পাখি প্রকৃতির সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষার্থে উপকারী বন্ধু। সেই নিরীহ পাখিদের কিছু লোভির শিকারের পরিণত হয়ে, পথে প্রান্তরে চলে তাদের বেচাকেনা। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপারের পথে প্রান্তরে ও বিভিন্ন বাজারে এ রকম পাখির কেনাবেচা হতে দেখা গেছে।
শনিবার সকালে কাউয়াদীঘি হাওরপারের কাশিমপুর বাজার এলাকায় দেখা যায়, একজন কয়েকটি পাখি হাতে নিয়ে ঘুরছেন, ক্রেতার আশায়। এদের মধ্যে কয়েকটি সাদা বক ও সরালি। ক্রেতা খুঁজতে খুঁজতে তিনি একসময় ক্রেতা পেলেন এবং ৫শত টাকায় তার কাছে পাখিগুলো বিক্রি করে তিনি সরে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আরও একজন আসলেন। তার হাতে সাদা-কালো, সাদা- ধুসর রঙের কয়েকটি পাখি। এরমধ্যে একজন ক্রেতা দুটো পাখি ৪ শত টাকায় কিনে নেন।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এখন কাউয়াদীঘি হাওরে আর আগের মতো পাখি নেই। তারপরও মাঝেমধ্যে জেলেদের পাতা জালে কিছু পাখি ধরা পড়ে। রাতে উড়তে গিয়ে জাল দেখতে পায় না। তখন জালে আটকে যায়। তবে প্রতিদিন এই বাজারে পাখি না উঠলেও মাঝেমধ্যে পাখির বেচাকেনা হয়।
এদিকে হাওরপারের চানপুর এলাকায় দেখা যায় কয়েকজন মাছের জাল ও ঝুড়ি হাতে নিয়ে হাওর থেকে এসেছেন। তাদের দুজনের হাতে বকের মতো দেখতে কালো-খয়েরি ও ধুসররঙের ছোট বড় আকারের কয়েকটি পাখি। পরিচয় গোপন রেখে পাখিগুলো কোথায় পেলেন জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, রাতে মাছের জালে পাখিগুলো আটকা পড়েছে। এখন পাখি বিক্রি করবো।
সেই পাখির বিক্রেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা রাতের বেলায় হাওরে মাছ ধরতে যান। মাছের জন্য হাওরে জাল ফেলেছিলেন। ভোরে সেই জালে পাখি ধরা পড়েছে। মাঝেমধ্যে এ রকম বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ধরা পড়ে। সেই এক একটি পাখি দাম চাইলেন হাজার টাকা।
হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, শীতে অতিথি পাখির সংখ্যা বেশি থাকায় তৎপর হয়ে ওঠেন স্থানীয় শিকারিরা। হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন খালে-বিলে খাবারের সন্ধানে আসা পাখিরা শিকারির ফাঁদে আটকা পড়ে। হাওর-সংলগ্ন বাজারগুলোতে এই সময়টাতে পাখিগুলো বিক্রি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
নির্বিচারে বৃক্ষনিধন এবং জলাভূমি ভরাটের কারণে দেশীয় প্রজাতির পাখি যেমন বিলুপ্ত হচ্ছে। তেমনি অতিথি পাখির আগমনও দিন দিন কমছে জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার জাতীয় পরিষদ সদস্য আসম সালেহ সোহেল বলেন, পাখি শিকারের কারণে একদিকে যেমন জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে ফসলি জমিতে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। অতিথি পাখি নিধনে আইন থাকলেও এসব আইনের প্রচলন তেমন একটা চোখে পড়ে না।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী পরিযায়ীসহ কোনো পাখি হত্যা করলে সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড, ১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড, ২ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
এ বিষয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ার জানান, কাউয়াদীঘি হাওরপারের বিভিন্ন এলাকাসহ হাটবাজারে কয়েকদিনের মধ্যে সচেতনতামূলক সভা করা হবে, পাশাপাশি ঐ বাজারেও গোপন অভিযানসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রতিনিধি/একেবি

