সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কালিগঙ্গা নদীতে নৌকাবাইচ, লাখো জনতার ভিড়

শামীম হোসেন সামন
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

কালিগঙ্গা নদীতে নৌকাবাইচ, লাখো জনতার ভিড়

গ্রাম বাংলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে পুরো বিকেলজুড়ে ঢাকার নবাবগঞ্জ  উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের পাতিলঝাপ কালিগঙ্গা নদীতে ‘হেঁইয়ো হেঁইয়ো ধ্বনি’ টান টান উত্তেজনা বিরাজ করে। নৌকাবাইচ দেখতে নদীর দু’পারে কয়েক লাখ জনতা ভিড় জমায়।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) উপজেলার পাতিলঝাপ ও দত্তখন্ড গ্রামবাসীর উদ্যেগে এ নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়।


বিজ্ঞাপন


এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক কমিটির সভাপতি দেওয়ান তুহিনূর রহমান দুটি করে নৌকার টান হয়। প্রতিটি নৌকা সমান গতিতে টেনে আসে। এতো কমপিটিশনের বাইচ ইতিপূর্বে খুব কমই হয়েছে। নৌকাবাইচে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নবাবগঞ্জের সেনার বাংলা এবং সিংগাইরের বলধরার প্রবাসী রানারআপ হয়েছে। পরে চ্যাম্পিয়ন দলকে মোটরসাইকেল এবং রানারআপ দলকে ফ্রিজ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

নৌকাবাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা  বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় আগে নৌকাবাইচ হতো। কিন্তু এখন নানা কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। আয়োজকদের নৌকাবাইচ আয়োজনে উদ্বুদ্ধ করি। তিনি বলেন, বাইচ আয়োজন এখন অনেক ব্যয়বহুল। সরকারের পক্ষ থেকে ফুটবল, ক্রিকেট খেলার আয়োজন করলেও নৌকাবাইচ আয়োজন করা হয় না। এমনকি কোনো সহযোগিতাও করে না। তবে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এখনো নৌকাবাইচ আয়োজন করা হচ্ছে। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করছি প্রতিটি জেলা উপজেলায় একটি করে নৌকাবাইচ আয়োজনের। 

সাধারণত বর্ষা মৌসুম অনেক পানি থাকে কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে  নদীতে পর্যাপ্ত পানি নেই। নানা কারণে বিলুপ্তির পথে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। আবহমান গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। তবে গ্রামবাসীর উদ্যোগে এখনো হচ্ছে সুস্থ বিনোদনের এই উৎসব। এক সময় বর্ষায় নৌকাবাইচ ছিল দেশের প্রধান উৎসব। প্রতি বছর বর্ষাকালে ভরা ভাদ্রে এ উৎসব পালিত হয়।

থৈ থৈ পানি, মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছন্দ আর লাখো দর্শনার্থীর হৈ হৈ রব, কাঁশি-বাঁশি আর ঝাঁজরের সুর, ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ আর দর্শনার্থীর করতালিতে মুখোরিত হয়ে ওঠে চান্দহর ধলেশ্বরী নদীর দুই তীর। পানি ছিটিয়ে ও বাশি বাজিয়ে নৌকার দলনেতা সতীর্থদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ও উৎসাহ জোগান।


বিজ্ঞাপন


বাংলা ও বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির প্রাচীনতম এ উৎসব উপভোগ করতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলেই মেতে ওঠে আনন্দে-উল্লাসে। নদীর পাড়ে বসে গ্রাম্যমেলা।

আল্লায় বলিয়া নাও খোলরে ভাই সক্কলি। আল্লাহ বলিয়া খোলো। ওরে আল্লা বল নাও খোল শয়তান যাবে দূরে। ওরে যে কলমা পইড়া দেছে মোহাম্মদ রাসূলরে ভাই সক্কল’ এই সারি গানের তালের ঝোঁকে ঝোঁকে বৈঠা টানের মধ্যদিয়ে শনিবার পয়েন্টে গ্রাম বাংলার শত বছরের ঐতিহ্যের নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।

নৌকার দলনেতা ঝাঁজ ও কাঁশি বাজিয়ে সতীর্থদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ও উৎসাহ জোগান। বাংলা ও বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির প্রাচীনতম এ উৎসব উপভোগ করতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধসহ নির্বিশেষে সকলেই মেতে ওঠে আনন্দে-উল্লাসে। নৌকা বাইচে ঢাকা,  মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭টি ঘাসী  নৌকা অংশগ্রহণ করে।

ঢাকা থেকে আসা ৮০ বছরের  এক বৃদ্ধ বলেন, অনেক বছর পর এই নৌকাবাইচ দেখতে আসলাম। ঐতিহ্যবাহী এই নৌকাবাইচ দেখে অনেক ভালো লাগলো। তবে প্রতি বছরই যদি এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো তাহলে অনেক ভালো হতো। কারণ বর্তমান সময়ে এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা হারিয়ে যাচ্ছে। তার মতো আরও অনেকে দর্শনার্থী নদীর দুই কূলজুড়ে নৌকাবাইচ দেখতে লাখো দর্শনার্থী উপস্থিত হয়। ঢাকাসহ আশপাশের মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীরা তাদের পরিবার নিয়ে এ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে উপস্থিত হন। এ সময় নদী পাড়ে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা গেছে।

নৌকাবাইচ উপলক্ষে নদীর দুই তীরে লাখো দর্শনার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলা। স্থানীয়রা বলছেন, নৌকাবাইচ উপলক্ষে তাদের বাড়িতে এসেছিল অনেক নতুন অতিথি। বাড়িতে বাড়িতে আয়োজন করা হয় নানা মুখরোচক খাবারের। এমন আয়োজনে খুশি তারা।

পাতিলঝাপ কালিগঙ্গা নদীতে ৭টি ঘাসী নৌকা অংশগ্রহণ করে। নৌকাগুলো হলো- বলধরার ঐতিহ্য (সিংগাইর), বলধরার প্রবাসী (সিংগাইর), একতা এক্সপ্রেস (সিংগাইর), সোনার বাংলা (নবাবগঞ্জ), নয়ন মনি (সিংগাইর), সবুজ বাংলা (মানিকগঞ্জ ) ও জনতা এক্সপ্রেস (মানিকগঞ্জ)।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর