জামালপুরের সুলতান নগর গ্রামের সালমা সুলতানা। আপন মনে তিনটি খামারে পাখির যত্নে করেই পার করেন প্রতিটি দিন। কারণ এই পাখিই খুলে দিয়েছে তার কপাল। পাখি পালন করে এখন তার মাসিক আয় হয় লাখ টাকা।
জানা যায়, ২০১৪ সালে প্রবাসী স্বামীর দেওয়া হাত খরচের টাকা দিয়ে শখের বসে ৩ জোড়া কবুতর পালন শুরু করেন তিনি। ৯ বছরের ব্যবধানে এখন তার খামারে রয়েছে ৮০ প্রজাতির দুই হাজার জোড়া পাখি ও প্রায় ১ হাজার জোড়া বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর। যার বাজার মূল্য ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। এসব পাখি বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী তার পরিবার। তবে এই গল্পের শুরুটা ছিল বেশ কঠিন।
বিজ্ঞাপন

পরিবার সূত্রে জানা যায়, সালমা সুলতানার স্বামী নোমান রেজা সুলতানী ২০১২ সালে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে কর্মের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইরাকে। সেখানে সুবিধা করতে না পারায় ২০১৬ সালে দেশে ফিরে আসেন। সংসারে দেখা দেয় টানাপোড়ন। পরে স্ত্রীর সেই শখের পাখির খামারকে আস্তে আস্তে বড় করতে থাকেন সালমা নোমান দম্পতি। ধীরে ধীরে পাখির সংখ্যাও বাড়তে থাকে। পাশিপাশি চলতে থাকে পাখি বিক্রি। এভাবে পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এ দম্পতির। বর্তমানে এই খামার থেকেই মাসে লাখ টাকা করেন তারা। খামারের আয় দিয়ে সংসার চলে তাদের।

সালমা সুলতানার সংগ্রহে রয়েছে কবুতর, ময়না, টিয়া, বাজরিগার, লাভ বার্ড, ক্রোকাটেল, সান কুনুর, জায়েন কুনুর, রেড ফেক্টর কুনুরসহ আরও অসংখ্য প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে জায়েন হুমার জাতের কবুতর বিক্রি হয় ৮০ হাজার টাকা জোড়ায় আর জায়েন কুনুর জাতের পাখির দাম এক লাখ টাকা জোড়া।
বিজ্ঞাপন
এসব পাখি ও কবুতর নিয়মিত ডিম ও বাচ্চা দিচ্ছে। স্থানীয় পাইকার ছাড়াও ‘সুলতানি বার্ডস অ্যান্ড পিজন লফ্ট’ নামে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে। বেশিরভাগ পাখি অনলাইনে বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা এবং দর্শনার্থীরা আসেন বাড়িতে। অনেকে দেখতে এসে শখের বসে কিনে নিয়ে যান পাখি। আর এখন এই পাখির খামার থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে প্রায় লাখ টাকা আয় হয়। এলাকাবাসী সালমা সুলতানাকে পাখি মা হিসেবে চিনে। তার সফলতা দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী পাখি পালন শুরু করেছে।

সালমা সুলতানার স্বামী সুলতান রেজা লোমানী তারা বলেন, ২০১২ সালে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে কর্মের সন্ধানে ইরাকে গিয়েছেলাম। কিন্তু সেখানে সুবিধা করতে না পারায় ২০১৬ সালে দেশে ফিরে আসি। আমি বিদেশে থাকলেই আমার স্ত্রী শখের বসে কয়েক জোড়া পাখি আর কবুতব পালান শুরু করে। পরে আমি তাকে সর্মথন দিলে সে আরও বড় আকাশে পাখি পালন শুরু করে। আমি দেশে আসার পরে তেমনভাবে কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না। পরে স্ত্রীর পরামর্শে এই পাখির খামারেই সময় দিতে থাকি। এরপর আস্তে আস্তে এই খামার থেকেই সফলতা আসে। বর্তমানে খামারে ১ হাজার জোড়া কবুতর আর ২ হাজার জোড়া পাখি রয়েছে।

সালমা সুলতানা জানান, অনেক মানুষ অনেকে অনেক কথা বলছে। আমি এই হাসি তামাশা উপেক্ষা করে ব্যবসা করে যাচ্ছি। আগে ছিল একটা খামার। এখন একটা খামার থেকে তিনটা খামার হয়েছে। মাসে আমার ৫০-৬০ হাজার টাকার খাবার লাগে। এক দেড় লাখ টাকার মতো আমি বিক্রি করতে পারি। পাখি বিক্রি করা থেকে আমি আমার পুরা সংসার চালায়।
বর্তমানে খামারে যে পাখি ও কবুতর রয়েছে তার বাজার মূল্য ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। এসব পাখি বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী তার পরিবার। মানুষ যতই হাসি তামশা করুক নিজের লক্ষে অটুক থাকলে সেই লক্ষ পূরণ করে সফল হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন সালমা সুলাতানা।
প্রতিনিধি/এসএস

