রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

প্লট কেনেননি উদ্যোক্তারা, অন্ধকারে মুন্সিগঞ্জের বৈদ্যুতিক শিল্পনগরী

শুভ ঘোষ, মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

প্লট কেনেননি উদ্যোক্তারা, অন্ধকারে মুন্সিগঞ্জের বৈদ্যুতিক শিল্পনগরী
ছবি: ঢাকা মেইল

মুন্সিগঞ্জের ইছামতি নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল বৈদ্যুতিক শিল্পনগরী। টঙ্গিবাড়ীর বেতকায় নির্মিত সেই নগরীতে প্লট কেনেননি উদ্যোক্তারা। তাদের এমন পিছুটান দেখে প্লটের দাম কমাতে চাইলেও তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিসিক প্রধান কার্যালয়ের একটি অসাধু সিন্ডিকেট। উল্টো মূল্যবৃদ্ধি করে দেওয়া হয় প্লটগুলোর। এতে মুখ ফিরিয়ে নেয় শিল্প উদ্যোক্তারা। ফলে সংশয় দেখা দেয় এই শিল্পনগরীর আলোর মুখ দেখা নিয়ে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিকে বৈদ্যুতিক শিল্পনগরীতে ৭ শতাংশের একটি প্লটের মূল্য ছিল ৫৬ লাখ টাকা। পরবর্তীতে আরও ৭ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। মূল্য দাঁড়ায় ৬৩ লাখ টাকায়। এতেই বিধিবাম। প্লট কেনা নিয়ে ‍উল্টো পথে হাঁটেন উদ্যোক্তারা। প্লট কেনার আগ্রহই যেন হারিয়ে ফেলেছেন তারা। 


বিজ্ঞাপন


besik3

মূলত ঢাকার নবাবপুর, ধোলাইখাল ও কামরাঙ্গীর চরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বৈদ্যুতিক পণ্য ও হালকা প্রকৌশল শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট জায়গায় স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয় এই শিল্পনগরী। প্রায় ৭ বছর আগে কাজ শুরু হওয়া শিল্পনগরী এখন কলকারখানা স্থাপনের জন্য শতভাগ প্রস্তুত। তবে কাজ সম্পন্ন হলেও এখানে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইছামতি নদীর গড়ে ওঠে এটি। ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ৫০ একর জায়গা নিয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয় ইলেকট্রনিক শিল্পনগরীর। বালু ভরাটের মাধ্যমে প্লটের সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর গত এক বছরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, মাইকিং, ব্যানার ও লিফলেট বিতরণ করেও বিক্রি হয়নি অধিকাংশ প্লট। ফলে শিগগিরই চালু হচ্ছে না এই নগরী।

besik2


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভারী যানচলাচলে প্রস্তুত করা হচ্ছে প্রশস্ত রাস্তা। আছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নির্মাণ করা হয়েছে কালভার্ট, প্রশাসনিক ভবন ও পুকুর। রয়েছে ডাম্পিং ইয়ার্ডও।

বাংলাদেশ ক্ষদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সূত্রে জানা যায়, এই শিল্পনগরীতে অন্তত ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। শিল্পনগরীটি গড়ে তুলতে ব্যয় হয়েছে ৩১৭ কোটি টাকা। এতে বিদ্যুতের ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার হাইভোল্টের সাবস্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি ৩৬১টি প্লট তৈরি করা হয়। একেকটি প্লট যথাক্রমে ৭, ১০ ও ১৪ শতাংশ আয়তনে। নির্মাণের পর এই শিল্পনগরীর প্লট বিক্রিতে প্রতি শতাংশের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা করে। এই হিসেবে ৭ শতাংশের একটি প্লটের মূল্য ছিল ৫৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

বিসিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগের মূল্যে হাতেগোনা কিছু প্লটের জন্য আবেদন জমা ছাড়া অবিক্রিত থেকে গেছে সব প্লটই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিকের মুন্সিগঞ্জ কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় শিল্প উদ্যোক্তরা প্লট কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

besik4

উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়াতে প্লটমূল্য কমাতে চেয়েছিল বিসিক। কিন্তু সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের একটি অসাধু সিন্ডিকেটের বাধায় কমানো যায়নি তা। বরং আগের মূল্য থেকে ৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিল্প উদ্যোক্তারা প্লট কেনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ সহজ হবে। ঢাকায় যেতে সময় লাগবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। শুধু সড়ক পথে নয়, সহজে যাওয়া যাবে নৌপথে। 

besik5

সম্প্রসারন কর্মকতা (প্রকল্প পরিচালক) মো. আবদুল জলিল তালুকদার জানান, ইলেকট্রনিক শিল্পনগরী কলকারখানা স্থাপনের জন্য শতভাগ প্রস্তুত। এই নগরীতে বৈদ্যুতিক সব ধরনের পণ্য ও গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। নতুন করে আবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্লট বিক্রি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে মুন্সিগঞ্জ বিসিকের উপ-পরিচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, ইতিমধ্যে ২০টির মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেছেন। উদ্যেক্তরা বলছে, প্লটের দাম বেশি। তাছাড়া শিল্পনগরী থেকে ঢাকায় যেতে মোল্লাবাজার ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হলে উদ্যোক্তরা প্লট এরিয়ায় এসে দেখে গেলে তাদের প্লট নেওয়ার আগ্রহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রতিনিধি/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর