সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিবর্ণ ইটভাটা এখন ড্রাগনে সবুজ

হাবিবুর রহমান, নড়াইল
প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৫৯ এএম

শেয়ার করুন:

বিবর্ণ ইটভাটা এখন ড্রাগনে সবুজ

তেইশ একর জমির একটি ইটভাটা, যার বিষাক্ত ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছিল আশপাশের এলাকার পরিবেশ। সেই ইটভাটাই এখন সবুজে সবুজে ছেয়ে গেছে। ৫৬ হাজার সবুজ ড্রাগন গাছের বিশাল এই বাগান এখন হয়ে উঠেছে মানুষের আশার আলো। একইসঙ্গে কোটি কোটি টাকা আয়ের উৎসও হয়ে উঠেছে।

কলেজশিক্ষক মরফুদুল হাসান পলাশ তার দুই ভাইয়ের সহায়তায় নবগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে তুলেছেন এ ড্রাগন বাগান। ২৩ একর জমিতে ১৩ হাজার ৬শ ৫০টি পিলারে শোভা পাচ্ছে ৫৬ হাজার সবুজ ড্রাগন গাছ। রয়েছে রেড ভেলভেট, আমেরিকান বিউটি, ইসরাইল ইয়োলো, ভিয়েতনাম রেড, ভিয়েতনাম হোয়াইট, পলোরা জাতের ড্রাগন গাছ।


বিজ্ঞাপন


 তেইশ একর জমির একটি ইটভাটা, যার বিষাক্ত ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছিল আশপাশের এলাকার পরিবেশ। সেই ইটভাটাই এখন সবুজে সবুজে ছেয়ে গেছে। ৫৬ হাজার সবুজ ড্রাগন গাছের বিশাল এই বাগান এখন হয়ে উঠেছে মানুষের আশার আলো। একইসঙ্গে কোটি কোটি টাকা আয়ের উৎসও হয়ে উঠেছে।

 thumbnail_IMG_20231028_203130

কিভাবে নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের ইটভাটা পরিণত হলো ‘মকছেদ মোল্লা অ্যান্ড মহুরন নেছা এগ্রো ড্রাগন গার্ডেনে’, তা তুলে ধরেন মরফুদুল হাসান পলাশ। তিনি বলেন, দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ২.৫ একর জমিতে ১৭শ পিলারে ৭ হাজার চারা দিয়ে ড্রাগন বাগানের চাষ শুরু করি। শুরুটা ভালো ছিল না। প্রতিবেশীরা বলতো, কি গাছ লাগাইছো? এগুলো দিয়ে কি হবে? অথচ এখন তারাই বলে, সুন্দর বাগান হয়েছে। পরে চলতি বছরের জানুয়ারিত নতুন উদ্যোমে আমরা ছয় ভাই ইটভাটা ভেঙে দিয়ে ২৩ একর জমিতে ড্রাগন বাগান করি। এখন আমাদের বাগানে কাজ করছেন ২০ জন শ্রমিক।


বিজ্ঞাপন


কলেজশিক্ষক মরফুদুল হাসান পলাশ তার দুই ভাইয়ের সহায়তায় নবগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে তুলেছেন এ ড্রাগন বাগান। ২৩ একর জমিতে ১৩ হাজার ৬শ ৫০টি পিলারে শোভা পাচ্ছে ৫৬ হাজার সবুজ ড্রাগন গাছ। রয়েছে রেড ভেলভেট, আমেরিকান বিউটি, ইসরাইল ইয়োলো, ভিয়েতনাম রেড, ভিয়েতনাম হোয়াইট, পলোরা জাতের ড্রাগন গাছ।

 thumbnail_IMG_20231028_203333

বছরে আড়াই কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য জানিয়ে মরফুদুল হাসান বলেন, শিক্ষক হিসেবে ইটভাটার কারণে পরিবেশের ক্ষতি হবে— এটা আমি মেনে নিতে পারি নাই। পরে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় গড়ে তুলি এই ড্রাগন বাগান। এ বছর ইতিমধ্যে ১৬ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছি। আগামীতে এটা কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করি। এলাকার অনেকেই এখান থেকে চারা নিয়ে ছোট ছোট বাগান করছে।

thumbnail_IMG_20231028_203343

এটিকে দেশের অন্যতম বড় বাগান দাবি করে তিনি বলেন, আমরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এ ফলের চাষ করি। কোনো ওষুধ বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। শুধুমাত্র বছরে ১-২ বার সার প্রয়োগ করতে হয়। মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ফল সংগ্রহ করা যায়। ফলের আকারভেদে প্রতি কেজি ১৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হয়।

জেলার সবচেয়ে বড় এই বাগান দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসেন উৎসাহীরা। সবুজে সবুজে ছাওয়া বিশাল এই বাগান থেকে ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধ হন তারা। অনেকই চারা কিনে নিচ্ছেন।

এই বাগানে কাজ করেন শ্রমিক সুমন মোল্যা। তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমি কাজ করি। এটা খুব বেশি পরিশ্রমের কাজ না। তবে সবসময় খেয়াল রাখতে হয় যেন পোকামাকড় বা রোগ বালাই গাছের কোনো ক্ষতি করতে না পারে।

thumbnail_IMG_20231028_203115

ড্রাগন বাগান নিয়ে কথা হয় কালিয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফিরোজ মাহামুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, পলাশ স্যারের বাগানের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। অল্প সময়ে বাগানে ফল আসা শুরু হয়। তাই ড্রাগন চাষ লাভজনক। নতুন কেউ এটা করতে চাইলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।

 নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, জেলায় ৩৬ একর জমিতে ছোট-বড় ১৩টি ড্রাগন বাগান রয়েছে। তবে পরিবেশের কথা ভেবে ইটভাটা ভেঙে কলেজশিক্ষক যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন তা প্রশংসার দাবিদার। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে, তেমনি পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও আর্থিকভাবে লাভবান এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে নড়াইল কৃষি বিভাগ সব রকমের সহযোগিতা করে আসছে, ভবিষ্যতেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর