সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পাহাড়ে মাল্টা চাষে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা, বাড়ছে বাগান

নীরব চৌধুরী বিটন, খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৩৭ এএম

শেয়ার করুন:

পাহাড়ে মাল্টা চাষে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা, বাড়ছে বাগান

ফলের রাজ্য বলা হয় পাহাড়ের জেলা খাগড়াছড়িকে। এখানকার উৎপাদিত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুস্বাধু মাল্টার কদর সারাদেশে রয়েছে। পাহাড়ে মাল্টা চাষে লাভের মুখ দেখছেন এখানকার চাষিরা। ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে জেলার শতশত মাল্টা চাষির। দাম ভালো পাওয়ায় খাগড়াছড়িতে প্রতি বছর বাগান বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ে বেড়ে ওঠা গাছের ডালপালা জুড়ে পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে মাল্টা। গাছের প্রতিটি ডাল মাল্টার ভারে নুয়ে পড়ছে। পাহাড়ি হাঁট-বাজারে এখন মাল্টা আর মাল্টা। পাহাড়ি জনপথে বাণিজ্যকভাবে বারি মাল্টা-১ জাতের বাগান করে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। স্থানীয় বাজারে কেজি ৯০ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পুষ্টিকর রসালো মাল্টা ব্যবসায়িদের হাত ঘুরে খাগড়াছড়ির মাল্টা যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।


বিজ্ঞাপন


শহরের পানখায়াপাড়া এলাকার মংচিং মারমার মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ে ছোট-বড় গাছে সবুজ পাতার পাশে পরিপক্ক ফল ঝুলছে। বাগানে বাগানে চলছে ফল সংগ্রহ। বাগানে মাল্টা বাচায় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাতে ঝুড়ি ভর্তি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। মাল্টায় পুষ্টিগুণে ভরপুর তাই ক্রেতারা ভিড় করছে বাগানে ও স্থানীয় দোকানে।

thumbnail_Khagrachari_Hill_Other_Photo_-_01

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২২ অর্থ বছরে জমির পরিমাণ ৫২৫ হেক্টর ও উৎপাদন হয়েছে ৩৩৯৮ মে.টন। গত বছরের তুলনায় এ বছল ভালো ফলন হবে বলে জানায় কৃষি কর্মকর্তারা।

পানখায়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মংচিং মারমা পেশায় শিক্ষক। তার পাশাপাশি মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। চাষি মংচিং মারমা বলেন, এক কানি জায়গাতে আমি একান্নটি বারি-১ জাতের গাছ লাগিয়েঠি। ইতোমধ্যে আমি লাখ টাকার ফলন বিক্রি করেছি এবং গাছে আরো যে পরিমাণ ফলন আছে তাতে ২ লাখ টাকা পাব।


বিজ্ঞাপন


সদরে বড়পাড়া এলাকার মাল্টা চাষি অংগ্র মারমা বলেন, খাগড়াছড়ির মাল্টা রসালো সুস্বাধু। ফল বিক্রি নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। সারাদেশে মাল্টার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাজারে মাল্টা ৯০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। পাইকারি ৯০ টাকায় দিচ্ছি। মাল্টা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। তাই এখানে মাল্টা চাষ জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

thumbnail_Khagrachari_Hill_Other_Photo_-_03

ভাইবোনছড়া এলাকার মাল্টা চাষি মংক্যাচিং চৌধুরী বলেন, আমার দুই একর টিলায় তিনশটি গাছ রয়েছে। সব কয়টি গাছে ভালো ফলন এসেছে। একটি গাছ চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত শ্রমিক পরিপক্ক মাল্টা সংগ্রহ করার কাজ করে। তিনশটি গাছের ফলন বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা পাব।

খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইপাড়া এলাকার মাল্টা চাষি মানু মারমা বলেন, আমার একশটা গাছে ফলন ভালো হয়েছে। এক একটি গাছে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি ফলন পাই। প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি করি। অনেকে ঘুরতে এসে যাওয়ার সময় কিনে নিয়ে যায়। এভাবে বাগান থেকেই ফল বিক্রি হয়ে যায়। অর্ডার হলে খাগড়াছড়ির বাহিরে পাঠাই। এই বাগানের ফল বিক্রি করে ছেলে-মেয়ের পড়াশুনা ও সংসার চলে। সামনে বছর বাগান বড় করার চিন্তা আছে। বলা যায় মাল্টা চাষ করে সফল হয়ছি।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মাল্টার পরিপূর্ণভাবে বাজার জাতকরণের উপযুক্ত সময় অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়। বাগানে প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার যথা সময়ে ব্যবহার করতে হবে। বিষয়টি লক্ষ্য রাখলেই মাল্টার চাষ করে লাভজনক ভাবে সাবলম্বী হওয়া সম্ভব।

খাগড়াছড়ি খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী হর্টিকালচার অফিসার সুজন চাকমা বলেন, খাগড়াছড়ির মাল্টা জনপ্রিয় একটি ফসল। বারি-১ মাল্টা খাগড়াছড়িতে বেশি চাষ হয়। সারাদেশে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পার্বত্য অঞ্চলে কয়েকশ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। প্রচুর বাগান বাড়ছে এবং ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হর্টিকালচারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন প্রকল্পরের আওতায় বারি-১ মাল্টা কৃষকদের মাঝে চারা বিতরণ অবাহত আছে।

thumbnail_Khagrachari_Hill_Other_Photo_-_15

পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, আমাদের বারি-মাল্টা-১ কৃষি গবেষণা কর্তৃক উদ্ভবিত। সারাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং সেই কারণে প্রতি বছর প্রচুর বাগান বাড়ছে। প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন হয়ে সারাদেশ চলে যাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের মাল্টা। পার্বত্য অঞ্চলের কৃষক ভাইদের অর্থনৈতিক সচলতা আনার জন্য ব্যাপকভাবে অবদান রেখে যাচ্ছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, মাল্টা চাষের জন্য কৃষকদের যে ধরনের পরামর্শ প্রয়োজন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে দিয়ে থাকি। খাগড়াছড়ি জেলাতে ৬টি হর্টিকালচার সেন্টার রয়েছে সেখান থেকে আমরা পরির্যাপ্ত পরিমাণ চারা কমল উৎপাদন করে কৃষকদের সরবারহ দিচ্ছি।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুক্তা চাকমা বলেন, সদর উপজেলা এলাকায় ৬১ হেক্টর জুড়ে মাল্টা চাষ হচ্ছে। গত অর্থ বছরের তুলনায় এই বছর মাল্টা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার কারণ হচ্ছে বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লেবু জাতীয় ফসল সম্প্রসারণ ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ৫ শতক থেকে শুরু করে ৫০ শতক পর্যন্ত আমরা কৃষকদেরকে চারা ও ব্রিজ সঙ্গে স্প্রে মেশিন দিয়ে থাকি। সেই জন্য কৃষকরা মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রতি প্রদর্শনীর জন্য ব্যাচে করে আমরা ৩০ জন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রতি অর্থ বছরে আমরা চারটি ব্যাচ করি। তাছাড়া টেকনিক্যালি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আছেন এবং উপ-সহকারি কৃষি মাঠ কর্মকর্তাগণ আছেন, তারা কৃষকদেরকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকেন।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর