সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ এর বিধি ২৫ অনুযায়ী অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এসব বিধি-বিধান মানেন না সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব সেলিম রেজা। তিনি সরকারি চাকরিতে বহাল থেকেও কাজীপুর উপজেলার তেকানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। পরিষদ চলাকালেও দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায় তাকে।
এছাড়া চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ পদ ও দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্প, ভাতা কার্ড, ট্যাক্স ও হাটবাজার থেকে উত্তোলন করা টাকা আত্নসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে সেলিম রেজার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে এমন অনিয়মের অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগও করেছেন আলী আশরাফ নামের এক ইউপি মেম্বার।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতার ভাতিজা হওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন সেলিম রেজা। তিনি তেকানী ইউনিয়নের দক্ষিণ বুরুঙ্গী গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২ জুলাই কাজীপুর উপজেলার তেকানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে আব্দুল বারী সভাপতি ও মঞ্জুরুল ইসলাম শিবন চাকলাদার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর ওই বছরের ৭ নভেম্বর সেলিম রেজাকে সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান সিরাজী পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সেলিম রেজা ২০১১ সালে কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম সচিব হিসেবে যোগদান করেন। পরে ২০১৫ সাল থেকে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদে সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আলী আশরাফ অভিযোগ করে বলেন, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ এর রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ অংশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, একজন সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না। অথচ সেলিম রেজা পরিষদের সচিব হয়েও দলীয় পদে রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে তেকানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারী বলেন, সেলিম রেজা সরকারি চাকরি নিয়েছেন কমিটি হওয়ার অনেক আগেই। উপজেলা আওয়ামী লীগ তাকে এ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান (মজনু) বলেন, আমি স্ট্রোক করেছিলাম। এজন্য প্রয়োজন ছাড়া পরিষদে যাওয়া হয় না। তবে সচিবের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে দেখা হোক।
এ বিষয়ে নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সেলিম রেজা বলেন, কাজীপুরের তেকানী ইউনিয়নে আমার গ্রামের বাড়ি। তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে আমার নাম কেন, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।
জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, দলীয় পদে থেকে সরকারি চাকরি করার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় কেউ দলীয় কোনো পদে থাকতে পারবেন না।
সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপসচিব) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এইচই