সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রইশুদ্দীনের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

রইশুদ্দীনের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

যশোর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সৈনিক রইশুদ্দীনের চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া-শ্যামপুর গ্রামের কামরুজ্জামানের ছেলে। 

বুধবার বিকেলে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রইশুদ্দীনের মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। স্থানীয় দোকানদার বাবু আলী বলেন, এলাকায় রইশুদ্দীনের বেশ সুনাম রয়েছে। ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসলেই মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অর্থ দিয়ে সহায়তা করত। গরীব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতো। আমরা এখন তার সহায়তা থেকে বঞ্চিত হলাম। পরিবার হারাল তাদের সন্তানকে।


বিজ্ঞাপন


রইশুদ্দীনের মেজো ভাই বিজিবি সদস্য মাসুম রেজা বলেন, আমরা পাঁচ ভাই বোন। এর মধ্যে আমি আর রইশুদ্দীন বিজিবিতে এবং বড় ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত। রইশুদ্দীনের দুটি সন্তান রয়েছে। চার বছরের বড় মেয়ে রায়সা ও পাঁচ মাসের শিশু হাসান।

রইশুদ্দীনের চাচা আবদুল আলিম বলেন, দেশের সীমান্ত বাহিনীর টগবগে এক যুবক দায়িত্বরত অবস্থায় সীমান্তে আরেকটি দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে মারা যাবেন বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো জরুরী পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না।

বাড়ি উঠানে গিয়ে দেখা যায় এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিলেন রইস উদ্দিনের বড় মেয়ে শিশু রাফিয়া। এক পাশে বসে বিলাপ করছেন নিহতের স্ত্রী নাসরিন বেগম। তিনি বলেন, বিয়ের অল্প সময়ে দুই শিশু সন্তান নিয়ে বিধবা হতে হল। সন্তানদের কি বুঝ দিব! কিভাবে দুই সন্তান নিয়ে জীবন যাপন করব। ঘটনার দিন দায়িত্বে যাবার সময় সর্বশেষ মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। আর কোনোদিন কথা হবে না। 

সোমবার ভোর ৪টার দিকে ভারতের সুটিয়া সীমান্ত পথে গরু নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালায় পাচারকারীরা। এ সময় বিজিবি সদস্য রইশুদ্দীন গতিরোধ করার চেষ্টা করলে চোরাকারবারিরা গরু ফেলে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন সুটিয়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা ৭ রাউন্ড গুলি চালালে দুই চোরাকারবারি ভারতীয় অংশে আহত হয়। এরপর বাংলাদেশ অংশে ঢুকে পড়া গরুগুলো বিজিবি সদস্যরা উদ্ধার করতে গেলে বিএসএফ রইশুদ্দীন নামে এক বিজিবি সদস্যকে ধরে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে তাকে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। 


বিজ্ঞাপন


বিজিবির যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জামিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২২ জানুয়ারি আনুমানিক ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বিজিবি ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে আসা গরু চোরাকারবারিদের সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে। পরে দায়িত্বরত বিজিবি টহল দল তাদের চ্যালেঞ্জ করলে দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। 

gg

এ সময় বিজিবি টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করা হয় এবং জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈনিক মোহাম্মদ রইশুদ্দীন মারা যায়।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর