচ যারা পাবার যোগ্য তাদের কপালে তা জুটছে না।


বিজ্ঞাপন


রাবেয়া বিবি বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে তিন ছেলেকে মানুষ করেছি। এখন খুব কষ্টে আছি। ছেলেরাও গরীব-অসহায়। থাকার মত ভালো কোনো ঘর নেই। ঝড়-বৃষ্টিতে ঘরে পানি পড়ে। ঘরের টিন উড়ে যায়। এখন কোনো রকম ভিক্ষা করে দুই বেলা খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি। অসুস্থ হলে ঠিকমতো ওষুধ কিনে খেতে পারি না। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য অনেকবার বলেছি। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা করে দেয় না। আর কত বয়স হলে হামাক কার্ড দিবে?’

রাবেয়া বিবি আরও বলেন, ‘এখন কেউ ঘর দিলে সেখানে নামাজ পড়তাম। কোরআন শরীফ পড়তাম। রাতে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।’

এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বৃদ্ধা রাবেয়ার ঘর খুবই প্রয়োজন। ঘরের জন্য আমি তার নাম তালিকায় যুক্ত করে দিয়েছি। চুড়ান্ত অবস্থার কথা একমাত্র চেয়ারম্যানই বলতে পারবেন যে’ তার নাম চুড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে কি না।’ 

চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খুরশিদ আলম রুবেল জানান, রাবেয়ার বিষয়টি তার জানা ছিলো না। দ্রুত রাবেয়ার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তার জন্য যা যা করা সম্ভব তা করা হবে। স্বজনপ্রীতির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘আমি বৃদ্ধা রাবেয়ার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে তার বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতাসহ তার জমিতে একটি ঘর নির্মাণের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর