পশ্চিমের আকাশে ঢলে পড়েছে সূর্য। দোকান গোছানো শুরু করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সূর্য ডুবে মসজিদ থেকে ভেসে আসছে মাগরিবের আজানের ধ্বনি। দোকান খোলা রেখে দোকানিরা বাতি জ্বালিয়ে চলে গেলেন নামাজে। প্রতিটি দোকানের চিত্র একই রকম।
এমন দৃশ্য চোখে পড়ে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার অমরপুর ইউনিয়নের শান্তির বাজারে। এ বাজারটিতে দোকান খোলা রেখে গেলেও দোকানের কোনো মালামাল চুরি কিংবা হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা আজ অবধি ঘটেনি। অন্তত ১৫-২০ বছর ধরে এভাবেই দোকান খোলা রেখে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেন ওই বাজারের ব্যবসায়ীরা।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাগরিব ও এশার নামাজের ওয়াক্তের সময় মসজিদে আজান শুরু হলেই মুসলিম ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা রেখেই নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে চলে যান। ওই বাজারে আগত ক্রেতারাও কেনাকাটার ব্যস্ততা রেখে দিয়ে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে চলে যান।

কাঁচামাল ব্যবসসায়ী দুলাল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ১৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। তখন থেকেই সবাই মিলে দোকান খোলা রেখে সবাই একসঙ্গে নামাজে যাই। এ বাজারে কোনো কিছু চুরির ভয় নেই।
কাঁচাবাজারের ভেতরে চা ব্যবসায়ী মো. আনিছুর রহমান বলেন, নামাজের সময় আমিও দোকান খোলা রেখেই নামাজে যাই। সে সময় কোনো বিক্রেতাই থাকে না।
বিজ্ঞাপন
কাপড় ব্যবসায়ী নুরে আলম সিদ্দিক বলেন, আমাদের এই শান্তির বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৫-২০ বছর আগে। বাজার লাগানোর পর থেকেই মসজিদে আজান হলে দোকান খোলা রেখেই সবাই নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে চলে যাই। কোনোদিন কারও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

সবজি ক্রয় করতে আসা আব্বাস আলী বলেন, আমি শান্তি বাজারের নিয়মিত একজন ক্রেতা। এখানে কাচামালের যে দোকানদার আছে, তারা নামাজের সময় হলে দোকান খোলা রেখে নামাজে চলে যায়।
সবজি ক্রয় করতে আসা আরেক ক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, শান্তির বাজারে বিশেষ করে মাগরিব ও এশার নামাজের সময় কোনো দোকানিই দোকানে থাকেন না। সে জন্য আমরাও নামাজ শেষ হওয়ার পর কেনাকাটা করতে আসি।
শান্তির বাজারের জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল লতিফ বলেন, এই এলাকার মানুষ সবাই সৎ। সব দোকানদারও সৎ। যেমন শান্তি বাজার নাম তেমনি এর শান্তি যে একটা বৈশিষ্ট্য, শান্তির যে বৈচিত্র, শান্তি দিয়ে ভূমিকা সবটাই এখানে রয়ে গেছে। এ বাজারে সকল দোকানদার মসজিদে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই এ বাজারের ব্যবসায়ীরা কেনাবেচা বন্ধ করে এবং দোকান খোলা রেখেই নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে চলে আসে। অদ্যাবধি বাজারের কোনো দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেনি।

শান্তির বাজারের জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, মুদিখানা, কাপড়ের দোকান, কাঁচামাল, মিষ্টির দোকানসহ আরও নিত্য দ্রব্যের দোকানে যারা কেনাকাটা করতে আসেন মসজিদে আজান হলেই সবাই নামাজ পড়তে যান।
অমরপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আশিকুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, সকল দোকানদাররা দোকান খোলা রেখে মাগরিবের আজান হলে নামাজ আদায় করতে আসে সন্ধ্যাবেলা। নিঃসন্দেহে নামাজ পড়ে আবার যার যে ব্যবসা সে ব্যবসায় সবাই চলে যায়।এ নিয়ে আমাদের শান্তির বাজার আমরা সবাই শান্তিতে আছি।
টিবি

