শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নোয়াখালী জামে মসজিদ, অপূর্ব ভাবাবেগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে 

হাবীব ইমন
প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২২, ০১:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

নোয়াখালী জামে মসজিদ, অপূর্ব ভাবাবেগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে 

নোয়াখালী জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে এক অপূর্ব স্বর্গীয় ভাবাবেগ নিয়ে অবস্থান করছে জামে মসজিদ। মাইজদী বড় মসজিদ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। প্রতিদিন শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লী নিয়মিত এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন।
 
পুরাতন নোয়াখালী শহর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার পরে মাইজদীতে নতুন শহর গড়ার সময়েই ১৯৫০ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দিনে দিনে নানান প্রতিষ্ঠান ও নানান জনের অনুদান আর নোয়াখালীবাসীর প্রতিদিনের দানের টাকায় গড়ে উঠছে অনন্য সুন্দর এই মসজিদ। এর পশ্চিমে রয়েছে একটি বড় পুকুর, দক্ষিণে জিলা স্কুল, উত্তরে স্টেশন রোড এবং জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ও জেলা সড়ক বিভাগের ভবন, পূর্বে গণপূর্ত বিভাগের ভূমি।
 
এই মসজিদের সীমানা ৩ একর ৮০ ডেসিমেল। এই মসজিদটি তৈরির সময় ছোট একতলা ভবনে অপরূপ মুসলিম ও দেশীয় লোকজ শিল্প সৌন্দর্যে লতাপাতা আর কোরআনের আয়াত ও উপদেশ বাণী উৎকীর্ণ করে নির্মাণ করা হয়।
 
মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৩০ ফুট ও প্রস্থে ৮০ ফুট। মূল ভবনে তিনটি সুদৃশ্য গম্বুজ ও নয়টি সুউচ্চ মিনার ইসলামী স্থাপত্যে নির্মিত হয়। পুরাতন শহরের জামে মসজিদটি ছিলো সকল ধর্মের সকল মানুষের কাছে শ্রদ্ধারস্থান। মূল নোয়াখালী শহর মেঘনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার সময় সেই মসজিদটিও নদীগর্ভে চিরতরে হারিয়ে যায়।
mosque noakhaliঅনেক কিংবদন্তি ছিলো সে মসজিদকে ঘিরে। জনমনে বিশ্বাস ছিলো এই মসজিদে কেউ মানত করলে মহান আল্লাহ সে মানত কবুল করতেন। প্রবীনজনেরা বলেন,, বহু পুরাতন সে মসজিদের ভেতর কথা বললে এক প্রকার গুমগুম আওয়াজ হতো। গভীর রাতে প্রকৃতি যখন নিঃশব্দ হয়ে আসতো তখন কেউ তেলাওয়াত করলে কোরআনের সে বাণী অলৌকিকভাবে মসজিদের দেয়াল থেকে গুরুগম্ভীর আওয়াজে আবার ফিরে আসতো। এই মসজিদটি যখন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছিলো তখন প্রতিদিন দলে দলে মানুষ ছুটে গিয়েছিলো ভাঙন দেখতে।
 
অনেকের বিশ্বাস ছিলো অলৌকিক কারণে উত্তাল সাগর থেকে হয়তো মসজিদটি রক্ষা পাবে। কিন্তু হাজার হাজার নারী-পুরুষের বুকফাটা কান্না ছাপিয়ে সাগরের উন্মত্ত ঠেউয়ের তোড়ে মসজিদটি সাগরে বিলীন হয়ে যায়। তখন মানুষ প্রত্যক্ষ করলো যে, অসংখ্য মাটির ফাঁপা পিপা দিয়ে গাঁথা হয়েছিলো মসজিদের ভীত। সম্ভবত এ শূন্য মাটির পিপের ভীতের জন্যই শব্দ বিজ্ঞানের স্বাভাবিক নিয়মে মসজিদে কেউ কথা বললে প্রতিধ্বনিত হয়ে গুমগুম আওয়াজ করতো। 
 
সাগর পাড়ে নদীর চরায় দূরে মসজিদটি আবার ভেসে উঠেছে এই গুজব কোথাও উঠলে মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ উর্দ্ধশ্বাসে ছুটতো সেদিকে। কিন্তু মসজিদটি সত্যি সত্যিই নদীগর্ভে চিরতরে হারিয়ে গেলো। পাঁজর ভাঙা মানুষের সেই বেদনা আর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য নতুন শহরে মানুষের নিজস্ব প্রচেষ্টায় ফের তিল তিল করে গড়ে উঠে এ মসজিদ।
mosque noakhali
মসজিদের প্রবেশ পথে অনন্য সুন্দর গোলাপ বাগান যে কোনো ধর্মপ্রাণ রুচিশীল মানুষের হৃদয় পবিত্র স্নিগ্ধতায় ভরে দেয়। মসজিদের ভেতর উত্তর পূর্ব কোণে কালো পর্দায় ঘেরা দিয়ে মহিলাদের নামাজ পড়ার বিশেষ ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন অসংখ্য পর্দানশিন মহিলা সেখানে নামাজ আদায় করেন। এখানে আরো আসে হিন্দু-খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের অনুসারীরা। তারা মসজিদটির  সৌন্দর্য্ ও পবিত্রতায় মুগ্ধ হন। মসজিদ কমিটির পরিচালনা বোর্ডের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। মসজিদের সাথে আছে একটি এতিমখানা ও মাদরাসা। পাশেই আছে কবরস্থান।
 
এখানে শায়িত আছেন প্রাক্তন সেক্রেটারী আনোয়ার উল্লাহ পেশকার, লেংটা হুজুর, নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যন শহীদ উদ্দিন এস্কেন্দার (কচি) ও জেলার গন্যমান্য ব্যক্তিরা। 

এ মসজিদের অভ্যন্তরে আছে সুদৃশ্য ঝাড়বাতি। পুরানো মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার সময় ঝাড়বাতি, লোহার সুদৃশ্য গেইট ও অসংখ্য শ্বেতপাথরের টুকরো রক্ষা করা গেছে। সেগুলো এখন বর্তমান মসজিদের শোভাবর্ধন করছে। মুসল্লিদের সার্বিক সুবিধার জন্য এখানে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে আধুনিক শৌচাগার, গোসলখানা ও ওজুখানা।
mosque noakhaliমসজিদের সাথে ‘মানব কল্যাণ মজলিস’ নামে একটি জনহিতকর সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। যা আর্তমানবতার সেবায় মসজিদভিত্তিক একটি সংগঠনের রূপ নিয়েছে। সুপার মার্কেট, রেস্ট হাউস্, পুকুর লিজের অর্থ, সমাজের দানশীল মহৎ ব্যক্তি আর অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুদানে দিন দিন শ্রীবৃদ্ধি পাচ্ছে এই মসজিদ। 


বিজ্ঞাপন


১৮৪১ সালের পুরাতন নোয়াখালী শহরে ইমাম উদ্দিন সওদাগর নিজের জমিতে যে জামে মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন। দিনে দিনে নানান জনের নানান স্পর্শে তার সুখ্যাতি চতুর্দিকে বিকশিত হয়ে উঠেছিল। কালক্রমে ভাঙাগড়া নোয়াখালীর পলিমাটিতে মসজিদটি দিন দিন আবার  সুশোভিত হয়ে উঠছে।

এইচই/এইচজে/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর