আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুরের চারটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চার জন প্রার্থী অর্থাৎ নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে লড়বেন আওয়ামী লীগের অন্য চার নেতা। নিজ নিজ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। সেখানে দেখা যায়, ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা, মধুখালী ও বোয়ালখালী) আসন থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আরিফুর রহমান দোলন, ফরিদপুর-২ (সালথা ও নগরকান্দা) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন, ফরিদপুর-৩ (ফরিদপুর সদর) আসন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য ও ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ ও ফরিদপুর-৪ আসন (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) থেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন) তারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
ফরিদপুরের চারটি সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে যথাক্রমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য (১) আব্দুর রহমান, প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র ও বর্তমান সংসদ সদস্য (২) শাহদাব আকবর চৌধুরী (লাবু), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (৩) শামীম হক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য (৪) কাজী জাফর উল্যাহর নাম ঘোষণার পর তারা দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছে।
বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী
ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জাতীয় দৈনিক ঢাকা টাইমসের সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন। তিনি আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রফিকুল হকের কাছে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশ মোতাবেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। মানুষের ভালোবাসায় বিপুল ভোটের মধ্য দিয়ে বিজয়ী হয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই আসনটি উপহার দিতে পারব।
বিজ্ঞাপন
তিনি তার ফেসবুকে লিখেন, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াইয়ের অনুমতি দিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, কৃতজ্ঞতা।
ফরিদপুর-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে রিটানিং কর্মকর্তা ও সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিচুর রহমান বালির কাছে এ মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর জামাল হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমি আওয়ামী লীগ করি। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মনে প্রাণে আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি। আমি নৌকার বিপক্ষে না। আসন্ন নির্বাচনে সব প্রার্থীকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- যদি কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করে আসেন, তিনিই আমার প্রার্থী।
ফরিদপুর-৩ অর্থাৎ সদর আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য ও ব্যবসায়ী এ কে আজাদ বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
আরও পড়ুন: নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হলেন প্রধানমন্ত্রীর বিয়াই
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কে আজাদ বলেন, ফরিদপুরে একটি শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে যাতে সেখানে কিছু কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া নিয়ে আমাদের প্রতি কোনো চাপ নেই। কারণ পার্টি থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, আমরা যারা মনোনয়ন চেয়েছিলাম তাদের সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি। অতএব পার্টির মধ্য থেকে যদি আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হই তাহলে দলের কোনো আপত্তি থাকবে না।
এ ছাড়া ফরিদপুর-৪ আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী বুধবার (২৯ নভেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. কামরুল আহসান তালুকদারের কাছে তার মনোনয়ন পত্র জমা দেন।
তিনি আসনটি থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। দলীয় কোনো চাপ আছে কী-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে নিক্সন চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত দলীয় কোনো চাপ আমি অনুভব করছি না। আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের মনোভাব কেন্দ্রীয় নেতারাও জানেন। অতএব দল জনগণের বিপক্ষে যাবে না, তারা আমাকে কোনো চাপও দেবে না। সাধারণ মানুষ আমার সঙ্গে আছে, এবারও কাজী জাফর উল্লাহর বিদায় হবে। আমি আশাবাদী, এবার হ্যাট্রিক বিজয় হবে ‘ইনশাল্লাহ’।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অংশ নিতে দেশের নিবন্ধিত আটটি রাজনৈতিক দলের দলীয় ও স্বতন্ত্রসহ ফরিদপুরের ৪টি সংসদীয় আসনে মোট ২৬ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
ফরিদপুরে সংসদীয় আসন সংখ্যা মোট চারটি। এর মধ্যে দলীয় ও স্বতন্ত্রসহ ফরিদপুর -১ (বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গা) আসন থেকে ৭জন। ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসন থেকে ৪জন, ফরিদপুর- ৩ (সদর) আসন থেকে ৮জন এবং ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসন থেকে ৭জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গতকাল ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৭ জানুয়ারি।
প্রতিনিধি/এসএস

