যশোরের ছয়টি আসনেই স্বতন্ত্রের মোড়কে নৌকার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। জেলার এই ছয়টি আসনে ১২টি দলের মোট ৪৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এই ৪৬ জনের মধ্যে নৌকার প্রার্থী ছয়জন এবং স্বতন্ত্রের মোড়কে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১৬ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ১০ জন শক্তিশালী প্রার্থীও রয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জানিয়েছেন, ‘নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে দলের হাইকমান্ড স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। আবার দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাতেও আপত্তি নেই, নেওয়া হবে না কোনো ব্যবস্থাও। হাইকমান্ডের এমন নিদের্শনায় ভরসা পেয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন অনেক নেতা। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোড়কে এসব প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বলে নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিতি পাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
যশোর-১ (শার্শা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হলেন টানা তিনবারের সংসদ শেখ আফিল উদ্দিন। তার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনাপোলের সাবেক পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এই আসনে বিভিন্ন দলের আর চার নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তবে আফিল উদ্দিনের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন লিটন। বেনাপোল পৌরসভার সাবেক এই মেয়র দীর্ঘদিন ধরে মাঠ গুছিয়েছেন। ফলে শার্শায় আফিল উদ্দিনের দুর্গে ভাগ বসাতে পারেন লিটন। ইতোমধ্যে উপজেলা ও কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তার অনুসারী হিসেবে রাজনীতি করছেন। শেষ পর্যন্ত লিটন নির্বাচনে অংশ নিলে সেখানে নৌকার সাথে লিটনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে নেতাকর্মীদের ধারণা।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার জন্য মাঠে নেমেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম ও চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমান। এই আসনে চারটি দলের প্রার্থী থাকলেও মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম। কারণ এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য অনেক আগে থেকেই মাঠে নেমেছিলেন মনিরুল। এছাড়া দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের বৃহৎ একটি অংশ তার সঙ্গে রাজনীতি করেন। আর নৌকা পেলেও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন মাত্র কয়েক মাস আগে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এর আগে স্থানীয়রা কেউ তাকে চিনতেন না। মূলত আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদের জামাতা হিসেবে তিনি মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
যশোর-৩ (সদর) আসনে ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও আওয়ামী লীগের কাজী নাবিল আহমেদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নিজ দলের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ। কেননা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করা এই দুই জ্যেষ্ঠ নেতার নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তাদের দুজনের সঙ্গে রয়েছেন। ফলে এখানে কাজী নাবিলের নৌকাকে ঘরের দুই ‘হিমবাহ’কে মোকাবেলা করেই বন্দরে ভিড়তে হবে।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিত রায়। ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের সঙ্গে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে রণজিত রায়ের। যদিও স্থানীয় আওয়ামী লীগে একদিকে যেমন দলীয় কোন্দল রয়েছে, অন্যদিকে দলীয় সমর্থন না থাকলে মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও বলেছেন রণজিৎ কুমার রায়।
বিজ্ঞাপন
আর যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত স্বপন ভট্টাচার্য্যের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় কোন্দল। এতে চার নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের বড় একটি পক্ষ তার সঙ্গে নেই। প্রতিমন্ত্রীর নৌকা ডোবাতে একজোট হয়েছেন উপজেলা ও তৃণমূলের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে আওয়ামী লীগের শাহীন চাকলাদারের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেন ও সদ্য জেলা পরিষদের পদত্যাগী সদস্য আজিজুল ইসলাম। এখানে নৌকার বিপক্ষে এইচএম আমির হোসেন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
যশোর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের শিডিউল অনুযায়ী নির্বাচনে সকল কাজ করা হচ্ছে।
প্রতিনিধি/জেবি

