গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ৯ মাসের মেয়ে আফিয়াকে টয়লেট ক্লিনার হারপিক খাওয়ানোর পর মাও নিজেও খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। মা আঁখি বেগমকে (১৮) উন্নত চিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দারিদ্রতার কারণে আঁখি বেগম এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার আমিনুর রহমান জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
আঁখি বেগম টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের গাছ কাটা শ্রমিক মামুন তালুকদারের স্ত্রী।
ওসি জানান, গতকাল শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মামুন তালুকদারের স্ত্রী আঁখি বেগম তার ৯ মাসের মেয়ে আফিয়াকে প্রথমে হারপিক খাওয়ান। পরে নিজেও হারপিক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি স্থানীয়রা জানার পর তাদের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক বাচ্চাটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এছাড়া মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাঠানো হয়। শিশুটির মরদেহ আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওসি খন্দকার আমিনুর রহমান আরও বলেন, পরিবারটি অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছিল। এই কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া-ঝাঁটি লেগেই থাকতো। তাই রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে ও অভিমানে মামুন তালুকদারের স্ত্রী আঁখি বেগম এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ওসি। কেউ অভিযোগ করলে অথবা তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আইনানানুক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
বিজ্ঞাপন
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, হাসাপাতালে আনার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়। মায়ের অবস্থা শংকা মুক্ত নয়। তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার রাতেই গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেড জেনারেল হাসাপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রায় ২ বছর আগে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী গ্রামের নূর আলম শেখের মেয়ে আঁখি বেগমের সাথে একই উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মামুন তালুকদারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মামুন তেমন কোনো কাজ করত না। মাঝে মধ্যে গাছ কাটা শ্রমিকের কাজ করলেও অধিকাংশ সময় বেকার সময় কাটাতেন। তাই সংসারে অভাব অনটন লেগেই ছিল। এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ ও মনোমালিন্য চলে আসছিল। দারিদ্রতার মধ্যেই ৯ মাস আগে এ দম্পত্তির একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। তারপরও স্বামী অভাব অনটন দূর করতে কোনো আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করেনি। বসে না থেকে আয় রোজগার বৃদ্ধির কথা বললেই স্বামী তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হত। এতে স্ত্রীর জীবন অতীষ্ঠ হয়ে ওঠে। এই হতাশা থেকে আঁখি বেগম তার ৯ মাসের মেয়েকে প্রথম হারপিক খাওয়ান। পরে নিজেও হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশিরা জানিয়েছেন।
প্রতিনিধি/ এজে

