শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ঢাকা

হাজার মাইলের দূরত্বে একটুও ভাটা পড়েনি আন্থি-শামীমের ভালোবাসায়

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

হাজার মাইলের দূরত্বে একটুও ভাটা পরেনি আন্থি-শামীমের ভালোবাসায়

ভালবাসার মানুষটা যত দূরে থাকে তার প্রতি ভালবাসা যেন আরও গভীর হয়। কারণ, ধরা-ছোঁয়া বিহীন এই পবিত্র সম্পর্ক দুটি মানুষকে তাদের একে অপরকে নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে শেখায়। দুজনের মাঝের দূরত্বটা তখন শুধুই একটি পরিমাপের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে পরিমাণটা নয়, ভালবাসার গভীরতাটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। বলছিলাম বাংলাদেশি তরুণ শামীম এবং সাইপ্রাসের তরুণী আন্থি তেলেবান্থুর পরিণয়ের কথা। তাদের শাশ্বত এই প্রেমের কাছে দুটি দেশের মানচিত্র যেন বড়ই অসহায়।

ছয় বছর আগে একই সঙ্গে কাজের সুবাদে পরিচয় এবং প্রেম। তারপর ঘর বাধার স্বপ্ন। বাধা ছিল দুই দেশ, ভিন্ন সংস্কৃতি। তবে সে বাধা আটকাতে পারেনি তাদের। প্রেমের টানে সুদূর সাইপ্রাসের লিমাসোল শহর থেকে ছুটে এসেছেন আন্থি এরপর বিয়ে করেন ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ার গাজীরচট মহল্লার মো. শামীম আহমেদকে।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) শামিমের আশুলিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিদেশিনী ওই বধূ ফিরে গেছেন তার দেশে এখন তার স্বামী শামীমকেও সেই দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে শামীম জানান, বিয়ের পর প্রায় মাস খানেক সংসার করে গত ২১ ডিসেম্বর নিজ দেশে ফিরে যেতে হয়েছে তার স্ত্রী আন্থিকে। এখন তিনি নিজেও সে দেশের যাবার জন্য তৈরি হচ্ছেন। সেজন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র আন্থি তার সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছেন। পাশাপাশি শামীম নিজেও বাংলাদেশে অবস্থিত সাইপ্রাসের দূতাবাসে কাগজ পত্র জমা দিয়েছেন। সেখান থেকে তাদের মাস ছয়েক সময় লাগবে বলে জানিয়েছে।

শামীম আরও জানান, স্টুন্ডেন্ট ভিসায় ২০১৫ সালে সাইপ্রাসে যান তিনি। সেখানে সিডিএ কলেজে ভর্তি হওয়ার পর লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে পার্টটাইম চাকরি নেয় শামীম। একই প্রতিষ্ঠানে কাজের সুবাদে আন্থির সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের দুজনের।

শামীম বলেন, একসময় দুইজনের সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। একপর্যায়ে ওর পরিবারের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে আমি দেশে ফিরে আসি। তারপরও আন্থি এবং আমার মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ হতো। আমার পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলত। গত ২৭ নভেম্বর সে বাংলাদেশে চলে আসে। এরপর উভয় পরিবারের সম্মতিতে আমরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। আমার পরিবারের সঙ্গে আন্থি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। আট-দশটা বাঙালি বউদের মতোই সবার সঙ্গে মিশেছে। তার বাঙালি বউ হওয়ার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। যতদিন এখানে ছিল ততদিনই আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজন সবাইকে মাতিয়ে রেখেছিলো আমার প্রিয় আন্থি। এখন আমরা একে অপরের থেকে অনেক দূরত্বে রয়েছি তবুও একটি মুহূর্তও আমরা একে অন্যকে ছাড়া থাকতে পারছি না। যদিও সবসময় আমাদের ভিডিও কলে কথা হচ্ছে, দেখা হচ্ছে। তবুও তাকে একটু ছুঁয়ে দেখার আকাঙ্ক্ষায় প্রতি মুহূর্ত আমাকে পোড়াচ্ছে। বিশেষ করে বিয়ের পর এটইই আমাদের প্রথম ভালোবাসা দিবস তবে অপ্রত্যাশিতভাবে শত ইচ্ছে থাকা সত্যেও এই বিশেষ দিনে আমার প্রিয়তমা আমার পাশে নেই। এটি আমার জন্য অনেক যন্ত্রনাদায়ক। আমাদের অনেক ইচ্ছে ছিল, এই বিশেষ দিনটিকে দুজন মিলে ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে তুলবো। কিন্তু হাজার মাইলের এই দূরত্ব আমাদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই দূরত্ব কেবল শারীরিক দূরত্ব হলেও আত্মিকভাবে আমরা প্রতিটি সেকেন্ডে একে অপরকে জড়িয়ে রয়েছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রত্যাশা অচিরেই যেন কাগজ পত্রের এই বাধা ডিঙিয়ে আবারো আমাদের মধুর মিলনের পথটুকু সুগম করে দিক।


বিজ্ঞাপন


ভীনদেশী নববধূ আন্থি তেলেবান্থুর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা দুজন একসঙ্গে কাজ করেছি। তারপর বন্ধু হয়েছি এবং আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে একজন ভালো চরিত্রের মানুষ হিসেবেই জানি। এসব থেকেই আস্তে আস্তে আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। আমার পরিবার শামীমকে অনেক পছন্দ করে। তারাও আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। সেজন্যেই হাজার মাইলের পথ পাড়ি দিয়ে তার বউ হতে ছুটে গিয়েছিলাম। আমি আমার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির মানুষদের ভালোবাসায় মুগ্ধ। মাত্র কয়েকদিনেই তারা আমাকে অনেক আপন করে নিয়েছিল। আমি তাদেরকে অনেক মিস করি। বিশেষ আমার স্বামী শামীমকে প্রতি মুহূর্তে খুব অনুভব করি। আশা করি, অচিরেই আমাদের এই দূরত্ব ঘুঁচে গিয়ে আবারো আমরা একসঙ্গে মিলিত হব।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১ ডিসেম্বর বিকেলে আশুলিয়ার গাজীরচট আয়নাল মার্কেট এলাকায় তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ২৭ নভেম্বর আশুলিয়ায় শামীমের বাড়িতে ছুঁটে আসেন সাইপ্রাসের তরুণী আন্থি তেলেবান্থু। ৩০ নভেম্বর ঢাকা জজকোর্টে বাংলাদেশের আইন অনুসারে বিয়ে করেন আন্থি ও শামীম। সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছিল দুই ভিনদেশী দম্পতির সংসার বাধার এই গল্প।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর