বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার মধ্যে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হলে বাধা দেওয়া হবে না-এমন ইঙ্গিত আসার পর প্রায় সব আসনেই নৌকা মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছেন মনোনয়ন বঞ্চিত অনেক হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ নেতারা। আর এতে অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে পরেছেন বর্তমান সংসদ সদস্যসহ মনোনয়নপ্রাপ্ত নৌকার প্রার্থীরা।
এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা-১৯ (সাভার ও আশুলিয়া) আসনে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদ। তিনি ২০০৮ সালে এই আসনে নৌকা নিয়ে জিতেছিলেন। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর সমালোচনার মুখে পরেন তৎকালীন সংসদ সদস্য মুরাদ জং। পরবর্তীতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ডা. মোহাম্মদ এনামুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
এরপর থেকে গত ১০ বছরে তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদকে সাভার ও আশুলিয়ায় দেখা যায়নি। তিনি রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন না। কিন্তু এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি আর মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর থেকেই সাবেক এই এমপির সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুরাদ জংয়ের ছবিসহ বিভিন্ন শুভেচ্ছা বানী লিখে পোস্ট শেয়ার করছেন এবং অনেকে রাজধানীর মিরপুরে মুরাদ জংয়ের বাড়িতে গিয়েও ভিড় জমিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মোবাইলে তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সাভার ও আশুলিয়ার জনগনের দাবীর প্রেক্ষিতে এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি সকলের সহযোগিতায় আমি আবার জনগন ও দেশের সেবা করার সুযোগ পাবো। এই এলাকার জনগণই আমাকে ২০০৮ সালে দেশের সর্বোচ্চসংখ্যক ভোট দিয়ে তাঁদের সেবা ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন এবারও তাঁদের প্রত্যাশা পূরণের মধ্য দিয়ে আমি আবার সংসদে যাবার সুযোগ পাবো বলে আশা করছি।’
অন্যদিকে একই আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে তিনি সম্প্রতি চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন এবং মিলাদ পরিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
গতকাল সোমবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুত এলাকায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। এসময় তাঁর সঙ্গে আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ ভুঁইয়া সুমনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে একই স্থানে মিলাদের আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এসময় মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমি দলীয় মনোনয়ন পাইনি। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ দিয়েছেন। একজনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন বাকিদের সবাইকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কার কতো জনপ্রিয়তা সেটি প্রমাণ হবে। দলীয় নির্দেশনা মেনেই আমি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমি বিগত ৭ টি বছর দেশের সবচেয়ে বেশি ভোটার অধ্যুষিত ইউনিয়ন পরিষদ ধামসোমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এসময় এই এলাকায় আমি একটি পৌরসভার চেয়েও বেশি উন্নয়ন করেছি যা সকলের কাছে দৃষ্টান্ত। তাই আমি পুরো সাভার আশুলিয়া জুড়েই এমন টেকশই উন্নয়ন করতে চাই আর তাই একজন সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে আমি সকলের কাছে দোয়া চাই।’
এদিকে সাভার ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই নির্বাচনী এলাকায় তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ ও সাইফুল ইসলামের বেশ জনপ্রিয়তা থাকার পাশাপাশি বিশাল নেতাকর্মীদের একটি অংশের সমর্থনও রয়েছে। তাই এই দুই নেতা আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের গত দুইবারের সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের পক্ষে এবার বিজয়ী হওয়া অনেকটাই কষ্টকর হয়ে পড়বে।
প্রতিনিধি/একেবি