সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বসন্তে রঙিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:১৫ এএম

শেয়ার করুন:

বসন্তে রঙিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান
এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান

ইট পাথরে গড়ে ওঠা শহরে যদি আপনি কোথাও কোকিলের ডাক না শুনেন কিংবা কৃষ্ণচূড়ার দেখা নাও পান, তবুও ধরে নিবেন বসন্ত এসেছে নগরে। আর যদি প্রেমিক মন রাঙাতে চায় রক্তিম কোনো ফুলের আভায় তাহলে ছুটে যেতে পারেন গ্রামে। তবে রক্তিম ফুলের আভায় মুগ্ধ হবেন যদি যান এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিমুল বাগানে। যার অবস্থান সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায়।

প্রশ্ন আসতেই পারে ফুল দেখতে তাহিরপুর কেন? বলে রাখি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিন্তু তাঁর কবিতায় আমাদের নিষ্ঠুরতার উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর, লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর, হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী।’ সবইতো গ্রাস হয়েছে উন্নয়নের জোয়ারে। তাইতো এখন গ্রামকেও শহরে পরিণত করার প্রত্যয় আমাদের। তাহলে বাকি থাকলোই বা কি? কোকিলগুলোইবা বসবে কোন ডালে! কালো পিচের উপর দিয়ে চলমান বড় বড় গাড়ি আর হাইড্রলিক হর্নে ম্লান সেই মধুর সুর।


বিজ্ঞাপন


কিন্তু নির্জন প্রকৃতিতে বসন্ত উপভোগের জন্য জয়নাল আবেদিন যেন যত্ন করে গড়েছেন একটি বাগান। ওপাড়ে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝখানে যাদুকাটা নদী আর এর পাড়েই প্রায় ৩০ একর জায়গা জুড়ে তিন সহস্রাধিক শিমুল গাছে ফুটেছে লাল ফুল! যার ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও আসেন পর্যটক। তবে ফুল আর পাখির কোলাহলে মুগ্ধ হলেও ভোগান্তির গল্পও আছে অনেক।

shimul bagan

রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) শিমুল বাগান ঘুরতে এসেছিলেন চট্টগ্রাম থেকে ৩৫ জনের একটি দল। ভালো লাগা আর ভোগান্তির গল্প জানালেন তারা। তামান্না জাহান নামের এক তরুণী বলেন, ‘শহরাঞ্চলে ফুল কিংবা পাখির ডাক নেই বললেই চলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বাগানের কথা অনেক আগে থেকেই জানা। অনেক পরিকল্পনার পর এবার আসলাম। পথের ক্লান্তি যাই হোক এখানে আসার পর ফুলগুলো দেখে মুগ্ধ। তবে এখানে আসার ভোগান্তিও কম নয়।’

আঞ্জুমা নিধি নামের এক তরুণীও জানালেন ভোগান্তির কথা। তিনি জানান, সুনামগঞ্জের নতুন ব্রিজের পর থেকেই ভাঙা সড়ক। তাছাড়া পথ নির্দেশকের অভাব রয়েছে। এতে ভুল পথ চলে যেতে পারেন অনেকে। এছাড়া বাগানের কাছাকাছি কোনো ভালো মানের খাবার রেস্টুরেন্ট কিংবা থাকার জায়গাও নেই। এটা খুব বেদনাদায়ক।


বিজ্ঞাপন


নিধি বলেন, ‘এখানে কোনো আবাসিক হোটেল থাকলে আমরা এখানে থাকতাম। ইচ্ছামত ঘুরে তার পর কাল ফিরতাম। কিন্তু এখন আজই ফিরতে হবে। সিলেটে গিয়ে রাত থেকে তার পর কাল জাফলং ঘুরতে যাবো।’

অবশ্য দ্রুত সময়ের মধ্যেই পথ নির্দেশকের ব্যবস্থা হবে বলে জানালেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি জানান, হাওরে উড়াল সড়কের সঙ্গে তাহিরপুরের সংযোগ সড়কের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। আপাতত যে সড়ক আছে সেগুলোতে চলাচলের উপযোগী করতে সংস্কার করা হবে।

shimul bagan

কাছাকাছি শহীদ সিরাজ লেক ও বারেক টিলা:

কেবল শিমুল বাগানই না, তাহিরপুর উপজেলাতেই অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর, আর শিমুল বাগানের অনেকটা কাছেই শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রী লেক)। মাঝখানে পানি আর উভয় পাশের উঁচু-নিচু ছোট ছোট টিলাগুলো পর্যটকদের মাঝে অন্যরকম ভালো লাগা তৈরি করে। ফেরার পথে চাইলে বারেক টিলার চূড়ায় দাঁড়িয়ে খুব কাছে থেকে দেখা যায় ভারতের মেঘালয় অংশ। সব মিলে একের  ভেতরই যেন সব। তবে শিমুল বাগানের লাল ফুলের দৃশ্য দেখার জন্য সময় বেছে নিতে হবে কেবল বসন্তের প্রথম সপ্তাহ।

যেভাবে যাবেন

সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে নতুন ব্রিজ হয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কারেন্টের বাজার গিয়ে তাহিরপুর উপজেলায় প্রবেশ করলে বাদাঘাট বাজার হয়েই যেতে হয় শিমুল বাগান। বাদাঘাট বাজার থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা যাদুকাটা নদীর পাড়ে অবস্থিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ শিমুল বাগানে গিয়ে দেখা যাবে অদ্ভুত এক দৃশ্য। এ ক্ষেত্রে বাহন হিসেবে মোটরসাইকেলই সবচেয়ে সুবিধার। কিন্তু মাইক্রোবাস নিয়ে যেতে চাইলে কারেন্টের বাজার গিয়ে ডানে প্রবেশ না করে সোজা চলে যেতে হবে তাহিরপুর উপজেলা সদরে। সেখান থেকেই ভাঙাচুরা সড়কে আসতে হবে বাদাঘাট বাজার। তবে রাত্রি যাপনে ভালো মানের কোনো আবাসিক হোটেল না থাকলেও বাদাঘাট বাজারে থাকার মত একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। আছে কোনোরকম কয়েকটি খাবার রেস্টুরেন্ট। কিন্তু পথে যেহেতু কোনো পথনির্দেশক নেই সে ক্ষেত্রে মোড়ে মোড়ে প্রবেশের আগে পথচারীদের পরামর্শ নিয়েই চলা উচিত।

 

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর