তমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ছোড়া গুলিতে আরও এক বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সেখানে ৩ জন বাংলাদেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী ও স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীদের তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর সদস্যরা কয়েক দফায় পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
এদিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার-৩৪ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল আশরোকি। তিনি জানান, বিজিপি সদস্যরা দফায় দফায় বাংলাদেশ সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছেন। এখনও অনেক বিজিপি সদস্য আসছেন। ঠিক কতজন আশ্রয় নিয়েছেন সেটা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় রয়েছে।
এর আগে, সকালে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে এক বাংলাদেশি আহত হন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩ জন বাংলাদেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। তাদের ছোড়া গুলির সিসা ও রকেট লাঞ্চার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে উড়ে এসে পড়ছে।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ক্যাম্প দখলকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। শনিবার বিকেল থেকে থেমে থেমে গোলাগুলি হচ্ছিল। আজ ভোর থেকে লাগাতার গোলাগুলি, মার্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লাঞ্চার বিস্ফোরণে, বিকট শব্দে কেপে উঠছে সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রুর বিস্তীর্ণ এলাকা। শুধু তাই নয় গুলির সিসা ও রকেট লাঞ্চার উড়ে এসে পড়ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এদিকে এসব ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও পারছেন না অভিভাবকরা। একারণে সীমান্তের ৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষকরা কৃষি ক্ষেতে যেতে ও দৈনন্দিন কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা রূপলা ধর নামে একজন জানান, সকাল ৮টা থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে। অনেক ভয় হচ্ছে। কখন কোন সময় কী হয়, তা আমরা বুঝতে পারছি না। আমাদের পাশের এলাকার এক ঘরের চালের উপর বিস্ফোরিত রকেট লাঞ্চার এসে পড়েছে শুনেছি। অনেকের উঠানে গুলিও এসে পড়ছে। এ ঘটনায় ঘরের বাইরে যেতেও ভয় হচ্ছে।
তুমব্রু কোনার পাড়ার বাসিন্দা ভুলু বলেন, রাত ১১টার দিকে মর্টারশেলের বিস্ফোরিত অংশ আমার ঘরের চাল ভেদ করে ভেতরে পড়েছে। একটুর জন্য আমাদের পরিবার প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। আমরা খুব ভয়ে আছি, ঘরেও নিরাপদে থাকতে পারছি না।
এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ভোর থেকে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। এতে বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকা।
এ বিষয়ে কক্সবাজার-৩৪ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল আশরোকি বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) রাত থেকে তুমুল যুদ্ধের মধ্যে বিজিপির অনেক সদস্য প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। তাদের ঘুমধুম সীমান্ত বিওপিতে রাখা হয়েছে। আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছে জমা রাখা হচ্ছে।
বিজিবির এই কমান্ডিং অফিসার বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শনিবার বিকাল থেকে ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সেই গোলাগুলির মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি গুলি অটোরিকশায় এসে লাগে। এতে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও অটোরিকশার সামনের গ্লাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর রাতে বাড়ে লড়াইয়ের তীব্রতা। রোববার ভোর রাত থেকে লাগাতার গোলাগুলি, মর্টার শেল নিক্ষেপ ও রকেট লাঞ্চার বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম-তুমব্রুর বিস্তীর্ণ এলাকা।
প্রতিনিধি/এমএইচটি