মিয়ানমারে সামরিক জান্তার সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ, রাজ্য দখলের ঘটনা দীর্ঘদিনের। তবে সপ্তাহখানেক ধরে আবারও দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এতে গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত।
জানা গেছে, গত শুক্র ও শনিবার বিকেলে রাখাইনের রামরি শহরে বোমারু বিমান নিয়ে আরাকান আর্মির ওপর হামলা চালায় ‘তাতমাদো’ নামে পরিচিত মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। এছাড়া একই দিন ভোর থেকে রাখাইনের ‘বুচিডং’ ও ‘ফুমালি’ নামক রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়।
বিজ্ঞাপন
শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উলুবনিয়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের বসত ঘরে এসে পড়েছে। টেকনাফের সীমান্তবর্তী শাহপরীর দ্বীপেও শোনা যাচ্ছে গোলাবর্ষণের শব্দ। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
নুরুল ইসলামের শাশুড়ি সামজিদা বেগম বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উলুবনিয়া সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। আমরা আতঙ্কিত হয়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছি। ওই দিন প্রথমে হঠাৎ গোলার শব্দ শুনি। তখন দেখি আমার মেয়ের বসত ঘরের টিনের দরজা ছিদ্র করে একটি গুলি বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে পড়েছি। পরে বিজিবির সদস্যরা খবর পেয়ে তারা এসে বসতঘরের উঠান থেকে গুলিটা নিয়ে যায়।
সীমান্তে বসবাসকারী মানুষদের ভাষ্য, শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত সীমান্তে থেমে থেমে গোলাবর্ষণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন তারা। এছাড়া তুমব্রু সীমান্তের ঘুমধুমের বাজার পাড়ায়, বাইশ ফাঁড়িসহ তুমব্রু রাইট এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ও শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে ভারী গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মো. সোলেমান বলেন, মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির শব্দে বাড়ি ঘরে থাকতে পারছি না। শনিবার নুরুল ইসলামের বসতঘরে একটি গুলি এসে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে এই সীমান্তের ওপারে মর্টারশেল ও গুলির শব্দে অনিরাপদ মনে করছি। সন্তান নিয়ে রাতে ও দিনে সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
শাহপরীর দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় গুলির শব্দ পাওয়া যায়। ভয়ে আমরা বাড়ি-ঘরে থাকতে পারছি না। চিংড়ি ঘেরেও যেতে পারছি না। এখনো সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমেদ আনোয়ারী জানান, শনিবার সকালে মিয়ানমার থেকে মর্টারশেলের মতো বিকট শব্দ শোনা গেছে। বিষয়টি সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, টেকনাফ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে নতুন করে ফের ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। তিনি আর বলেন, গত ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে ওপারে যুদ্ধ চলছে। এরপর থেকে সীমান্তে নিয়মিত টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের বিজিবি সৈনিকরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, যাতে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে।
টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছি মিয়ানমার থেকে এপারে উলুবনিয়া সীমান্তের একটি বসতঘরে গুলি এসে পড়েছে। গোলাগুলির এ ঘটনায় স্থানীয়দের নিরাপদে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
প্রতিনিধি/এইউ