বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ৬৪ জেলায় ‘চিরায়ত বাংলা নাটক’ মঞ্চায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ঠাকুরগাঁওয়ে মঞ্চস্থ হয়েছে প্রখ্যাত নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর রচিত নাটক ‘কবর’।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাত পৌনে ৮টার দিকে রেপার্টরি নাট্যদল ঠাকুরগাঁও শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনায় এবং জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
নাটকটি মঙ্গলবারও (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় একই স্থানে মঞ্চস্থ করা হবে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় নাটকটির আয়োজন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
মঞ্চায়ন নির্দেশনা ও সমন্বয়ে ছিলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সৈদয় জাকির হোসেন। প্রযোজনা নির্মাণ ও মঞ্চায়ন নির্বাহীর দায়িত্বে ছিলেন, আলি আহমেদ মুকুল এবং অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন পার্থ সারথী দাস।
ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে লেখা মুনীর চৌধুরীর নাটক ‘কবর’। এই নাটকে কয়েকটি চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ভাষা আন্দোলনের সারসত্য। নেতা ও হাফিজ চরিত্রের মধ্য দিয়ে তত্কালীন রাজনীতিবিদ ও ব্যক্তি স্বার্থান্বেষী মানুষের রূপ উন্মোচন করা হয়। অন্যদিকে মুর্দা ফকির যেন বাঙালি জাতির প্রতিনিধিত্বকারী।
বিজ্ঞাপন
নাটকের শুরু অর্ধমাতাল অবস্থায় নেতা ও হাফিজের সংলাপের মধ্য দিয়ে অশরীরী আত্মার মতো নাটকে আবির্ভাব ঘটে মুর্দা ফকিরের। ফকির ‘মুর্দা’ নয়, জীবিত। আপাতদৃষ্টিতে তার কথায় পাগলামি মনে হলেও পাঠকের বুঝতে অসুবিধা হয় না তার রূপকধর্মী সংলাপের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে বিবেক, দেশ ও জাতির চিন্তা-ভাবনার।
‘গন্ধ! তোমাদের গায়ে মরা মানুষের গন্ধ।...যাও তাড়াতাড়ি কবরে যাও।’ সংলাপটি শুধু নেতা ও হাফিজকে নয়, বরং নাট্যকার তত্কালীন ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলকারীদের উদ্দেশেই বলেছেন। ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের আশায় যারা সেদিন নিজেদের বিবেক বিসর্জন দিয়েছিল, মৃত্যু আসলে তাদেরই হয়েছিল।
মুর্দা ফকিরের সচেতনতায় ভাষাশহীদের লাশরাও কবরে যেতে চান না। ‘আমরা মরতে চাইনি। আমরা মরব না। কবরে যাব না।’ মুর্দা ফকির প্রতিবাদী চরিত্র, যে মনুষ্যত্ব-বিবেকহীন জীবিত মানুষকে লাশ মনে করেছে, তা সমাজ ও ব্যক্তির নষ্টামিকে অকপটে তুলে ধরেছে।

ভাষা-আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত এ-নাটকের গুলিবিদ্ধ লাশের কণ্ঠে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়, ‘আমরা কবরে যাব না। আমরা বাঁচব।’ এই বাঁচা-লড়াইয়ের ফলেই একাত্তরের স্বাধীনতা অর্জন। এখানেই প্রজন্মের পর প্রজন্মব্যাপী মুনীর চৌধুরীর নাটক গুরুত্ব বহন করে আসছে।
নাটকটি মঞ্চস্থ শেষে কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন, এনএসআই’র যুগ্ম পরিচালক হেমায়েত হোসেন।
এসময় জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বলেন, তিনি যদি আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ জেলায় কর্মরত থাকেন তাহেল ভাষার মাসে এই নাটকটি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আবারও মঞ্চস্থ করা হবে।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সোলেমান আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস. এম. হাবিবুল হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চন্দ্র রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুপ কুমার গুহ ঠাকুরতা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য রত্না সিনহাসহ সাধারণ দর্শকরা।
প্রতিনিধি/এসএস

