নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ক্রোনী অ্যাপারেলস কারখানায় ৪ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ না করেই ৫৫ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এ ঘটনায় চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও বিকেএমইএর প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগীদের পক্ষে মেহেদী হাসান নামের একজন শ্রমিক ফতুল্লা থানায় অভিযোগ দায়ের করছেন।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগীরা জানান, চলতি মাসসহ ৪ মাসের বেতন বকেয়া রেখে ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুতদের ছবিসহ তালিকা টানিয়ে দেওয়া হয় কারখানার গেটে।
এদিন সকালে চাকরিচ্যুত কর্মীরা কাশিপুর হাটখোলা এলাকায় অবস্থিত কারখানাটির সামনে অবস্থান নেয়। প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থানের পরেও বকেয়া বেতনসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সমাধান না পাওয়ায় ফিরে যান কর্মীরা। ক্রোনী অ্যাপারেলসে গত তিনমাসের এবং চলতি মাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো শ্রমিক ছাটাই ও অসন্তোষ, বিক্ষোভের ঘটনা ঘটল।
ক্রোনী অ্যাপারেলসের সিনিয়র অফিসার আফাজ হোসেন বলেন, আমাদের ৫৫ জনকে ছাটাই করে সোমবার গেইটে ছবিসহ তালিকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার আমাদের চারজনকে আলাদা আলাদা করে ডেকে নিয়ে একেকজনকে একেকভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে। অন্যদেরকে রেখে আমরা তো এভাবে ম্যানেজ হব না। এমনকি আমরা জানি, আমাদেরও কিছুদিন পরে আবারও লাথি মেরে বের করে দিবে।
তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৪ মাসের বেতন বাকি। কিন্তু তারা চাচ্ছে, আমরা যাবতীয় বকেয়া বেতন বুঝে পেয়েছি, এই মর্মে স্বাক্ষর করি। সকল শ্রমিক ফতুল্লা থানায় এসেছি অভিযোগ দায়ের করতে। গত ৩ মাস কীভাবে আমরা মানবেতর জীবন-যাপন করছি। বাড়িওয়ালা প্রতিনিয়ত ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, মহল্লার দোকানে হাজার হাজার টাকা বাকি জমে গেছে। এমন অবস্থায় অমানবিকের মত এই মালিকপক্ষ আমাদের ছাঁটাই করেছে। সমাধান না পেলে আমরা শ্রম আদালতে যাব।
বিজ্ঞাপন
কারখানার আরেক কর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের রুলস হচ্ছে কাউকে চাকরিচ্যুত করতে হলে তাকে ৩ মাসের বেতন দিতে হবে। আমরা এখানে একেকজন ৮ থেকে ১০ বছর কাজ করছি। গত ৩ মাস কেবল হরতাল, অবরোধ, নির্বাচন ইত্যাদির অজুহাত দিয়ে বেতন দেয়নি। এখন বেতন ছাড়াই ছাঁটাই করেছে তারা।
একই বিষয়ে ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানী বলেন, আমরা তাদের দেনা পাওনা পরিশোধ করব। কারখানায় মানুষ বেশি হয়ে গেলে একটু এডজাস্টমেন্ট করতেই হয়। তাদের দেনা-পাওয়া হিসেব করছি, দ্রুতই একাউন্টে দিয়ে দিব। তাদের বলা হয়েছে চলতি মাসের বেতন নিয়ে যেতে। পরবর্তীতে বাকি বেতনগুলো পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া জানান, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে চাকুরিচুত্য করা হয়েছে। একারণে শ্রমিকরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে, যা তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর ক্রোনী গ্রুপের ‘ক্রোনী টেক্স সোয়েটার লিমিটেড’ কারখানা লে অফ ঘোষণা করা হয়। এতে প্রায় ৮০০ শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়। পরবর্তীতে চলতি মাসের ৮ ফেব্রুয়ারি একই গ্রুপের ‘অবন্তি কালার টেক্স লিমিটেড’ এর শ্রমিকরা দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে।
প্রতিনিধি/এমএইচটি

