কোর্ট চত্বরে বাবা-মায়ের বিয়ে হলো শিশুর জন্মের তিন মাস পর। এমনই এক চাঞ্চল্যকর ও ব্যতিক্রমী বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ঝিনাইদহ কোর্ট চত্বরে। ছোট্ট শিশুর বাবা-মায়ের সম্পর্কের এমন সমাধানে সবাই খুব খুশি।
ঝিনাইদহ আদালতের ভ্যাকেশনাল কোর্ট এক যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নাজিমুদ্দৌলা এ রায় প্রদান করেন।
বিজ্ঞাপন
আদালত সূত্রে জানা যায়। আসামি মিকাইল হোসেন ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর ধর্ষণ করে একই গ্রামের তানিয়া ইয়াসমিন রিয়াকে। এ ঘটনায় ওই দিনই রিয়ার মা তাসলিমা বেগম বাদী হয়ে ঝিনাইদহের কোঁটচাদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ের শর্তে জামিন পান মিকাইল। কোর্ট চত্বরে মিকাইল-তানিয়ার বিবাহ সম্পন্ন হয়। বাবার স্বীকৃতি পায় তাদের ঔরসজাত ৩ মাসের সন্তান আলিফ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মায়ের কোলে কোর্ট চত্বরে ঘুমাচ্ছে মাত্র ৩ মাসের আলিফ। সে জানেই না এ পৃথিবীতে সে পরিচয়হীন হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিল। তার বাবা-মায়ের বিয়ে হলো তারই জন্মের তিন মাস পর। এমনই এক চাঞ্চল্যকর ও ব্যতিক্রমী বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ঝিনাইদহ কোর্ট চত্বরে। ছোট্ট শিশুর বাবা-মায়ের সম্পর্কের এমন সমাধানে সবাই খুব খুশি।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জেলার কোটচাঁদপুর থানার এলাঙ্গী ইউনিয়নের এলাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা মৃত বাহাজ্জেল শেখ-তাসলিমা বেগম দম্পতির বড় মেয়ে তানিয়া ইয়াসমীন রিয়াকে প্রায় একবছর আগে ভয় দেখিয়ে ও ফুসলিয়ে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করে একই গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে মিকাইল হোসেন।
এরপর মেয়ের মা তাসলিমা বেগম কোটচাঁদপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতে আসামি মিকাইলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু মিকাইল ও তার পরিবার এ ঘটনাকে পরোপুরি অস্বীকার করে আসছিল। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে তানিয়া। এবং গত তিন মাস আগে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় তানিয়া । একপর্যায়ে বাদী পক্ষের আইনজীবীর দাবিতে ডিএনএ টেষ্টের অনুমতি প্রদান করে আদালত। সেখানে ডিএনএ টেষ্টে তানিয়ার গর্ভজাত সন্তান আলিফ যে মিকাইলের সন্তান তা প্রমাণ হয়। এরপর আদালত আলিফের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় ও বাদী-বিবাদীর মধ্যস্থতায় ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিবাহ সম্পন্ন করে জামিনে মিকাইলকে মুক্তি প্রদান করে।
বিজ্ঞাপন
মিকাইলের বাবা মিজানুর রহমান জানান, কোর্ট যে নির্দেশনা প্রদান করেছে তা আমরা মেনে নিয়েছি। ছেলে-বৌ সংসার করুক।
সাধারণ মানুষ জানান, এ ধরনের ঘটনা সত্যিই সচরাচর দেখা যায় না। আদালত যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছে। একদিকে মেয়েটি তার ঠিকানা পেল অন্যদিকে ছোট্ট বাচ্চাটি তার পিতৃত্ব পরিচয় পেল।
তানিয়া ইয়াসমিন রিয়া জানান, আমি এ রায়ে খুশি। তবে ভবিষ্যতে সংসার সুখের হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মন্জুরুল ইসলাম জানান, কোর্টের রায় যা হয়েছে তাতে পক্ষপাতিত্বের কোনো সুযোগ নেই।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. সরদার মনিরুল ইসলাম মিল্টন জানান, এ ধরনের চাঞ্চল্যকর মামলায় যুগান্তকারী রায় প্রাদান করেছেন আদালত। কারণ এ ধরনের রায় সত্যিই বিরল। আমরা সবাই খুশি।
প্রতিনিধি/এসএস