শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ছিন্নমূল মানুষের পাশে বরিশালের 'সেবক ফাউন্ডেশন'

শাওন খান
প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৩৭ এএম

শেয়ার করুন:

ছিন্নমূল মানুষের পাশে বরিশালের 'সেবক ফাউন্ডেশন'
ছবি : ঢাকা মেইল

‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’—কথাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে সেবক ফাউন্ডেশন। হাসিমাখা মুখ নিয়ে তারা খাবার তুলে দেন রোজা রাখা পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত মানুষের হাতে। খাবার হাতে পেয়ে তৃপ্তির হাসি দেখা যায় মানুষগুলোর মুখে। প্রতিদিন এমন করেই সুবিধাবঞ্চিত পথচারী, রিকশাচালক, ইজিবাইক চালক, এতিম, নারী-শিশু, অসহায় রোজাদারদের মুখে ইফতার তুলে দিচ্ছে ‘সেবক ফাউন্ডেশন’ নামের একটি মানবিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বিনামূল্যে ইফতার পেয়ে খুশি তারা। প্রতিদিন বরিশাল নগরীর শতাধিক ছিন্নমূল মানুষ এ ইফতার করতে পারছে।  

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ইফতারের আগে সেবক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মফিজুল ইসলাম মিলনের সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


২০২০ সালে ২৫ মার্চ করোনার প্রথম লকডাউনে ব্রাদার্স টূ্র অ্যান্ড ট্রাভেলসের অর্থায়নে অসহায় দরিদ্র মানুষদের মাঝে এক মাসের খাদ্য সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছর রমজান মাসে দরিদ্র বয়স্ক রিকশাচালকদের খুঁজে খুঁজে বের করে এক মাসের  ইফতার সামগ্রী দেওয়া হয়। ঈদের সময় ওই সকল মানুষসহ আরও কিছু অসহায় দরিদ্র মানুষদের ঈদ উপহার দেয় তারা।

এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার তারা ‘সেবক ফাউন্ডেশন’ গঠন করে। সংগঠনটির স্লোগান হলো—'আমরা যুবক, আমরা সেবক, প্রয়োজনে সবার পাশে'।

barishal

২০২১ সালের ১৭ জুলাই অমিক্রনের সময় নগরীর পুলিশ লাইন মেইন রোড়ের পাশে ফুটপাতে একটি স্থানের নাম দেওয়া হয়—'মেহমান খানা'। প্রতি শুক্রবার মেহমানখানা থেকে রাত ৯ টার সময় ৩ শতাধিক অসহায় দরিদ্র মানুষদের জন্য একবেলা পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন বরিশাল শহরে আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ানো মানসিক ভারসম্যহীন মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করে এ সংগঠনটি। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এ সংগঠন। এছাড়া শীতকালে সেই সকল ভবঘুরে মানুষসহ শহরের রাস্তাঘাটে ঘরহীন মানুষকে শীতবস্ত্র দেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


বর্তমানে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ও ২৫ জন শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে চলছে সেবক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম।

মো. মফিজুল ইসলাম মিলন বলেন, ক্ষুধার্ত মানুষকে সপ্তাহে একদিন পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন, অসহায় দরিদ্র মানুষের শীতবস্ত্র বিতরণ, রমজানে ইফতার ও ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ, মানসিক ভারসাম্যহীন (ভবঘুরে) ও ছিন্নমূল মানুষদের খাবার, পোশাক এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে জীবন মান উন্নয়ন করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। 

সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবক ইমন বলেন, করোনা মহামারির শুরু থেকে শিশু ও ভাসমান মানুষের জন্য ‘মেহমান খানা’ প্রজেক্ট চালু হয়। সেই থেকে প্রতিদিন শতাধিক মানুষের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিয়েছি। আত্মিক সম্পর্ক হয়েছে ভাসমান মানুষের সঙ্গে। সব সময় চিন্তা করি তাদের জন্য কি করা যায়। তেমনি চিন্তা থেকে এখন হাতে নেয়া হয়েছে ‘মাসব্যপী ইফতার বিতরণ’প্রজেক্ট।

barishal

সেবক ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘আমরা সামাজিক জীব, তাই মানুষ হিসেবে আমাদের একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। সে দায়বদ্ধতা থেকে প্রতিবারের মতো এবারও ইফতার বিতরণ চলছে। সবার সহযোগিতা পেলে সামনে আরও ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো।

ইফতার নিতে আসা নগরীর ভাটার খাল কলোনির বাসিন্দা হাফিজা বলেন, 'রমজান মাসের উছিলায় এখানে ইফতারিতে প্রতিদিন ভালো খাবার দেয়। তাই মেয়ে নিয়ে আসছি। তারা ঈদের আগে মেয়েকে জামা কাপড়ও দেবে বলছে।’

সেবক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মিলন বলেন, পুরো রমজান মাস জুড়ে যে ইফতারি দেয়া হচ্ছে, তাতে থাকছে—খেজুর, পানি, ছোলাবুট, কখনো খিচুড়ি কখনো তেহেরি ও মৌসুমী ফল, যখন যা সম্ভব হয়।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া ভবিষ্যত যদি আমরা সেই রকম মানবিক মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা পাই, তা হলে কিছু দরিদ্র ও প্রতিবন্ধি মানুষ যারা কাজ করে খেতে চায়, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবো।

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, সংগঠনটি করোনাকালীন সময় থেকে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ও সেবামূলক কাজ করেছে। এটি নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয় কাজ। মানবসেবায় যে সকল সংগঠন কাজ করে এবং করবে, জেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে। 

এমন মানবিক কর্মকান্ডে সমাজের সকল বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর